শ্যামারচরে বীরাঙ্গনাদের এলাকাছাড়া করতে রাজাকার স্বজনদের বিক্ষোভ
স্টাফ রিপোর্টার::
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার সদ্য খেতাবপ্রাপ্ত বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে তাদের এলাকা ছাড়ার হুমকি দিয়েছে রাজাকার সন্তানেরা। শনিবার রাতে স্থানীয় শ্যামারচর বাজারে বিক্ষোভ মিছিল শেষে তারা সমাবেশ করে বীরাঙ্গনাদের ‘নষ্টা’ আখ্যায়িত করে আপত্তিকর স্লোগানও দেয়। রাজাকার সন্তানদের ন্যাক্কারজনক এই ঘটনার প্রতিবাদ করায় যোদ্ধাপরাধ মামলার সাক্ষীর ছেলেকেও মারধর করেছে তারা। এ ঘটনায় বীরাঙ্গনার পরিবারের স্বজনেরা আতঙ্কে আছেন।
জানা গেছে সম্প্রতি যোদ্ধাপরাধ মামলায় এই এলাকার ৬জন যোদ্ধাপরাধীকে গ্রেপ্তার করে ট্রাইব্যুনাল। স্থানীয় দৌলতপুর গ্রামের শীর্ষ দালাল প্রয়াত আব্দুল খালেকের পুত্র জুবের মনিরসহ ৬জনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠানোর পর তাদের সমর্থকরা ক্ষুব্দ হয়ে ওঠে। এই এলাকার অর্থ বিত্ত ও জনবলে প্রবল প্রতাপশালী জুনেদ মনিরে স্বজনেরা এ ঘটনায় এলাকার সদ্য বীরাঙ্গনা স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নারী পিয়ারা বেগম, জাহেরা বেগম, মুক্তাবান বিবিসহ তাদের স্বজনদের দায়ি করে আসছে। এই বীরাঙ্গনা ও তাদের স্বজনরা ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দলের কাছে একাত্তরে তাদের ও তাদের শহিদ স্বজনদের উপর নির্যাতনের রোমহর্ষক বর্ণনা দেন। এ কারণে ক্ষুব্দ হয় রাজাকারের সন্তানেরা। তাছাড়া জুনেদ মনিরের স্বজনদের অনেকেই ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় স্থানীয় কিছু মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের হাত করেও তারা বীরাঙ্গনা ও তাদের পরিবারদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে। সম্প্রতি সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য শামীমা শাহরিয়ার ও সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা বীরাঙ্গনাদের গ্রামে গিয়ে তাদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে এসেছেন। কেউ তাদের হুমকি ধমকি দিলে ব্যবস্থা নেওয়ারও আশ্বাস দেন তারা। এসব কারণেও দালাল ও রাজাকারদের সন্তানরা তাদের উপর ক্ষুব্দ হয়।
এর জের ধরে একতাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত আব্দুল হেকিম, যোদ্ধাপরাধ মামলায় হাজতবাসরত রাজাকার জলিল মিয়ার ছেলে সুয়েব মিয়া, তার ভাতিজা শফিকুল ইসলাম, সবুজ, জব্বার, রাজাকার শুকুর মিয়ার ছেলে জালাল উদ্দিন ও তার ছেলে সুমন, যোদ্ধাপরাধ মামলায় হাজতে থাকা তোতা মিয়ার স্বজনেরা শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শ্যমারচর বাজারে বীরাঙ্গনাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করে বীরাঙ্গনা ও তাদের স্বজনদের এলাকা ছাড়ার হুমকি দেয়। এছাড়াও স্বাধীনতা বিরোধী হিসেবে পরিচিত আরেক তোতা মিয়ার ছেলে গোলাপসহ ওই চক্র বিক্ষোভের আগে স্কুলে বৈঠক করে। পরে মিছিলে তারা আপত্তিকর স্লোগান দেয় বীরাঙ্গনাদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় যুদ্ধাপরাধ মামলার সাক্ষী নূরুল ইসলামের ছেলে মাছুম মিয়া প্রতিবাদ করলে তাকে মারধর করে তারা। রাজাকার সন্তানেরা মিছিলের আগে শ্যমারচর হাইস্কুলে বৈঠক করে বীরাঙ্গনাদের চরিত্র হনন করে বক্তব্য দেয়।
গোলাপ মিয়া বলেন, আমি কোন মিছিল ও সভায় ছিলাম না। আমি বিএনপি করি। মিছিল ও সভা করেছে আওয়ামী লীগের স্থানীয় কিছু নেতারা। তবে তারা যখন স্কুলের মাঠে বৈঠক করে তখন আমি স্কুলের সভাপতি হিসেবে স্কুলে ছিলাম।
দিরাই থানার ওসি মোস্তফা কামাল বলেন, বীরাঙ্গনাদের বিরুদ্ধে মিছিলে বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের দুই পক্ষের দ্বন্দের জেরে মিছিল ও সভা হয়েছে বলে শুনেছি। কেউ বীরাঙ্গনাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটালে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।