আগের অধ্যায়ে রাজধানীর বিভিন্ন ফাইভ স্টার হোটেলের এন্টারটেইনার বা আনন্দদায়িনী, বিভিন্ন হোটেল ও ক্লাবের ডি.জে বা ডিক্স জকি, নগরীর ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে কলগার্ল বা যৌনকর্মী বা বারাঙ্গনাদের নিয়ে লিখেছি। আরো লিখেছি জিগোলো বা পুরুষ যৌনকর্মীদের নিয়ে। এগুলো নগরের এলিটদের সংস্কৃতি। একে খারাপ বলার বা নিন্দা করার কোনো অধিকার আমি সংরক্ষণ করি না। কোন সংস্কৃতি খারাপ আর কোন সংস্কৃতি মন্দ, তা নির্ধারণ করে দেওয়ার আমি বা আমরা কেউ নই। মানুষ স্বাধীন। অন্যের ক্ষতি না করে বা আইন লঙ্ঘন না করে তার যা ইচ্ছা তাই সে করতে পারে। জগতে ভালো-মন্দ আপেক্ষিক। আমার কাছে যা ভালো, অন্যের কাছে তা মন্দ। আবার আমার কাছে যা মন্দ, অন্যের কাছে তা ভালো। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি এই এলিট সংস্কৃতিতে নিন্দনীয় কিছু খুঁজে পাই না। জীবনকে আমি উৎসব হিসেবেই দেখি। মনে হয়, মানুষ কিছুকালের জন্য প্রকৃতির অন্য কোনো স্থান থেকে পৃথিবী নামক এই সরাইখানায় এসেছে। আনন্দ-ফূর্তি করে আবার ফিরে যাবে।
এবার মফস্বলের দিকে দৃষ্টি ফেরাই। মফস্বল শহরগুলোতে অতীতেও বারাঙ্গনারা ছিল, এখনো আছে। কান্দাপাড়া, রথখোলা, দৌলতদিয়া, বানিয়াশান্তা যৌনালয়সহ আরো কয়েকটি বিখ্যাত যৌনালয় এখনো বিদ্যামান। এসব যৌনালয় থাকাটা ভালো না মন্দ সেই বিতর্কে আমি যাব না। তবে এটুকু বলি, নগরের সঙ্গে যৌনালয়ের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। প্রাচীনকালে যৌনালয়গুলো গড়ে উঠত বিশেষত নদী বা সমুদ্রের তীরে। দূরদূরান্ত থেকে যেসব বণিক, নাবিক ও জাহাজশ্রমিক আসত, স্ত্রী ছেড়ে তাদেরকে সমুদ্রে পড়ে থাকতে হতো মাসের পর মাস। মূলত তাদের যৌনচাহিদার প্রয়োজনেই গড়ে উঠত বন্দরে বন্দরে নানা যৌনালয়। পৃথিবীর অধিকাংশ বড় বড় শহরে এখনো যৌনালয় রয়েছে। সেসব যৌনালয়ের পেশাধারী যৌনকর্মী বা বারাঙ্গনারা সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়ে এবং সরকারকে কর দিয়ে যৌনব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশে যৌনালয় থাকবে কিনা, তা নির্ধারণ করুক রাষ্ট্র। তবে গ্রামবাংলায় যৌনালয় থাকলেও পেশাধারী জিগোলো বা পুরুষ যৌনকর্মী ছিল না এবং নেই। আবার নেইও কি বলা যাবে? আছে, তবে অন্যভাবে। সে আরেক প্রসঙ্গ। এটা এখনো গ্রামে পেশা হয়ে ওঠেনি। তবে ছিল ডি.জেরা, আর ছিল জুয়া খেলা। এবং এখনো আছে।
গ্রামীণ ডি.জে কারা সেই প্রসঙ্গে পরে আসছি। তার আগে প্রসঙ্গক্রমে বলি, পঁচিশ-তিরিশ বছর আগেও গ্রামে গ্রামে ছিল বিভিন্ন ক্লাব, সমিতি, পাঠাগার ও নানা সাংস্কৃতিক সংগঠন। সেসব সংগঠনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হতো নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেসব সংগঠন এখনো যে নেই, তা নয়। আছে। তবে আগের তুলনায় অনেক কম। পশ্চিম বাংলায় এখনো ব্যাপকহারে এসব সংগঠন দেখা যায়। গ্রামসমাজে এসব সংগঠনের বড় ধরনের একটা প্রভাব ছিল। বলা যায়, সমাজ পরিচালিত হতো এসব সংগঠনকে কেন্দ্র করেই। সংগঠনগুলো হৃাস পাওয়ার ফলে গ্রামের অধিকাংশ সমাজ এখন পরিচালিত হচ্ছে মসজিদ বা উপাসনালয়কে কেন্দ্র করে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমাজের বা রাষ্ট্রের যোগ থাকলে কী পরিণত হয়, তা আমরা জানি। পৃথিবীর বিভিন্ন খৃষ্টান ও মুসলিম অধ্যুষিত দেশে দেখেছি, দেখছি। সুতরাং উপসনালয়-কেন্দ্রিক সমাজ ভবিষ্যতের বাঙালি ও বাংলাদেশের জন্য যে শুভ নয়, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
সংগঠনের বাইরেও গ্রামবাসীর যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হতো নানা ধরনের মেলা। নানা কারণে সেসব মেলার অনেকগুলো এখন বিলুপ্ত। বর্তমানে যেসব মেলার প্রচলন আছে তার মধ্যে রয়েছে―বৈশাখি মেলা, বউ-শাশুড়ি মেলা, জামাই মেলা, জামাই-বউ মাছমেলা, কেল্লাপোষী বা জামাইবরণ মেলা, বিষুবসংক্রান্তির মেলা, বিজু উৎসব ও মেলা, রথমেলা, লাঙ্গলবন্দ স্নান উপলক্ষ্যে মেলা, রাসমেলা, বুড়াবুড়ির মেলা। এছাড়াও আছে ধর্মীয় উপলক্ষে মেলা, কৃষি উৎসব উপলক্ষে মেলা, ঋতুভিত্তিক সাধু-সন্তের ওরস উপলক্ষে মেলা, জাতীয় জীবনের বিভিন্ন বরেণ্য ব্যক্তি যেমন কবি-সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, দার্শনিক ইত্যাদির স্মরণোৎসব উপলক্ষে মেলা, জাতীয় দিবসসমূহ উদযাপন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত সাংস্কৃতিক মেলা, বাণিজ্যিক সামগ্রী প্রদর্শনী ও বিক্রয় মেলা ইত্যাদি।
এসব মেলার লাভ কী? লাভ অনেক। আমাদের সমাজে তো কেবল অবদমন আর অবদমন। চারদিকে কেবল নিষেধের প্রকার, চারদিকে কেবল ধর্মের বেড়জাল। মানুষ যে নিজের চিত্তটাকে একটু প্রসারিত করবে সেই সুযোগ কম। ধর্মতন্ত্রীরা সবসময় চায় সমাজের মানুষ তাদের কথায় উঠবস করুক, আনন্দ-ফূর্তি বাদ দিয়ে কেবল উপাসনা করুক। কিন্তু এসব মেলার চরিত্রই হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষ। মেলাকে কেন্দ্র করে গ্রামের মানুষ একটা ধর্ম ও গোষ্ঠীনিরপেক্ষ প্লাটফর্মে এসে দাঁড়ায়। মেলাকে কেন্দ্র করে রক্ষণশীলতার গণ্ডির বাইরে মানুষের একটা ঐক্য হয়। এই ধর্মনিরপেক্ষ ঐক্যের কারণে রক্ষণশীল ধর্মতন্ত্রীরা হয়ে পড়ে কোণঠাসা, তাদের আগ্রাসনে কিছুটা হলেও পড়ে ভাটা। অর্থাৎ এসব মেলার কারণে সমাজে ধর্মতন্ত্রীদের একতরফা শাসন বাধাগ্রস্ত হয়। আর প্রতিষ্ঠিত হয় বিপরীত শাসন, জাগরুক থাকে বহুত্ববাদ। তাই উদার সংস্কৃতির বিকাশে এসব মেলার খুবই প্রয়োজন।
গ্রামীণ এসব মেলা উপলক্ষে আগে যাত্রাপালার আয়োজন হতো। আকাশ-সংস্কৃতির বহুমাত্রিকতার এই কালে যাত্রাপালা এখন বিলুপ্তপ্রায়। বিবেকেরা এখন মরে গেছে। তবে কোথাও কোথাও এখনো যাত্রাপালা হয়। এসব মেলায় আয়োজন হতো জুয়া খেলা, হাউজি, তিন তাস, কাইট, হাজারী, কেরামসহ বিভিন্ন আইটেমের জুয়ার আসর এবং কোথাও কোথাও এখনো হয়। আগের দিনে কোনো কোনো মেলায় যাত্রাপালার নামে একজন সুন্দরী অভিনেত্রীকে ভাড়া করে এনে নৃত্যগীতের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো এবং কোথাও কোথাও এখনো হয়। টাকার বিনিময়ে সেই অভিনেত্রী গানের তালে তালে নৃত্য করেন। নগরের অধুনা ডি.জেরাই হচ্ছেন গ্রামের সেই নৃত্যকীরা, যারা গীতের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে দর্শকদের মনোরঞ্জন করতেন, করেন।
রক্ষণশীল ধর্মতন্ত্রীরা এই নৃত্যকীদের নৃত্যকে ‘অশ্লীল নৃত্য’ অভিহিত করে থাকে। এসব নৃত্যানুষ্ঠান তাদের জন্য বিরাট সমস্যা। কারণ এতে তাদের ক্ষমতা খর্ব হয়। তাই তাদের মেজাজ চড়ে যায়, তারা জেহাদি জজবায় জেগে ওঠে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্য এটা মোটেই কোনো সমস্যা নয়। এতে তাদের ধর্ম চলে যায় না, ঈমান চলে যায় না, চরিত্র বা কৌমার্যও নষ্ট হয়ে যায় না। এক ধরনের বিনোদন হিসেবেই তারা অভিনেত্রীটিকে ভাড়া করে আনে, রাত জেগে তার নাচ দেখে। সেই অভিনেত্রীটিকে আমি বিপ্লবী বলে মনে করি। কারণ তিনি রক্ষণশীলতার শৃঙ্খল ভেঙে, ধর্মতন্ত্রীদের চাপিয়ে দেওয়া বিধানকে অগ্রাহ্য করে নৃত্যাসরে নাচতে আসেন। নারীকে গৃহবন্দি করে রাখার বিরুদ্ধে তার এই সাহসকে আমি এক ধরনের বিপ্লব হিসেবে দেখি, নারীপ্রগতির একটা ধাপ বলেই মনে করি।
ধর্মতন্ত্রীদের নিয়ে কিছু বলার নেই, তারা চিরকালের নেতিবাচক চরিত্র, জগতের সব আনন্দই তাদের কাছে বিষাদ। বলার আছে গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের নিয়ে আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে। বড় বড় পত্রিকাগুলোতে প্রায়ই দেখি গ্রামীণ মেলার এসব নৃত্যকে ‘অশ্লীল নৃত্য’ অভিহিত করে সংবাদ ছাপা হয়। সেসব সংবাদের শিরোনাম থাকে এরকম : ‘যাত্রাপালার নামে অশ্লীল নৃত্য’, ‘পুলিশের নাকের ডগায় অশ্লীল নৃত্য’, ‘মেলার নামে জমজমাট অশ্লীল নৃত্য’ ইত্যাদি। খুব কমন শিরোনাম। প্রায়ই দেখা যায়। মফস্বল সাংবাদিকরা যে রক্ষণশীল সমাজে বাস করেন সেই রক্ষণশীলতার প্রভাব তাদের ওপরও পড়ে বলে তারা এসব নৃত্যানুষ্ঠানকে ‘অশ্লীল’ আখ্যা দিয়ে এর বিরুদ্ধে লেখাকে কর্তব্য বলে মনে করেন। কিন্তু মফস্বল সাংবাদিকটি যখন ঢাকার জাতীয় কাগজে সংবাদটি প্রেরণ করেন, কাগজের মফস্বল সম্পাদক বা সম্পাদকও সংবাদটি বড় একটা শিরোনাম দিয়ে ছেপে দেন। কেন ছাপেন? কোন মানদণ্ডে তারা একে অশ্লীল অভিহিত করেন?
ধরে নিলাম গ্রামীণ মেলায় যাত্রাপালার নামে এসব নৃত্যানুষ্ঠান অশ্লীল। গ্রামীণ মেলার নৃত্যানুষ্ঠান যদি অশ্লীল হয়, তবে কি নগরের হোটেল ও ক্লাবের ডি.জে পার্টি শ্লীল? নইলে, কই, এসব ডি.জে পার্টি নিয়ে তো বড় কাগজগুলোতে কোনো সংবাদ ছাপা হয় না! এর দ্বারা বোঝা যায় যে, সাংবাদিকরা একটা গোষ্ঠীর স্বার্থ সংরক্ষণ করেন। সেই গোষ্ঠীটি এলিট গোষ্ঠী। নইলে একই ব্যাপারে দুই নীতি কেন? একইভাবে বড় কাগজগুলো নগরের বিভিন্ন ক্লাব, রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠনের অফিস, সমিতির অফিস, মার্কেট ও দোকানঘরে চলা জুয়ার আসরগুলোর ব্যাপারে প্রায় নীরব। এসব নিয়ে তেমন কোনো প্রতিবেদন খুব একটা চোখে পড়ে না। অথচ মফস্বল সাংবাদিক কর্তৃক প্রেরিত ‘মেলার নামে জমজমাট জুয়ার আসর’, ‘প্রশাসনের নাকের ডগায় জুয়ার আসার’ সংবাদটি বড় শিরোনাম দিয়ে নির্দ্বিধায় ছেপে দেন। কেন? নগরে যদি জুয়া খেলা ওপেন সিক্রেট হতে পারে, গ্রামে কেন নয়? নগরে যারা জুয়া খেলে তারা পত্রিকাগুলোতে বিজ্ঞাপন দেয়, তাদের বিরুদ্ধে লেখা হলে বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়ে যাবে―সেকারণেই কি তাদের বিরুদ্ধে লেখা হয় না? কিংবা লেখা হলে নানা চাপের মুখে পড়তে হবে বলে? আর গ্রামের মানুষ তো বিজ্ঞাপন দেয় না, তাদের ক্ষমতাও নেই, তাই তাদের বিরুদ্ধে যা ইচ্ছা তাই ছেপে দেওয়া যাবে। নাকি পত্রিকার সম্পাদক এলিট বলে নগরের এই এলিট সংস্কৃতি তার পছন্দের, আর গ্রামের সাধারণ মানুষের সংস্কৃতি ঘৃণার?
গ্রামীণ মেলাগুলো থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাঁদাবাজির কথা সর্বজন বিদিত। পুলিশকে চাঁদা না দিয়ে মেলার আয়োজন চিন্তাই করা যায় না। কেন পুলিশকে চাঁদা দিতে হবে? নগরের হোটেল ও ক্লাবের ডি.জে পার্টির জন্য কি পুলিশকে চাঁদা দেওয়া হয়? হয় না। নাকি হয়? একইভাবে গ্রামের মানুষটির মদপানকে পুলিশ বলে ‘নেশা করা’, আর নগরের এলিটের মদপানকে বলে ‘ড্রিংক করা’। গ্রামের মানুষটি মদপান করে মাতলামি করলে বলে ‘লোকটা মাতাল’, আর নগরের এলিট মদপান করে মাতলামি করলে বলে ‘ভদ্রলোক ড্রাংক’। গ্রামের মদালয়কে বলা হয় ‘শুঁড়িখানা’ বা ‘মদের আস্তানা’, আর নগরের মদালয়কে বলা হয় ‘বার’। গ্রামের যৌনকর্মীটিকে বলা হয় বেশ্যা বা পতিতা, আর নগরের হোটেল-ক্লাবের যৌনকর্মীকে বলা হয় এন্টারটেইনার। কী নিদারুণ শব্দসন্ত্রাস! তার মানে এলিট সংস্কৃতি ও গ্রামীণ সংস্কৃতির বিচারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বৈতনীতি দৃশ্যমান। সংস্কৃতির নামকরণের এই বিচারকেই, এই দ্বৈতনীতিকেই আমি সংস্কৃতির বৈষম্য বলতে চাচ্ছি।
একই বৈষম্য দেখতে পাই বাংলার পীর-ফকির-সাধু-সন্তদের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ওরস উপলক্ষেও। আমার একাধিক লেখায় এসব ওরসকে অসাম্প্রদায়িক বলে অভিহিত করেছি। (দ্র. বাংলার সহজিয়া ইসলামের সন্ধানে)। চট্টগ্রামের মাইজভান্ডারির ওরসে প্রতি বছর প্রায় দশ-বারো লাখ ভক্তের সমাগম ঘটে। ফরিদপুরের আটরশীর ওরসে প্রায় পঁচিশ-তিরিশ লাখ ভক্তের সমাগম ঘটে। চন্দ্রপুরীর ওরসেও লাখ লাখ ভক্ত আসে। ফরিদপুরের মতুয়াদের উৎসবেও লাখ লাখ অনুসারীর সমাগম ঘটে। বাংলার এরকম অসংখ্য মাজারে বা দরগায় প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। এসব ওরস বা উৎসব নিয়ে বড় পত্রিকাগুলোয় সিঙ্গেল কলামের একটা নিউজও ছাপা হয় না। কিন্তু তুরাগ নদীর তীরে তাবলিগের এজতেমার নিউজ প্রথম পাতায় গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়। তাতে মনে হয় এরাই বুঝি বাঙালি মুসলমান। বিপরীতে সুফিবাদী উদারবাদী বিশাল জনগোষ্ঠী যেন বাঙালি মুসলমান নয়। কী হাস্যকর! কী একচোখা নীতি!
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, গ্রামের মানুষের চিত্তবিনোদনে এবং গ্রামীণ সংস্কৃতির বিকাশে রক্ষণশীল ধর্মতন্ত্রীদের পাশাপাশি সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী সমাজ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও একই মনোভাব পোষণ করছেন। এই দ্বৈতনীতির কারণেই একটা গোষ্ঠীর সংস্কৃতি বিকশিত হচ্ছে, অন্য গোষ্ঠীর সংস্কৃতি ক্রমেই সংকোচিত হচ্ছে। বলাবাহুল্য, গ্রামীণ সংস্কৃতির সমস্ত অনুসঙ্গ বাঙালি সংস্কৃতিসম্ভূত। হ্যাঁ, সংস্কৃতির মধ্যে ‘অপসংস্কৃতিও’ থাকে। পৃথিবীতে কোনো কিছুই বিশুদ্ধ নয়। ধানের মধ্যে তুষ থাকে। প্রকৃতির নিয়ম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধানটাই কাজে লাগে। একটা রাষ্ট্র টিকে থাকার জন্য কালো টাকারও প্রয়োজন হয়। স্বীকার না করুন, এটাই সত্য। সুতরাং ভালো-মন্দ মেশানো সংস্কৃতির বিকাশে সর্বাত্মক সহায়তা করা বুদ্ধিজীবী সমাজ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তব্য বলে মনে করি।
(লেখকের ফেইসবুক টাইমলাইন থেকে নেওয়া)
লেখক: কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক।