তাহিরপুর প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে মেমোশা আক্তার প্রমি (১১) নামের পঞ্চম শ্রেণির এক মেধাবী স্কুল ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে।
সোমবার বিকেলে নিজ বাড়ির শোবার ঘর থেকে ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় তার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়।
স্টুডেন্ট কাউন্সল নির্বাচনে পরাজিত হওয়ায় সহপাঠিদের অপমান সইতে না পেরে সে আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ করছে এলাকাবাসী।
এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
ওই ছাত্রীকে আত্মহত্যার প্ররোচনায় বাধ্য করা হয়েছে বলে তদন্ত সাপেক্ষে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিচারের আওতায় আনার জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রানালয় ও সরকারের প্রতি জোরালো দাবি তুলে ধরে শোকাহত এলাকাবাসী।
নিহতের পরিবার এবং সহপাঠিদের সুত্রে জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিপত্র অনুযায়ী সারা দেশে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একযোগে স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন সম্পন্ন করতে ২০ ফ্রেব্রুয়ারি ভোট গ্রহনের দিনক্ষণ নির্ধারিত করে দেয়া হলেও বাদাঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাষ্ট্রীয় শোক দিবসে (২৫ ফেব্রুয়ারি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেন।
তিনটি শ্রেণিতে ১৭ প্রার্থীর মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির মেধাবী স্কুল ছাত্রী মেমোশা আক্তার প্রার্থী হন।
তার প্রার্থীতার বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিভাবেকের কোনো সম্মতি নেয়নি বলে জানা গেছে।
২৫ ফেব্রুয়ারি বেলা ১২টায় ওই বিদ্যালয়ে ভোট গ্রহন শুরু হলে বিকেল ৪টার দিকে ঘোষিত ফলাফলে মেমোশা আক্তার প্রাপ্ত ভোটে তৃতীয় হয়ে পরাজিত হন।
এদিকে ভোটে পরাজিত হলে স্কুলেই কয়েকজন সহপাঠি মেমোশাকে ‘ফেইল ফেইল’ বলে অপমানসূচক নানা কথাবার্তা বললে কান্নারত অবস্থায় দ্রুত বাসায় ফিরে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয় মোমেশা।
দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর মেয়ে খাবার টেবিলে না ফেরায় শোবার ঘরের দরজা খুলে পরিবারের সদস্যরা দেখেন আদরের মেয়ে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলে আছে।
মোমেশার দেহ উদ্ধার করে দ্রুত বাদাঘাট বাজারে নিয়ে গেলে স্থানীয় চিকিৎসক ওইদিন সন্ধায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে শোকাহত মা বলেন, ‘পরাজয় আঁচ করতে পেরে সোমবার সকাল থেকেই মেয়ে আমার স্কুলে যেতে চায়নি। এরপর প্রধান শিক্ষক স্কুলের অপর তিন ছাত্রীকে বাসায় পাঠিয়ে আমার মেয়েকে চাপ দিয়ে স্কুলে ডেকে নিয়ে যান। ’
মঙ্গলবার উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামের বাড়িতে মোমেশার দাফন শেষে তার বাবা মোশাহিদ শাহ স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, ‘আমি কিংবা আমার স্ত্রীর কোন রকম সম্মতি ছাড়াই প্রধান শিক্ষক চাপ প্রয়োগ করে আমার মেয়েকে নির্বাচনে প্রার্থী হতে বাধ্য করেন। তারা নির্বাচনের নামে আমার মেধাবী কন্যাকে আত্মহত্যায় প্ররাচিত করলেন।
উপজেলার বাদাঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান হাবিবের নিকট ওই বিষযে জানতে চাইলে তিনি মঙ্গলবার রাতে গণমাধ্যমেকে বলেন, ‘ আমি আসলে বুঝতেই পারিনি নির্বাচনে হেরে গিয়ে এমন একটি কোমলমতি ছাত্রী আত্মহত্যা করে ফেলবে। ’
শিক্ষা অদিপ্তরের পরিপত্র উপেক্ষা করে নিজের মনগড়া তারিখে ভোট গ্রহনের তারিখ নির্ধারণবিষয়ে প্রশ্নে তিনি কোনোরকম উত্তর না দিয়ে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেন।
তাহিরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আকিকুর রেজা খাঁন বলেন, ‘ওই স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যা ও পুরো বিষয়টি আমি আমার উধ্বর্তন কতৃপক্ষকে অবহিত করেছি। ’