১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উদযাপন করে ১৮ ডিসেম্বর বিকাল ৩ টায়
মা,বাবা ও বিজয়দাকে সালাম করে বাড়ি থেকে সিলেট আসি। ২০ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখ খবর পেলাম রাত ২ টায় থেকে বিজয় সরকার বাকরুদ্ধ। পরে মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল নিয়ে যেতে বলা হয় কিন্তু শম্ভুগঞ্জ পর্যন্ত যেতেই না যেতেই চলে যান পর পারে।
তাঁর সাথে আমার কত যে স্মৃতি বলে শেষ করার নয়। আমি যখন স্কুলে পড়তাম তাঁর দোতারার তান শুনে পড়তে বসতাম। তাঁর এমনও রাত গেছে সারা রাতভর দোতারা বাজিয়েছেন। এমনকি প্রতিদিন রাত সন্ধ্যা থেকে রাত ১০/১১ টা আবার গভীররাত ৩/৪ টা থেকে ভোর পর্যন্ত দোতারা বাজাতেন এবং গান গাইতেন বিজয় সরকার। আমি তার তালে তালে মৃদঙ বাজিয়েছি কত। তিনি যেমন খেতে পারতেন তেমন বলশালীও ছিলেন। বাবার মুখে শুনেছি ফুটবল খেলায়ও দক্ষ ছিলেন,ভালো কুস্তি খেলতেন। তিনি বিভিন্ন নাম কীর্তনের দলে দোতারা বাজিয়েছেন। দলের হয়ে দোতারা নিয়ে গেছেন বিভিন্ন জেলায় এমনকি হাতিয়া,সন্দ্বীপ কক্সবাজার পর্যন্ত। একসময় তাঁর স্ত্রীর অনুরোধে আর যেতেন না দলে। তাঁর দুই মেয়ে ডলি রানি ও কলি রানি সরকার। দুজনকেই বিয়ে দিয়েছেন। তাঁর স্ত্রী পরপারে চলে গেছেন কবছর আগেই।
একদিন জিজ্ঞাসা করছিলাম আপনার তো ছেলে নাই আর সন্তান নিলেন না যে ছেলের আশায়। বললেন “আমি আইনকে সম্মান করি সরকার চায় যে ছেলে হউক মেয়ে হউক দুটি সন্তানই যথেষ্ট।” বিজয় দা একজন ভালো কুটিরশিল্পীও ছিলেন। বানাতে পারতেন বাঁশের জিনিস পত্র। আমি বলেছিলাম পাঠাগারের জন্য কোলা,টুকরি,খলই চালুন, ধারি( কাইত্যা), ডোল ইত্যাদি বানিয়ে দিতে কিন্তু আর হল না।বিজয় সরকার মাছ ধরায় পারদর্শী ছিলেন। জাল ছাড়াই মাছ ধরতে পারতেন।
মনস্থির করে রেখেছিলাম গাঙুড় এর আগামী সংখ্যায় তাঁকে নিয়ে লেখা ছাপাবো। এখন ছাপাবো হয়তো তবে দেখে যেতে পারলেন না। বিজয়দা,আপনার দোতারা সংরক্ষণে থাকবে অজিৎ স্মৃতি পাঠাগারে। হয়তো মাঝে মাঝে বাজাবে আপনার উস্তাদ চন্দ্রকুমার সরকার, তোমার মন চাইলে ধইর আবার তান।