বিশেষ প্রতিনিধি ::
চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বরাবরই হাসিকে উপকারি হিসেবে চিহ্নিত করে রোগীদের হাসার তালিম দিয়ে থাকেন। হাসির রয়েছে হরেক গুণ। হৃদরোগসহ জটিল রোগ সারিয়ে দিতে পারে হাসি! পা থেকে মাথা পর্যন্ত শরীরের পুরো অঙ্গেই হাসির ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। এমনটাই বলছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। শুধু কি তাই? মনমরা মানুষের মুখ দেখতেও কেমন কেমন লাগে। তাই আমজনতা হাসি হাসি মুখের মুখের মানুষকেই ভালো ভাবেন। যদিও কারো হাসিতে সর্বনাশের বিষও লুকিয়ে থাকে।
বাংলাদেশের মানুষ প্রাকৃতিক ও রাজনৈতিক দুর্যোগের মধ্যেও ইদানিং নানা ক্ষেত্রে হাসি-খুশির খবর ঘনঘন পাচ্ছে। এই খুশির খবর আমাদের খারাপ খবরের মধ্যে আশার আলো নিয়ে দেখা দেয়। বিশ্বব্যাংকের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে নিজেদের অর্থায়নে পদ্মাসেতুর কার্যক্রম, জঙ্গি দমনে সরকারের সাহসী পদক্ষেপ এখন নিঃসন্দেহে ভালো খবর। তবে খারাপ খবরই বেশি জাতীয় জীবনে বহমান।
সারাদেশে এবার বিশ্ব হাসি দিবস পালনের বর্ণাঢ্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কমেডি ক্লাব নামের হাসির সংগঠন প্রথম বারের মতো বর্ণাঢ্য আয়োজনে বৈচিত্র্যময় অনুষ্ঠানের উদ্যোগের খবর দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। সুনামগঞ্জের হাসিবাজরাও পিছিয়ে নেই। সম্প্রতি সুনামগঞ্জে এক দঙ্গল কিশোর গঠন করেছে ‘সুনামগঞ্জ কমেডি ক্লাব’। তারা ইতোমধ্যে নানা কর্মসূচি পালন করে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। নানা খারাপ ও হতাশার খবরের মধ্যে বুদ হয়ে থাকা জেলার মানুষের ঠোঁটে এক চিলতে হাসি এনে দিতে কাজ করতে তারা। তীর্যক-তীরে জীবনের বাস্তবতাকে অফুরান আনন্দ এনে দিতে এই কিশোররা নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এ উপলক্ষে আগামী ৮ নভেম্বর এই হাসিবাজরা সুনামগঞ্জের সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের নিয়ে কমেডি শো করতে যাচ্ছে। পুরো অনুষ্ঠানই থাকবে হাসিতে ভরপুর। প্রাণ খুলে হাসতে আয়োজকরা সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
এবার হাসির কিছু উপকারিতা দেখুন। আর পড়ার পর প্রাণ খুলে হাসুন। জীবনকে উপভোগ করুন, বাঁচুন নিরোগ হয়ে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলছেন, দিনে একবার হাসলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া থেকে আপনাকে দূরে রাখবে। হাসি-খুশি থাকলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। রক্তপ্রবাহ বেড়ে যায় ভাইরাসরোধি কোষের সংখ্যা। ফলে মৌসুমী অসুখ-বিসুখ দূরে থাকে। মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী সংখ্যা হাসিতে কমে যায়। এতে অনেক ধরনের অসুখ কমে যায়। হাসিতে মানসিক ও আবেগজনিত উপকার হয়। যারা হাসি বিনিময় করে তাদের মধ্যে সহযোগিতামূলক মনোভাব ও বন্ধন তৈরি হয়। আপনার কর্মপরিবেশও সুন্দর হয় হাসির গুণে। আপনার মুখের ভাঁজপড়া কমিয়ে দিতে পারে হাসি। সবসময় হাসলে তারুণ্য আপনাকে ছেড়ে যাবে না। ডায়াবেটিস রোগীদের উপর এক গবেষণায় দেখা গেছে, হাসি তাদের রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমানোতে সহায়ক। হাসি ব্লাড প্রেসার কমাতেও সাহায্য করে। মন খুলে হাসতে পারলে অ্যাজমা, এমফাইসেমিয়া বা সাইনোসাইটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। শিশুকে বেশির ভাগ সময়ে হাসি-খুশির মধ্যে রাখতে পারলে তার লিভার ও ডাইজেস্টিভ সিস্টেমের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হয় না। হাসি মানুষের নেতিবাচক মনোভাব কমিয়ে ইতিবাচক চিন্তা করতে সাহায্য করে। হাসির মাধ্যমে মনের অবসাদ ও হতাশা দূর হয়। হাসি মানুষের শুধু শরীরের অসুখই নয়, মনের অসুখ সারাতেও কম যায় না। হাসলে স্ট্রেস হরমোন এর নিঃসরণ কমে যায়। ফলে উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক, পেটের পীড়া, ডায়াবেটিস প্রভৃতি মেটাবলিক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাময় সহজ হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মাত্র পনের সেকেন্ড হাসলে একজন মানুষের জীবনী শক্তি দুই দিন বৃদ্ধি পায়।
দিনে মাত্র পনের মিনিট হাসলে দুই ঘণ্টা ঘুমানোর উপকার হয়। ডা. মাইকেল মিলার, মারিল্যাল্ড বিশ্ববিদ্যালয় এক গবেষণায় বলেন, হাসি শরীরের রক্ত চলাচল পদ্ধতিতে যথাযথ রাখে এবং হার্টসহ স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। হাসি রোগ প্রতিরোধ হরমোন এন্ডরফিন ২৭% এবং এইচজিএইচ এন্টিএজিং হরমোন ৮৭% বৃদ্ধি করে। ফলে অকালে বুড়িয়ে যাওয়া, হাঁড়ক্ষয়, রোগপ্রতিরোধ-সহ দীর্ঘ জীবন সুস্থ থাকা যাবে। তাই আসুন প্রাণ খুলে হাসি। অফুরান আনন্দের সঙ্গে নিরোগ হয়ে বাঁচি।
সুনামগঞ্জ কমেডি ক্লাবের আহ্বায়ক ফাহমিদুর রহমান পান্না বলেন, সুনামগঞ্জ কমেডি ক্লাব হাসি নিয়ে এখন প্রতিনিয়ত মানুষের সামনে হাজির হবে। হাসি-আনন্দে আমরা জীবনকে উপভোগ করতে চাই। সবার মুখে হাসির ঝিলিক দেখতে চাই।