বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার পর্যটনস্পট বারিক্যা টিলার (বড়গোপ টিলা) বনায়ন প্রকল্পের বৃক্ষ কর্তন করে পাথর বিক্রির প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন এলাকাবাসী। নির্বিচারে বৃক্ষ কর্তন করে পাহাড় কেটে পাথর উত্তোলনের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়ে পর্যটন স্পট বারিক্যা টিলা রক্ষার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এদিকে একই দাবিতে চানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বারিক্যাটিলার প্রকৃতি বিধ্বংসকারীদের বিচার দাবি করেছে। পাশাপাশি প্রকৃতি রক্ষায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান প্রতিবাদ করায় তাকে মারধর করে উল্টো মামলা দেওয়ায় নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার দুপুরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
উল্লেখ্য বারিক্যাটিলার প্রকৃতি ধ্বংস ও বনবিভাগের বনায়ন প্রকল্পের বৃক্ষ কেটে পাচার ও পাহার কেটে পাথর উত্তোলন করায় এখন টিলাটি হুমকির মুখে পড়েছে। এ ঘটনায় বন ও পাহাড় খেকোদের বিরুদ্ধে গত ১৬ সেপ্টেম্বর থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। বনবিভাগও বনরাক্ষসদের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা করেছে। এদিকে স্থানীয় ভূমি অফিসও বন ও পাহাড় কেটে পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংস করায় দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে আবেদন করেছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা মো. সেলিম মিয়া প্রেরিত আবেদনে বড়গোপ গ্রামের নূরুল ইসলাম, আব্দুল জলিল, বিল্লাল মিয়া, জাহিদ হাসান, সোলেমান, মো. হানিফা, মো. শফিকুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, মুছা মিয়া, আলমগীর, রাশিদ মিয়া, তোফাজ্জ্বল, নিজাম উদ্দিন ও আদম আলী নামক ব্যক্তিরা বনায়ন প্রকল্পের বন কেটে পাথর উত্তোলন করায় এলাকার প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংসসহ পর্যটন এলাকার সৌন্দর্য্য বিনষ্ট করছে বলে তিনি লিখিত আবেদনে উল্লেখ করেন।
শুক্রবার মাহরাম গ্রামের সড়কে কয়েক হাজার মানুষ মানববন্ধন করে বারিক্যাটিলার বনখেকো পাথর উত্তোলনকারী সিন্ডিকেটের বিচার দাবি করে পাহাড় রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে। তারা ‘বনজ সম্পদ রক্ষা করো/অপরাধীদের বিচার কর’, ‘বনসম্পদ ধ্বংসকারীদের বিচার চাই’, ‘বনায়নের সৌন্দর্য্য বিনষ্টকারীদের বিচার চাই’সহ নানা স্লোগান লেখা ফেস্টুন নিয়ে মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে অংশ নেন এলাকার নারী, পুরুষরা। মানববন্ধনে হাজারো নারী পুরুষ অংশ নেন।
এদিকে একই সময়ে চানপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠেও একই দাবিতে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। তারা পর্যটন এলাকা বারিক্যাটিলার প্রকৃতি ধ্বংসকারীদের কর্মকা-ের প্রতিবাদকারী তাদের প্রধান শিক্ষক ও বনায়ন প্রকল্পের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের উপর হামলা ও পরবর্তীতে মামলার ঘটনায় দোষীদের বিচার দাবি করে মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন।
মাহরাম গ্রামের সড়কে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন পরবর্তী সমাবেশে বক্তব্য দেন ইউপি সদস্য নোয়াজ উদ্দিন, ডা. নূরুল ইসলাম, আব্দুস সালাম, দীন ইসলাম প্রমুখ। পরবর্তীতে চানপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য দেন স্কুল প্রতিষ্টাতা সদস্য আবু বকর সিদ্দিক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য খলিলুল ইসলাম, অবিভাবক নাজমুল শিকদার, শিক্ষক এ এস এম মোস্তফা কামাল, নাজিম উদ্দিন প্রমুখ।
বক্তারা অবিলম্বে পর্যটন এলাকা বারিক্যা টিলার বনায়ন প্রকল্পের বনজ সম্পদ বিনষ্টকারীদের বিচার দাবি করে বারিক্যাটিলার সৌন্দর্য্য রক্ষার দাবি জানিয়ে বলেন, জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের কোন রকম অনুমতি ছাড়াই স্থানীয়্ একটি প্রভাবশালী চক্র সরকারি খাঁস খতিয়ান ভুক্ত বারিক্যাটিলার প্রায় ৫ একর ভুমি যেখানে সামাজিক বনায়ন প্রকল্পর সৃজনকৃত মুল্যবান শতাধিক গাছ রয়েছে সেই ভুমি দখলে নিতে সম্প্রতি চক্রটি বেশ কিছু গাছ কেঁটে ফেলে বনভুমি উজার করে এবং লাখ লাখ টাকার পাথর লুটে নিয়ে যায়।’
এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে বারেকটিলা সামাজিক বনায়ন প্রকল্প’র সাধারন সম্পাদক ও চাঁনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমানের ওপর দৃবৃক্তরা হামলা করে আহত করে।’ হামলা থেকে শিক্ষককে রক্ষা করতে গেলে দৃবৃক্তরা এলাকার নিরীহ বেশ কয়েকজনকে ফের রক্তার্থ জখম করে।
ওই ঘটনায় প্রধান শিক্ষকের পক্ষ থেকে ৮ জনকে অভিযুক্ত করে ১৫ সেপ্টেম্বর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। বক্তারা অবিলম্বে প্রধান শিক্ষকের উপর দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার ও বনরাক্ষসদের বিচারের দাবি জানান।