হাওর ডেস্ক::
আওয়ামী লীগ থেকে টানা তৃর্তীয়বার নির্বাচিত সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ এম এ মান্নান এবার পরিকল্পনামন্ত্রী হয়েছেন। এর আগে তিনি অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
১৯৪৬ সালে সুনামগঞ্জ জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার ডুংরিয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এম এ মান্নান। তিনি গ্রামের স্কুলে তার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন এবং সারগোদায় অবস্থিত পাকিস্তান এয়ারফোর্স স্কুল থেকে ও লেভেল সমাপ্ত করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৭৪ সালে তদানীন্তন সিএসপি ক্যাডারে যোগদান করেন এবং জেলা প্রশাসক কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যুগ্ম সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক এবং এনজিও ব্যুরোতে মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ইকোনমিক মিনিস্টার হিসেবে জেনেভায় অবস্থিত বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে ২০০৩ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
এম এ মান্নান ২০০৫ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে সাংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নবম জাতীয় সংসদে তিনি পাবলিক অ্যাকাউন্টস সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন যেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধিত্ব করতেন। তিনি ২০১০ এবং ২০১৩ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।
মান্নান বিবাহিত, তার স্ত্রী জুলেখা মান্নান ঢাকা উইমেন্স কলেজের একজন শিক্ষিকা। তার মেয়ে সারা একজন চিকিৎসক। তিনি স্বামীর সঙ্গে আমেরিকায় বসবাস করছেন। তার ছেলে শাদাত ব্রিটেনে অবস্থিত বার্কলেইস ক্যাপিটাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং লন্ডনে বসবাস করছেন।
তাছাড়া মান্নান ডেভেলপমেন্ট লিটারেচার এ আগ্রহী এবং বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগণের কল্যাণে কাজ করছেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালে তিনি বাংলাদেশ সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এম এ মান্নানকে ২০০১ সালে নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনে পদায়ন করা হয়। বিএনপি নেতৃবৃন্দ ওই সময় কথা ওঠান ৯৬ এর নির্বাচনে তাদের ক্ষতি করেছেন এমএ মান্নান। দুই সপ্তাহের মাথায় তাকে নির্বাচন কমিশন থেকে প্রত্যাহার করা হয়। এর মধ্যেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেয়। এমএ মান্নানকে বিসিকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়। নির্বাচন হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয় হয়।
২০০৫ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এমএ মান্নান। ২০০৬ এর জাতীয় নির্বাচনে দলের মনোনয়ন দেয়া হয় তাকে। ওই সময় ৩০০ আসনেই আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করেন। ২০০৮ সালে আবার আওয়ামী লীগ নির্বাচনে গেলে এমএ মান্নানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। বিশাল ভোটের ব্যবধানে ওই নির্বাচনে জয়ী হন তিনি।
২০০৯ সালে দলের কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হয় এমএ মান্নানকে। ওই বছরেই প্রতিরক্ষা, জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় কমিটিতে যুক্ত করাসহ সরকারের ৩ বছরের মাথায় পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান করা হয় তাকে। ৩ বছর পর আরেকবার দলের কাউন্সিলে তাকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাখা হয়। সুনামের সঙ্গে দলীয় প্রধানের দেয়া দায়িত্ব পালন করেন এমএ মান্নান।
২০১৪ সালের নির্বাচনে আবার দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয় তাকে। ওই নির্বাচনেও বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন সজ্জন এই রাজনীতিবিদ। নির্বাচনের পর প্রথমে তাকে অর্থ প্রতিমন্ত্রী, এক মাসের মাথায় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীরও দায়িত্ব দেয়া হয়। সরকারের ৫ বছরের শাসনামলে নিজের জেলায় আরও বেশি জনপ্রিয় হতে থাকেন তিনি।
অন্যদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমএ মান্নান তার প্রতিদ্বন্দ্বী জমীয়তে উলামায়ে বাংলাদেশ ও ২০ দলীয় জোট মনোনীত প্রার্থী শাহীনূর পাশা চৌধুরীর চেয়ে এক লাখ ১০ হাজার ২২৪ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। প্রাপ্ত ভোটের মধ্যে এমএ মান্নান পেয়েছেন এক লাখ ৬৩ হাজার ১৪৯ ভোট।