অনলাইন ডেস্ক::
ক্রমাগত বাড়তে থাকা রানের চাপে অনিয়মিত বোলার মাহমুদ উল্লাহকে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে মারতে যান পাকিস্তান ওপেনার। ওত পেতে থাকা লিটন আবারও সাফল্যের সঙ্গে স্টাম্পিং করে যেন ক্যাচ ফেলার দণ্ড মওকুফ করে নেন পুরোটা!
১৬৭ রানে সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ইমাম যাওয়ার পরে বাংলাদেশের জয় নিয়ে অনিশ্চয়তার আর কোনো অবকাশই ছিল না। বাকি ছিল শুধু ব্যবধান কত হয়, তা জানার। ৩৭ রানের জয়ে আগামীকাল দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে নিজেদের নাম লিখে নিল বাংলাদেশ। এই নিয়ে সবশেষ চার এশিয়া কাপের তিনটিরই ফাইনালে তারা। আগের দুইবারই হারে ফাইনাল ভাগ্য লেখা হলেও এবার সেটি বদলানোর মিশন নিয়েও নামবে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল।
অবশ্য এই ম্যাচেও টস জিতে ব্যাটিংয়ে তাঁর দলের যথারীতি ভয়ংকর শুরু কিন্তু এবার আর এর ভিত্তিতে আরো বড় বিপর্যয়ের শঙ্কা জাঁকিয়ে বসল না। বসল না এ জন্যই যে এই এশিয়া কাপের বাংলাদেশের আসল ব্যাটিংটা যে শুরু হচ্ছে তিন উইকেট পড়ার পর থেকেই!
পাকিস্তানের বিপক্ষে অঘোষিত সেমিফাইনালেও হলো তাই। ১২ রানেই নেই ৩ উইকেট। সেখান থেকেই মাত্র ১ রানের জন্য নিজের সপ্তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি বঞ্চনায় পোড়া মুশফিকুর রহিম (৯৯) আর মোহাম্মদ মিঠুনের (৬০) ১৪৪ রানের চতুর্থ উইকেট জুটিতে শুরু হওয়া খেলা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে প্রত্যাশিত পুঁজি হয়তো দেয়নি। তবে যা দিয়েছে তা-ও নিতান্ত কম নয়।
কারণ ২৪০ রান তাড়া করতে নামা পাকিস্তানের অবস্থাও এই আসরের বাংলাদেশের কাছাকাছিই। শুরুতেই বেশ কিছু উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করবেন শোয়েব মালিক। তিনি কিছুটা পারবেন, কিন্তু পুরোটা নয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হলো না। ১৮ রানে ৩ উইকেট খুইয়ে বসার পর ওপেনার ইমাম-উল হককে নিয়ে উদ্ধারকাজে আবারও নামতে হলো মালিককে।
কিন্তু মুশফিক-মিঠুনের জুটি যত বড় হলো, এটি ঠিক ততটা নয়। না হওয়ার কারণ বোলার রুবেল হোসেন যতটা, তার চেয়ে কোনো অংশে কম নন মাশরাফি বিন মর্তুজাও। শর্ট মিড উইকেটে মালিকের (৩০) ক্যাচ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক রীতিমতো শূন্যে ঝাঁপ দিলেন। ঝাঁপ দিয়ে এক হাতে ক্যাচ নিয়েই আবার দাঁড়িয়েও গেলেন। তাঁর অভিব্যক্তি নির্বাক হলেও জয়োৎসবের আগাম ছবি উঁকিঝুঁকি দিতে শুরু করেছিল ওই সময় থেকেই।
মালিক গেলেও থেকে যাওয়া ইমাম তবু সেই ছবিটা মিলিয়ে দেওয়ার প্রাণপণ চেষ্টায় সঙ্গে পেয়েছিলেন আসিফকে। তবে শেষে এসে ওই দুজনের জুটি ভেঙে পাকিস্তানের ফাইনাল স্বপ্ন বিসর্জনে পাঠানোর ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখা মিরাজ ছিলেন শুরুতেও। প্রথম ওভারেই তুলে নিয়েছিলেন প্রতিপক্ষের ওপেনার ফখর জামানকে। নতুন বলে বোলিং ওপেন করা এই অফস্পিনার ২৮ রানে ২ উইকেট নিয়ে অটুট রেখেছেন কিছুদিন ধরে তাঁর বোলিং সুনামের ধারাবাহিকতাও। সাকিব না থাকায় পুরো ১০ ওভারই করার সুযোগ পাওয়া মাহমুদ উল্লাহও ৩৮ রান খরচায় তুলে নিয়েছেন বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে মূল্যবান হয়ে ওঠা ইমাম-উল হকের উইকেট।
ও হ্যাঁ, এটি তো এখনো বলাই হলো না যে আফগানিস্তান ম্যাচে কোনোমতে বোলিং করেও দলকে জেতানো মুস্তাফিজ কাল দেখা দিলেন তাঁর সত্যিকারের চেহারায়। মিরাজের সঙ্গে নতুন বলে শুরু করে নিজের প্রথম দুই ওভারে বাবর আজম ও পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদকে পর পর তুলে নিয়ে প্রতিপক্ষের টুঁটি চেপে ধরেন। সেখান থেকে নানা চড়াই-উতরাইয়ের পর পাকিস্তানের লেজ ছেঁটে দিতে গিয়ে নিয়েছেন আরো দুটো। সব মিলিয়ে দুটো মেডেনসহ ৪৩ রানে ৪ শিকার ‘কাটার মাস্টার’-এর।
লিটন তাঁর বলে দু-দুটো ক্যাচ না ফেললে উইকেটের ঘরে ‘৫’-ও বসত নিশ্চিতভাবেই। সেটি না বসলেও মুস্তাফিজের কোনো আক্ষেপ থাকার কথা নয়। ১ রানের জন্য সেঞ্চুরি না পাওয়ার হতাশাও থাকার কথা নয় মুশফিকুর রহিমের। ক্যাচ ফেলার অপরাধবোধেও ভোগার কথা নয় লিটনের। শেষ পর্যন্ত প্রায়শ্চিত্ত তো করেছেন। সব মিলিয়েই ফুটেছে জয়ের ফুল, যা ফোটানোয় অবদান নিয়মিত কিংবা অনিয়মিত বোলার সবার।