হাওর ডেস্ক::
প্রাক-বাজেট আলোচনায় সচিবরা সরকারি অপচয় হ্রাস করা থেকে ধরে পাহাড় হাওরে আবাসিক স্কুল প্রতিষ্ঠা, প্রকল্প পরিচালকদের গাড়ি সুবিধা না দেওয়াসহ নানা প্রস্তাব তুলে ধরলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় বসেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তখন সচিবরা তাঁদের প্রস্তাব তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান সভায় বলেন, হাওরাঞ্চলের জেলাগুলো বছরের বড় একটি সময় পানিতে ডুবে থাকে। স্কুলে যেতে পারে না বলে অনেক শিশু পড়ালেখাই ছেড়ে দেয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ঝরে পড়ার হার রোধ করতে হাওরাঞ্চলে আবাসিক স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন তিনি। একইভাবে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব নুরুল আমিন পাহাড়ে বসবাসরত শিক্ষার্থীদের শতভাগ স্কুলে আনতে আবাসিক স্কুলের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন।
পানিসম্পদ সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, যোগাযোগের ক্ষেত্রে নৌপথ সবচেয়ে নিরাপদ। কিন্তু নৌপথে পর্যাপ্ত বাজেট দেওয়া হয় না। নদী খননে পর্যাপ্ত বাজেট দেওয়া হলে সামনের দিনে এই পথে যাতায়াত বাড়বে বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের এক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আরেক মন্ত্রণালয়ের কাজের সমন্বয় নেই।
যে যার মতো করে কাজ করছে। ফলে সুষম উন্নয়ন হচ্ছে না। ’
পরিকল্পনাসচিব আরো বলেন, সরকারের অনেক প্রকল্প আছে, যেগুলো ঢাকাকেন্দ্রিক। সেসব প্রকল্পের সঙ্গে যানবাহনের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু সেসব প্রকল্পেও পিডির জন্য গাড়ি কেনা হয়। এটা সরকারি অর্থের অপচয়। এ ছাড়া এখন তো উপসচিব পর্যায়ের সব কর্মকর্তাকে সরকার ব্যক্তিগত গাড়ি সুবিধা দিয়েছে। এ জন্য আগামী বাজেটে পিডিদের জন্য সব ধরনের প্রকল্প থেকে গাড়ি সুবিধা বাতিল করা উচিত। একই সঙ্গে উন্নয়নে সমন্বয়হীনতা দূর করাও জরুরি।
পরিকল্পনাসচিব নুরুল আমিন বলেন, এখন উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সরকারিভাবে গাড়ি দেওয়া হচ্ছে। গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও আলাদা টাকা দেওয়া হচ্ছে। তাহলে প্রকল্প পরিচালকদের কেন আলাদাভাবে গাড়ি দেওয়া হয়—এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি। আগামী বাজেট থেকে পিডিদের গাড়ি বরাদ্দ বাতিলের সুপারিশ করেন তিনি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘আমরা দুর্নীতি নিয়ে সবাই কথা বলি। কিন্তু সরকারের বিভিন্ন খাতের অপচয় নিয়ে কথা বলি না। দেখা যায়, ভালো ভালো গাড়ি অকেজো হয়ে পড়ে আছে, কিন্তু ব্যবহার করা হচ্ছে না। আমরা দক্ষ মানুষ গড়তে চাই। অথচ প্রশিক্ষণ খাতে তেমন বরাদ্দ চাই না। ’ আগামী বাজেটে প্রশিক্ষণ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব দেন তিনি।
স্থানীয় সরকার সচিব গোলাম ফারুক বলেন, ‘প্রতিবছর বাজেটেই বলা হয়, নতুন করদাতা বাড়ানো হবে। আমার মনে হয়, মাঠপর্যায়ে নতুন করদাতা শনাক্ত করতে স্থানীয় সরকারকে কাজে লাগানো উচিত। প্রতি পরিবারে চাকরির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হলে স্থানীয় সরকারকে অবশ্যই শক্তিশালী করতে হবে। ’
সাবেক অর্থসচিব ও সিএজি মুসলিম চৌধুরী বলেন, প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়নে বিস্তর ফারাক রয়েছে। একটি প্রকল্প বেশ কয়েকবার সংশোধন করার পরও প্রকল্পের কাজ শেষ হয় না। ফের সংশোধন করতে হয়। এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া চাই। বিদ্যমান অবস্থার কারণে প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য অর্জিত হচ্ছে না। এ ছাড়া রেলসচিব রেলের উন্নয়নে আরো বেশি টাকা দেওয়ার দাবি তোলেন।
সবার বক্তব্য শোনার পর অর্থমন্ত্রী সভা শেষে সাংবাদিকদের বলেন, বাজেট কারো ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে না। সচিবদের কাছ থেকে যেসব প্রস্তাব পাওয়া গেছে, তা বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা থাকবে। তিনি বলেন, আগামী বাজেটে উন্নয়ন প্রকল্পকে দুই ভাগে ভাগ করা হবে। জেলা বাজেটের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, যেখানে আয় হবে সেখানে ব্যয়ও থাকবে। জেলায় যদি বাজেট দেওয়া হয় সেখান থেকে আয়ও আসতে হবে।