জনমনে একটা প্রশ্ন অস্বস্তি নিয়ে মনের গহীনে ঘুরপাক খায়,যুদ্ধে নারীর অংশগ্রহণ এত নগণ্য কেন?অথচ
নারীর যুদ্ধে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রথম যুদ্ধটি হয় নিজ পরিবার, সমাজ ও ধর্মীয় বিধিনিষেধের সঙ্গে। পরিবার ও সমাজ তার নিরাপত্তা আর অযোগ্যতার কথা ভাবে এবং গৃহ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত করে যায়।একথা ভাবেনা যে,যুদ্ধ চলাকালে ঘর আরো বেশি অনিরাপদ হয়ে ওঠে।
দ্বিতীয় যুদ্ধটি হয় প্রশাসকবর্গের সাথে।একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী নারী মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে জানা গেছে যে,যুদ্ধের ময়দানেও নারী-পুরুষের জেন্ডার বৈষম্য বিন্দুমাত্র নিরসন হয় নি। ট্রেনিংএর ক্ষেত্রে উভয়কেই পেরিয়ে আসতে হয়েছে দুরূহ অভিজ্ঞতা। অথচ দায়িত্ব বন্টনের সময় নারী শিকার হয়েছে অবিশ্বাস আর বৈষম্যের।তাই তারামন বিবিকেও শুরুতে ক্যাম্পের রান্নাবাড়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল।
এই সব সামাজিক-পারিপার্শ্বিক ট্যাবু ভেঙে বেরিয়ে এসে নারী যখন সফল যুদ্ধাভিযান পরিচালনা শেষে ঘরে ফিরেছে, তখন তার জন্য অপেক্ষা করছে চতুর্থ যুদ্ধ — স্বীকৃতিপ্রাপ্তির যুদ্ধ। স্বাধীনতার পর দীর্ঘকাল আমরা জানতেই পারিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে নারীর সশস্ত্র অংশগ্রহণ সম্পর্কে।
(এখন পর্যন্ত পুরুষ ও নারী মুক্তিযোদ্ধার অবদানের স্বীকৃতির অনুপাত ১ঃ৩২৮।)
এমনকি গুরুত্বপূর্ণ পরোক্ষ অংশগ্রহণের চিত্রগুলোও ইতিহাস, গল্প-উপন্যাস বা নাটক-সিনেমায় প্রতিফলিত হয় নি।
নারীর নির্যাতিত অসহায় রূপটি ছাড়া অন্য কোনো ভূমিকা বা অবদানের বিষয়টি সুকৌশলে এড়িয়ে যাওয়া বা প্রচ্ছন্ন করে দেয়াটা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কূটনীতিক কৌশল।
এমনকি নারীর নির্যাতিত রূপটিকেও সম্মানিতভাবে কোথাও উপস্থাপন করা হয় নি।তাদের নিয়তির হাতে বন্দী পুতুলের মতো নির্বাসিত, মৃতপ্রায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে আত্মহত্যার অন্ধকারে বিলীন হতে দেখা গেছে।
তারামন বিবি এই ইচ্ছাকৃত ইতিহাস বিকৃতির মুখে এক চপেটাঘাত। উল্লেখ্য, তার মৃত্যুর পর পরই অনেকে তার জীবনী তুলে ধরতে গিয়ে কাঁকন বিবির সাথে একাকার করে ফেলছেন। পায়খানা মেখে ঘুরে বেড়ানো আর পাগল সেজে প্রতিপক্ষের তথ্য সংগ্রহের কাজ করতেন কাঁকন বিবি।ইতিহাস তুলে ধরতে গিয়ে নতুন ইতিহাস বিকৃতি ঘটে চলেছে।
##
রোখসানা চৌধুরী, লেখক, বিভাগীয় প্রধান বাংলা বিভাগ, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ।
(লেখকের ফেইসবুক টাইম লাইন থেকে নেওয়া)