দিরাই প্রতিনিধি::
দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা আনসার ভিডিপি অফিস। অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন অফিসের দুই কর্তা। এ যেন দুর্নীতির মহোৎসব। এহেন কার্যক্রম নেই যেখানে দুর্নীতি নেই। ভাতা উত্তোলন, প্লাটুন গঠন, নিবাচনী দায়িত্ব পালনে আনসার নিয়োগ, গ্রুপ জমাদান, সরকারি বিভিন্ন প্রশিক্ষণসহ সব কিছুতেই টাকা দিতে হয় অফিস কর্তাদের। টাকা না দিলে আনসার ভিডিপিতে কর্মরত দরিদ্র মানুষগুলোকে হুমকি-ধমকি ,চাকুরী থেকে বাদ দেয়াসহ আটকে দেয়া হয় সম্মানী ভাতাও। আর এসকল কাজ সংঘটিত হচ্ছে সংশ্লিষ্ট অফিসের দুই গুণধর কর্মকর্তার এক অপরের যোগসাজসে। এরা হলো উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা আব্দুল আলী এবং টি আই ডালিম মিয়া।
এ ব্যপারে জেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা ও দিরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন উপজেলা আনসার ভিডিপি অফিসের ৮জন দলনেত্রী। দাখিলকৃত অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতির এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ পায়। অভিযোগে আনসার দলনেত্রীগণ উল্লেখ করেন, উপজেলায় সম্মানী ভাতাভোগী ৩১ জন সদস্য রয়েছে। প্রতিমাসে সরকার কর্তৃক আড়াই হাজার টাকা ভাতা প্রাপ্ত হন তারা। প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর ভাতা উত্তোলনকালে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও টিআইকে ২৫শ থেকে তিন হাজার টাকা দিতে হয়। অন্যথায় ভাতা আটকে দেয়ার ও চাকুরীচ্যুৎ করার হুমকি দেয়। নির্বাচনকালীন সময়ে আনসারে লোক নিয়োগের সময় জনপ্রতি ১হাজার করে টাকা দিতে হয় কর্মকর্তাদের। যারা টাকা দিতে পারেনা তাদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ১২জন আনসার সদস্য নিয়োগের কথা থাকলেও ৫-৭জন আনসার নিয়োগ দিয়ে পরবর্তীতে ১২জন নিয়োগ দেখিয়ে বিল উত্তোলন করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন ঐ দুই কর্মকর্তা। দুয়েকজন দলনেত্রীকে হাত করে বিভিন্ন গ্রামে প্রশিক্ষনের নাম করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা। এছাড়াও প্লাটুন গঠন, গ্রুপ জমাদানকালেও কর্মকর্তাদেও চাহিদা মোতাবেক ঘুষ দিতে হয়। আনসার ভিডিপি সদস্যদের সরকারিভাবে সেলাই, কম্পিউটার, ড্রাইভিং প্রশিক্ষণের প্রশিক্ষার্থী এই দুই কর্মকর্তা উৎকোচের বিনিময়ে চুড়ান্ত করেন। টাকা না দিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পাওয়া যায় না। এব্যাপারে বক্তব্য নেয়ার জন্য দুইদিন আনসার ভিডিপি অফিসে গেলেও কর্মকর্তা আবদুল আলীকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে তিনি জানান, দলনেত্রীরা কোন কাজ করেনা। কাজ না করলে তাদের রেখে লাভ কি? তাদেরকে অফিসের কাজের তাগিদ দেয়াতে তারা এখন টালবাহানা করে মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করেছে। আর কিছু জানার থাকলে টিআই ডালিম মিয়ার কাছ থেকে জেনে নেন। টিআই ডালিম মিয়া বলেন, বিভিন্ন দলনেত্রী এলাকায় থাকেননা, তারা মাসিক প্রতিবেদন ঠিকমত জমা দেননা। প্রতিবেদন জমা দিলে আমরা যাচাই-বাচাই করে জেলা অফিসে প্রেরণ করলে সেখান থেকে তাদের ভাতা স্ব স্ব একাউন্টে জমা হয়। বিগত দুই বছরে তাড়ল ও ভাটিপাড়া ইউনিয়নে ৬৪জন করে ১শ ২৮জনকে প্রশিক্ষন ও ভাতা প্রদান করা হয়েছে। প্রশিক্ষনার্থীদের তালিকা চাইলে তিনি বলেন, এই তালিকা আমাদের অফিসে নেই, আমরা তালিকা জেলা অফিসে জমা দিয়ে দিয়েছি।
অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (দায়িত্বপ্রাপ্ত) বিশ^জিৎ দেব বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রমানিত হলে ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ করা হবে।