বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের হাওরে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে না পড়লেও বিআর-২৮ ধানে চিটা নিয়ে শঙ্কিত কৃষক। কৃষকরা জানিয়েছেন এই ধানে চিটার কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কৃষি বিভাগও ধানে চিটার কথা স্বীকার করলেও চিটার পরিমাণ নিয়ে কৃষকদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলছে। কৃষকদের মতে চিটার কারণে ২৫-৩০ ভাগ ফসলের ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু কৃষি বিভাগের মতে ৫-৭ ভাগের বেশি ক্ষতি হয়নি।
সুনামগঞ্জের হাওরে প্রায় আড়াই লাখ চাষী পরিবার বোরো আবাদের সঙ্গে জড়িত। এবার আবাদকৃত মোট ধানের তিন ভাগের দুই ভাগই বিআর-২৮ চাষ করেছেন কৃষক। কৃষি বিভাগের মতে ৮৩ হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে এই ধান। গত এক দশক ধরে তুলনামূলক আগাম ফলন পাওয়া যায় কৃষি বিভাগের এমন প্রলোভিত প্রচারণায় এই ধানই চাষ করছেন কৃষকরা। ২০১৮ সালে এই ধান চাষ করে কৃষকরা ব্লাস্ট রোগের কারণে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হন। এবারও চিটা দেখা দিয়েছে। সকল হাওরেই কৃষকের সকল জমিতে চিটার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তাই আগাম ফলন পেতে গিয়ে বারবার এই ধান চাষ করে ক্ষতির মুখে পড়ছেন হাওরের কৃষক। এবারও এই ধানে চিটা রয়েছে। তাই এ নিয়ে চিন্তিত তারা। এতে ফলনে প্রভাব পড়ার পাশাপাশি কৃষকরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে জানিয়েছেন।
কৃষকরা আরো জানান, এই ধানে চিটার কারণে প্রতি শতকে ১২-১৫ মন ধান পাবেন। তাদের মতে এই পরিমাণ জমি চাষ করতে এবং ধান গোলায় তোলা পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। চিটার কারণে অনেক কৃষকই জানিয়েছেন তারা উৎপাদন মূল্য পাবেননা। এদিকে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে যারা আগাম রোপন করেছিল তারাই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। তাছাড়া কোল্ড ইনজুরি ও কম তাপমাত্রার কারণেও এই ধানে চিটা হয়েছে। তবে কৃষকরা অভিযোগ করেছেন ধান আসার সময়ে কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের হাওরে দেখা মিলেনি। মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সঙ্গে তাদের কোন সম্পর্ক না থাকায় তাৎক্ষণিক কোন পরামর্শ পাননি তারা। যে কারণে তারা আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
দেখার হাওরের কিষাণী গোবিন্দপুর গ্রামের রইমুল নেছা বলেন, বিআর ২৮ ধানের জাত ধান চাষ খইরা ফুরাই মাইর খাইছি। আগা তনি গুড়ি পর্যন্ত জ্বইল্যা গেছে। জ্বালাইল জমিন খাট্টুয়ারাও খাটছেনা।
ইচ্ছারচর গ্রামের কৃষক সাইকুল ইসলাম বলেন, আমার জমিনের হকল ধান ছাপছফা জ্বলিগেছে। ওষুধ দিয়াও কাজ অয়নি। ইবার পুরা মাইর। খরচই উঠতোনা। তিনি জানান, তার মতো এই এলাকার অন্যান্য কৃষকরাও বিআর-২৮ ধান চাষ করে চিটায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. বশির উদ্দিন সরকার বলেন, বিআর-২৮ ধান সবচেয়ে বেশি চাষ হয় হাওরে। আগাম ফলনের আশায় এই ধান চাষ করেন কৃষক। তবে এবার কিছু ধানে চিটা হয়েছে। কোল্ড ইনজুরি ও মওসুমে তাপমাত্রা কম থাকার কারণে এই সমস্যা হয়েছে। তাছাড়া অন্যান্য এলাকায় মওসুমে বৃষ্টিপাত হলেও সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ধানে চিটা দেখা দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, আগাম ফলনের আশায় যেসব কৃষক মওসুম শুরুর ১৫দিন আগে বিআর ২৮ চাষ করেছেন তাদের জমিতেই চিটা বেশি।