আব্দুজ জহুর ১৯৮০ সালে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সেই কমিটিতে মরহুম আব্দুর রইছ সভাপতি ছিলেন।
১৯৮৮ সালে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আব্দুজ জহুর সভাপতি নির্বাচিত হন। সেই কমিটিতে মরহুম আলফাত উদ্দিন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৭ সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আব্দুজ জহুর দ্বিতীয় বারের মত সভাপতি নির্বাচিত হন। সেই কমিটিতে মরহুম আয়ূব বখ্ত জগলুল ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আব্দুজ জহুর সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। জেল-জুলুম, নির্যাতন কারাবাসের মধ্যে দিনাতিপাত করেছেন তিনি। আব্দুজ জহুর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আপোষ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির সঙ্গে বসবাস করেননি। রাজনীতির এই ক্ষণজন্মা পুরুষের সঙ্গে ১৯৮৪ সালে আমার প্রথম পরিচয়।
স্মৃতিতে জননেতা আব্দুজ জহুর : ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সুনামগঞ্জ জেলা শাখার প্রাথমিক সদস্য পদ লাভ করার পর তৎকালীন ছাত্রনেতা আয়ূব বখ্ত জগলুল এর নেতৃত্বে আমরা যারা সার্বক্ষণিক কর্মী ছিলাম তাঁরা বিশেষ করে আবু তারেক, জিতেন্দ্র তালুকদার পিন্টু, আবু নাসের, এহসান আহমদ, আখতারুজ্জামান সেলিম, অমিত দে, অজয় তালুকদার, নবনী তালুকদার, বিজু তালুকদার, তপন তালুকদার, অঞ্জু, বিজন, মাসুক মিলে প্রায়ই জননেতা আব্দুজ জহুর মহোদয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে দিক নির্দেশনা নেয়া হত। ৮০’র দশকে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী আব্দুজ জহুর সকাল বেলা জনৈক রিক্সা ড্রাইভার শাহজানকে নিয়ে সুনামগঞ্জ শহরের ট্রাফিক পয়েন্ট সংলগ্ন আলেয়া ফর্মেসীতে চলে আসতেন। প্রায়ই দেখা যেত জহুর সাহেব আসার সঙ্গে সঙ্গে আলফাত উদ্দিন মোক্তার সাব, গোলাম রব্বানী, আবু সায়িদ, আফতির মিয়া, সুখরঞ্জন রায়, মলয় বিকাশ চৌধুরী, আছদ্দর আলী মোক্তার, নূরুল ইসলাম, খলিলুর রহমান, আমির হোসেন রেজা, আয়ূব বখ্ত জগলুলসহ আরো অনেক রাজনীতিক নেতৃবৃন্দ সমবেত হয়ে বিক্ষোভ, সভা, সমাবেশ হতো। আমরা যারা আওয়ামী লীগের সহযোগি ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মী ছিলাম তাঁরা যোগ দিতাম নেতৃবৃন্দের সঙ্গে। এরশাদ পতনের পূর্বের বছর ১৯৮৯ সালে যখন সর্ব দলীয় সংগ্রাম পরিষদ আন্দোলন সংগ্রামে তুঙ্গে, তখন মিছিলে সর্ব প্রথমে আব্দুজ জহুর সাহেব পদচারনা সরব ছিল। তার ব্যক্তিত্বের কাছে থানা পুলিশদের অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি।
সেই সময়টাতে আমরা প্রায়ই সন্ধ্যাবেলা আব্দুজ জহুর সাহেবের ষোলঘর বাসভবনে যেতাম। মুড়ি এবং চায়ের আপ্যায়নে আন্দোলনের দিক নির্দেশনা দিতেন। আমাদের একটি আবেদন ছিল উনার কাছে, সুনামগঞ্জের আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের ছেলে- মেয়েরা ছাত্রলীগ করে না, বেশির ভাগ অংশই বাকশাল সমর্থিত জাতীয় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। উনি শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলে জবাব দিতেন এখনই ওরা বিচ্যুত তবে একদিন ভুল শোধরাবে। তখনকার সময়ে জাতীয় ছাত্রলীগ ছিল আমাদের প্রধান শত্রু যেহেতু ওরাও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কথা বলে। তখনকার সময় সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ সংসদ নির্বাচনে আয়ূব-দেবাশীষ পরিষদকে জয়লাভ করতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। যাতে এরশাদ পতনের পর ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জ সদর-বিশ্বম্ভরপুর আসনে আব্দুজ জহুর মহোদয়কে মনোনয়ন দেয়া হলে আমরা সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ উনার পক্ষে নির্বাচনে ঝাপিয়ে পড়ি। আব্দুজ জহুর মহোদয়ের নির্বাচনে গালা দিয়ে ওয়ালে চিকা মারতাম যাতে খরচ কম হয়। শহর থেকে পায়ে হেটে পলাশ, বাঘবের, মঙ্গলকাটা যেতাম। প্রায় প্রতিদিন আয়ূব বখ্ত জগলুল, মোবারক হোসেন, করুণাসিন্ধু বাবুল, আবু নাসের, আমির হোসেন রেজা, শাহীন, বাপ্টু, অমিতসহ অনেক ছাত্রনেতা যেতাম বনরুটি আর পানি খেয়ে দিন কাটাতাম। এটাই ছিল তখনকার সংস্কৃতি। প্রসঙ্গত মিছিল, মিটিং, নির্বাচনে অনেক আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগের নেতৃবৃন্দ, কর্মীবৃন্দ ছিলেন যাদের নাম এই মুহূর্তে স্মরণে আসছে না, সে জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। ভবিষ্যতে সমৃদ্ধ কোনো লেখায় যাদের নাম মনে হবে তা সংযোজন করার চেষ্টা করব।
রাজনীতিতে এই ক্ষণজন্মা পুরুষের জীবনী নিয়ে লেখা শেখ হবার নয়। লেখক: আমেরিকাপ্রবাসী সাংবাদিক ও গবেষক।