দৈনিক সুনামকণ্ঠে প্রকাশ, ‘বীরাঙ্গনা পিয়ারাকে নলকূপ দিলেন এমপি শামীমা’। ঘটনাটি রীতিমতো বিস্ময়কর। সচরাচর এমনটি হতে দেখা যায় না। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সত্যিকার অর্থেই এমন উদাহরণ বিরল। বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্য এমনটি করতে পারেন কল্পনাও করা যায় না। তাই অবাক না হয়ে পারা যায় না।
আমরা জানি, বাংলাদেশে একজন সংসদ সদস্য অনেক কীছুই করতে পারেন, এমনকি ইচ্ছে করলেই হয়ে উঠতে পারেন মাফিয়ার মতো ভীষণ ভীষণ শক্তিধর কেউ কিংবা যাকে বলে গডফাদার ইত্যাদি। ক্ষেত্র বিশেষে সংসদ সদস্যের স্বার্থান্বেষী ভূমিকার জন্য পুরো নির্বাচনী এলাকাটিই হয়তো হয়ে পড়েছে দখল-বেদখলের একটা মূর্তিমান কুরুক্ষেত্র। বললে খারাপ শোনাবে যে, এমনটি যে হয়নি এমন তো নয়, নাম ধরে উদাহরণ হাজির করা শুভনীয় নয় বলে সে চেষ্টা না করাই উত্তম। এমন সংসদ সদস্য তো আমরা দেখেছি, যিনি লক্ষ-কোটি টাকার সুবিধা বাগিয়ে নিয়েছেন নিজের জন্য নামে কিংবা বেনামে এবং স্বজনকে দিয়েছেন যাবতীয় সুবিধা। সংসদ সদস্যের নিজের বাড়ি-গাড়ি প্রভৃতি নানান সম্পদ বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মাপে মধ্যআয়ের দেশে পরিণত হলেও প্রতিবেশী গরিব আরও গরিব হয়েছে। এই গরিবের দিকে সংসদ সদস্য কোনও দিন আক্ষরিক অর্থেই তাকিয়েও দেখেননি। তিনি হয়তো তখন স্থানীয় বাজারে তাঁর নিজের নামে একটি বড়সড় বহুতলা বিশিষ্ট মার্কেট বানানোয় ব্যস্ত ছিলেন। তাঁর পূর্বসূরি বা উত্তরসূরিদের ভূমিকাও ছিল অনেকটা এমনই। গরিবের নাম ধরে তাঁরা ধনীদের রাজনীতি করছেন। গরিব বীরাঙ্গনা পিয়ারা বেগমের খোঁজখবর নেওয়ার কোনও অবকাশ মেলেনি, কিন্তু ধনী যুদ্ধাপরাধী রাজাকারকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিক পৃষ্ঠপোষকতা দিতে কসুর করেননি এবং বাস্তবে এলাকায় অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, চিহ্নিত রাজকাররাই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নীতিনির্ধারক পদপদবী অধিকার করে বসে আছে এবং প্রকারান্তরে এলাকার সার্বিক নিয়ন্ত্রণে মুক্তিযোদ্ধারা পরাস্ত হয়ে কেউ কেউ দেশছাড়া পর্যন্ত হয়েছেন।
অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষ একজন সংসদ সদস্যের চরিত্রবৈশিষ্ট্য উপরোক্ত বর্ণনামতোই হতে পারে ভাবতেই সাধারণত অভ্যস্ত। তাঁরা ভাবেন এমপি তো এমনই, গরিব বীরাঙ্গনার খোঁজখবর তো তাঁর রাখার কোনও কথা নয়। কিন্তু বোধ করি এই প্রথম কোনও সংসদ সদস্য সাধারণ্যে প্রতিষ্ঠিত সংসদ সদস্যের ভাবমূর্তি অনুসারে করণীয় কাজের বিপরীত একটি কাজ করে দেখিয়ে দিলেন যে, এইটিই অর্থাৎ গরিব বীরাঙ্গনার বাড়িতে গিয়ে তাঁর খোঁজখবর নেওয়া ও তাঁর জন্য কীছু করাই প্রকৃতপ্রস্তাবে একজন সংসদ সদস্যের করণীয় কাজ এবং এই করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দাঁড়িয়ে রাজনীতির ভাবাদর্শকে সমুন্নত করা।
কিন্তু সকল কথার বড় কথা হলো, আজ থেকে ৪৭ বছর আগে যে কাজটি করার কথা ছিল সেটি করে দেখিয়েছেন শামীম শাহরিয়ার। তাঁর পূর্বসূরি সংসদ সদস্যরা আসলেই কী করেছেন? তাঁরা কি প্রকারান্তরে মুক্তিযুদ্ধের চিন্তাচেতনা থেকে বিচ্যুত ছিলেন না? তাঁরা কেউ কেউ কি একাত্তরের পর পর রাজাকারকে রক্ষা করেননি এবং সে-ধারা অব্যাহত রাখেননি? এখনও এমন আওয়ামী লীগার তো আছেন যিনি, রাজাকারকে আওয়ামী লীগের পতাকাতলে স্থান করে দিয়ে রাজনীতিক সুবিধা গ্রহণে তাকে উপযুক্ত করে তোলছেন। আমরা মনে করি, রাজনীতিকদের রাজাকার পৃষ্ঠপোষকতার বিপরীতে দাঁড়িয়ে শামীমা শাহরিয়ার জাতিগত কর্তব্যচ্যুতির কলঙ্কমোচন করেছেন। তাঁকে আন্তরিক ধন্যবাদ।