জগন্নাথপুর প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের রথযাত্রা উৎসবে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। দিনভর চাপা উত্তেজনার পর বুধবার বিকেলে দু’পক্ষের সংঘর্ষে জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুরসালিনসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় উত্তেজনা বিরাজ করায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে রথযাত্রা উৎসবকে কেন্দ্র করে জগন্নাথপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে দু’গ্রুপের সৃষ্টি হয়। কয়েকদিন ধরে উত্তেজনা চলছিল। নেতৃস্থানীয়রা একাধিকবার সমঝোতার চেষ্ঠা করেও ব্রর্থ হন। স্থানীয় প্রশাসন সমঝোতা করতে ব্যর্থ হয়। উভয় পক্ষকে পৃথক পৃথক সময় দিয়ে অনুষ্ঠান সম্পন্নের অনুমতি প্রদান করে। কিন্তু অনুষ্ঠান পালন করতে গিয়ে দুই পক্ষই হাঙ্গামায় জড়িয়ে পড়ে।
জানা গেছে বিকেল চারটার পর সার্বজনীন রথযাত্রার উৎসব শেষে স্থানীয় বাসুদেব বাড়ীতে রথ নিয়ে যাওয়ার পথে ও নামহট্রের রথ একই পথ দিয়ে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিলে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে সার্বজনীনের রথযাত্রা বাসুদেব মন্দিরে রাখা হলে নামহট্রের রথ বের হয়। পথিমধ্যে উভয়পক্ষের লোকজন ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করে এতে জগন্নাথপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মুরসালিন সহ আহত হন অন্তত ২০ জন। আহতরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স ভর্তি করা হয়। আহতদের মধ্যে দিবাকর পাল নামে একজনকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। অপরাপর আহতদের মধ্যে ধীরেন গোপ, দিবরাজ আচায্য, মিন্টু দেব, সন্তোষ দেসহ অন্যান্যরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ঘটনায় উপজেলা শহরে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন জানান, প্রতি বছরের ন্যায় জগন্নাথপুর গ্রামের সনাতন ধর্মালম্বীরা জগন্নাথ বিগ্রহ ও বাসুদেব বিগ্রহ নিয়ে সার্বজনীন রথযাত্রা উৎসব উদযাপন করেন। কিন্তু এ বছর আন্তজার্তিক কৃষ্ণ ভাবানামৃত সংঘ ইসকনের অঙ্গসহযোগী সংগঠন বাসুদেব নামহট্র সংঘের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো রথযাত্রা উদযাপনের পৃথক প্রস্তুতি নেয়া হলে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে প্রশাসন সমঝোতার উদ্যোগ নেয়। সর্বশেষ স্থানীয় সংসদ সদস্য অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান এর উপস্থিতিতে প্রশাসন উভয়পক্ষকে রথযাত্রার জন্য পৃথক স্থান ও সময়সূচী নির্ধারণ করে দেয়।
মঙ্গলবার রাতে জগন্নাথপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পৃথক পৃথকভাবে উভয় পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে জগন্নাথপুর সার্বজনীন রথযাত্রা কে সকাল থেকে চারটা পযর্ন্ত ও নামহট্ট সংঘকে চারটার পর রথ বের করার অনুমতি দেয়া হয়। বুধবার প্রশাসন দিনভর নজরদারি রাখে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সমঝোতা করেও সংঘর্ষ এড়ানো যায়নি।
জগন্নাথপুর থানা ভারপ্রাপ্ত ওসি মুরসালিন আহত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে।