স্টাফ রিপোর্টার:
স্ত্রীর সহযোগিতায় দীর্ঘদিন ধরে এক এতিম হতদরিদ্র তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে মাদরাসা শিক্ষক মাওলানা আব্দুল হক ও তাঁর স্ত্রী সাকেরা বেগমের বিরুদ্ধে ছাতক থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। আব্দুল হকের স্বজন ও তাঁর অনুসারীদের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে মঙ্গলবার রাতে এতিম তরুণী ছাতক থানায় ধর্ষণের মামলাটি দায়ের করেন।
মামলা করায় ধর্ষকের স্বজন ও তাঁর অনুসারী মাতবররা মেয়েটির পরিবারকে গ্রামছাড়া করার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে মেয়েটির পরিবার।
মামলার বিবরণ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ এক দশক ধরে ছাতকের কালারুকা ইউনিয়নের নয়া লম্বাহাটি গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের এক তরুণীকে ধর্মীয় কথাবার্তায় মোহাচ্ছন্ন করে স্ত্রীর সহায়তায় ধর্ষণ করে আসছেন হাসনাবাদ মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা আব্দুল হক। দুই বছর আগে এক বিবাহিত প্রবাসীর কাছে ওই তরুণীকে বিয়ে দেন মাওলানা আব্দুল হক। প্রবাসী স্বামী বিদেশ চলে যাওয়ার পর আব্দুল হক আবারও তরুণীকে ধর্ষণ করতে চাইলে বাধা দেন তিনি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তরুণীর বাবার বাড়ি এসে তাঁকে আবারও ধর্ষণ করেন ওই মাওলানা। বিষয়টি প্রবাসে থেকে জানতে পারেন তাঁর স্বামী ও শ্বশুরের পরিবারের লোকজন। একপর্যায়ে নির্যাতিতা তরুণী তাঁর পরিবার ও তাঁর শ্বশুরের পরিবারকে তাঁর ওপর দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন চালানো মাওলানা আব্দুল হকের বর্বরতার কথা প্রকাশ করেন। এতে ক্ষুব্ধ ও হতভম্ব হয়ে পড়ে সবাই।
এ ঘটনায় স্থানীয়ভাবে সালিস হলে মাওলানা আব্দুল হককে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু তরুণী আইনি আশ্রয় নিতে চাইলে তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখে মাওলানা আব্দুল হকের ঘনিষ্ঠজন ও কিছু সালিসকারী।
বিষয়টি নিয়ে গত ২৬ অক্টোবর দৈনিক কালের কণ্ঠে ‘ছাতকে তরুণীকে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকের ধর্ষণ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাসনাবাদ মাদরাসা থেকে ওই মাওলানাকে বহিষ্কার করা হয়। কালের কণ্ঠ’র এ প্রতিবেদনের সূত্রে গত ২৭ অক্টোবর ঘটনাস্থলে আইনজীবীদের নিয়ে যান সুনামগঞ্জ জেলা মহিলা পরিষদ নেতারা। তাঁরা মেয়েটিকে মামলার পরামর্শ ও সহযোগিতার আশ্বাস দিলেও সালিসকারীরা ফতোয়া জারি করে বলে, এ ঘটনা প্রকাশ করা পাপ। এতে আলেমসমাজের কলঙ্ক হবে।
অবশেষে হুমকি উপেক্ষা করে মঙ্গলবার রাতে ছোট ভাইকে নিয়ে থানায় এসে মাওলানা আকরাম আলীর ছেলে ধর্ষক মাওলানা আব্দুল হক (৫৫) ও তাঁর স্ত্রী সাকেরা বেগমের (৪৫) বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন ওই তরুণী। এরপর গতকাল বুধবার ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্তকাজ সম্পন্ন করেন এসআই জাহানারা বেগম।