অনলাইন ডেক্স::
সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বরেণ্য ও সাব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুলের হকের মরদেহ শহীদ মিনারে নেওয়া হয়েছে। বেলা ১১টার কিছু পরেই লেখকের মরদেহ শহীদ মিনারে নেওয়া হয়। প্রথমে রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর সর্বস্তরের মানুষ মরদেহের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন । পশ্চিমপাশে শোকবই রাখা হয়েছে। সব্যসাচী লেখককে নিয়ে স্মৃতিচারণ করছেন লেখক-সাহিত্যিকরা।
এরই মধ্যে শ্রদ্ধা জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বাংলা একাডেমির ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালকের নেতৃত্বে সংস্কৃতি কর্মীরা, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, তথ্য অধিদফতর, যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন।
শহীদ মিনার থেকে বাদ যোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর তার মরদেহ দাফনের উদ্দেশে গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে। কুড়িগ্রামের সরকারি কলেজ মাঠে তার শেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে বুধবার সকাল ১০টায় তেজগাঁওয়ে চ্যানেল আই চত্বরে সৈয়দ হকের প্রথম জানাজা, পৌনে ১১টায় বাংলা একাডেমিতে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সকাল ১১টার কিছু পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তার মরদেহ রাখা হয়েছে।
রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার বিকাল ৫টা ২৬ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
শহীদ মিনারে সৈয়দ হকের মরদেহ
শ্রদ্ধা জানানোর পর রামেন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘তিনি যে জায়গায় হাত দিয়েছেন সেখানেই সোনা ফলেছে। তার প্রায় পৌনে ২০০ কবিতা, ৮টি গল্পসহ অসংখ্য রচনা রয়েছে। তিনি জীবনে সময়ের অপচয় করেননি। তিনি তার যে সৃষ্টি রেখে গেছেন তার বাংলা সাহিত্যের জন্য বিপুল সম্ভার। আমরা সেগুলো পড়লে সমৃদ্ধ হবো। তার রচিত মঞ্চনাটক পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাটক। সবচেয়ে বড় কথা তার বুকে ছিল বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু।’
নাট্য ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ বলেন, ‘বাংলা কাব্য সাহিত্যের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। তিনি যেই ধারার লেখক এ ধরনের লেখকের নাটক জনপ্রিয় হয় বিষয়টি তা নয়। কিন্তু সেটা নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়। তার নাটকগুলো ছিল উচ্চমানের। তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় লন্ডনে বসে শেকসপিয়ারের হ্যামলেট নাটকের অনুবাদ করেছেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘তার মতো বলিষ্ঠ লেখক বাংলা সাহিত্যে কম এসেছেন। তাকে হারিয়ে অপূরণীয় ক্ষতি হলো। একে একে সব সাহসী মানুষগুলো চলে যাচ্ছে।’
সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘তিনি ছিলেন তার সময়ের সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ লেখক।’
শোক বইয়ে মন্তব্য লিখছেন আগতরা
দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত ছিলেন বিশিষ্ট এই লেখক। এ কারণে টানা ৬ মাস লন্ডনে চিকিৎসা নেন। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে জানিয়ে দেন রোগমুক্তির সম্ভাবনা নেই তার। তাকে ৬ মাসের সময়ও বেঁধে দেন তারা। এরপরে ২৫ আগস্ট দেশে ফিরে এসে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি।
উইকিপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী, সৈয়দ শামসুল হক ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রামে জন্ম করেন। কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প তথা সাহিত্যের সব শাখায় সাবলীল পদচারণার জন্য তাকে ‘সব্যসাচী লেখক’ বলা হয়। তিনি মাত্র ২৯ বছর বয়সে সাহিত্যিকদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান।
প্রখ্যাত এ সাহিত্যিক সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন ও হালিমা খাতুন দম্পতির আট সন্তানের প্রথম সন্তান। বাবা সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন পেশায় ছিলেন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার। এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক এ লেখক ব্যক্তিজীবনে প্রথিতযশা লেখকা ডা. আনোয়ারা সৈয়দ হকের স্বামী।