স্টাফ রিপোর্টার::
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ আলফাত উদ্দিন আহমদ রিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন স্মৃতি ট্রাস্টের অনুষ্ঠানে রিক্সা শ্রমিকদের মধ্যে প্রধান অতিথি হিসেবে কম্বল বিতরণ করতে এসেছিলেন মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। শহিদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে রিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের প্রায় দুই শতাধিক শ্রমিক এসেছিলেন। অতিথিদের বক্তব্য শেষে যখন জেলা প্রশাসকের পালা তখন তিনি রিক্সা শ্রমিকদের কিছু বলার জন্য বিশেষ করে তাদের অভাব ও দাবি দাওয়া সম্পর্কে বলার অনুরোধ করেন। মঞ্চে ডেকে নিয়ে তিনি তাদের অভাব অনটনের কথা শুনে তাদেরকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
জেলা প্রশাসকের আহ্বানে মঞ্চে এগিয়ে এলেন প্রথমে হারুন মিয়া নামের একজন রিক্সা শ্রমিক। পরে রিক্সা শ্রমিক আলাল মিয়া, রাশেদ মিয়াও বক্তব্য দেন
তারা জানালেন, রিক্সা শ্রমিকদের বেশির ভাগেরই নিজের জায়গা জমি ও ঘরবাড়ি নেই। যাদের জায়গা আছে তাদের ঘর করার সামর্থ নেই। সন্তানরাও পড়ালেখা বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি খাসজমি বন্দোবস্ত দানের অনুরোধ জানালেন জেলা প্রশাসককে। আরেকজন রিক্সা শ্রমিক মঞ্চে এসে তার অভাবের কথা জানালেন। তিনিও খাসজমি বন্দোবস্তের অনুরোধ জানালেন। অনুষ্ঠানে রিক্সা শ্রমিকদের অভাব অনটনের কথা শুনে জেলা প্রশাসক তাদের আশ্বস্থ করলেন যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে তাদের সহায়তা করবেন তিনি। বিত্তহীন মানুষদের অনুষ্ঠানে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়ায় জেলা প্রশাসককে অভিনন্দন জানান উপস্থিত শতাধিক রিক্সা শ্রমিক।
রিক্সা চালকদের অভাব অনটন ও চাওয়া-পাওয়ার বক্তব্যের পরে মঞ্চে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ। তিনি বলেন বিত্তহীন মানুষদের নিয়ে এমন অনুষ্ঠানে কথা বলার সুযোগ হয়না আমাদের। আমরা যে ক্লাস মেনটেইন করি সেখানে তাদের উপস্থিতি তেমন থাকেনা। তাই আমার মনে হলো এই অনুষ্ঠান যেহেতু বিত্তহীন শ্রমজীবী মানুষদের সেহেতু তাদের কোন বক্তব্য থাকতে পারে। সেটা শোনা আমাদের দরকার। তিনি উপস্থিত রিক্সা শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি কৃষকের সন্তান। আমার বাবা আমাদের অনেক কষ্ট করে পড়াশুনা করিয়েছেন। তাই আমি আপনাদেরকে বলতে চাই আপনারা আপনাদের সন্তানদেরকে শিক্ষিত করুন। তাদেরকে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার ক্ষেত্রে যদি আমার কোনো সহযোগিতা প্রয়োজন হয় তাহলে আমি তাই করব। প্রয়োজনে আমি মানুষের কাছে হাত পেতে আপনাদেরকে সহযোগিতা এনে দেব।
রিক্সা শ্রমিকদের সোনার মানুষ উল্লেখ করে বলেন, আপনারা অনেক কষ্ট করে দিনযাপন করেন। আপনারা যে টাকা উপার্জন করেন তা সম্পূর্ণ হালাল টাকা। আপনারা সন্তানের লেখাপড়াসহ কোন সমস্যা হলে আমার কাছে আসবেন। আমার দরোজা আপনাদের জন্য খোলা।
জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ তাদের উদ্দেশ্যে আরো বলেন, আপনাদের মধ্যে যাদের বাড়ি জায়গা নেই তাদেরকে একত্রিত করে যাচাই বাচাই করে একটি গুচ্ছগ্রাম তৈরি করে দিবো।
অনুষ্ঠান শেষে জেলা প্রশাসক ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ২০৬ জন রিক্সা শ্রমিককে কম্বল প্রদান করেন। ২৬জন রিক্সা শ্রমিক পরিবারকে ২ হাজার টাকা করে মৃত্যুদাবি প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রদীপ সিংহ, মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু, কমরেড রমেন্দ্র কুমার মিন্টু, শহীদ জগৎজ্যোতি পাঠাগারের কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. সালেহ আহমেদ, ইংল্যান্ড প্রবাসী খসরুজ্জামান মিয়া প্রমুখ।