হাওর ডেস্ক::
হাওর এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানির জন্য সরকার ৫০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। তিনি বলেন, আমরা বাড়ি বাড়ি টিউবওয়েল দেবো, ল্যাট্রিন দেবো। হাওর এলাকায় আরও বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হবে। হাওর এলাকার যত পুল কালভার্ট নির্মাণ বাকি রয়েছে সব আমরা বানিয়ে দেব। বাচ্চাদের স্কুলগুলো আরও সুন্দর করে করবো। হাওর এলাকার গরিব মানুষের জন্য আমরা আরও বেশি করে ঘর বানাবো। সুনামগঞ্জবাসীর জন্য এমনও প্রকল্প করে যাব, আমার মৃত্যুর পরও পরবর্তী প্রজন্ম সুফল ভোগ করবে।
শুক্রবার সকালে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার শান্তিগঞ্জ এফআইভিডিবি মিলনায়তনে যার জমি আছে ঘর নেই, তার নিজ জমিতে নির্মিত ঘরের চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এমএ মান্নান এমপি আরো বলেন, আমি চাকরি জীবনে ইউএনও-ডিসি ও সচিব ছিলাম। কিন্তু এরকম প্রকল্প বা কাজ আগে কখনো দেখিনি। এগুলো সম্ভব হচ্ছে শুধু বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে বলে এবং তার পাশাপাশি এই সময়ে সঠিক নেতৃত্বের কারণে আজ বাংলাদেশে এখন অনেক এগিয়ে গেছে। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ এখন একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই দেশের কোন মানুষ গৃহহীন থাকবে না। সবার জন্য বাসস্থান নিশ্চিত করা হবে।
সরকারের প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি ও সময় মতো প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়া সঙ্গে মন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, অনেক প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ের আগে শেষ হয়। আবার কিছু প্রকল্প আছে যেগুলো দেরিতে শেষ হয়। এর কারণও আছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও এরকম হয়, খালি বাংলাদেশে নয়। এসব কারণ আমরা অনেক সময় জানি না। নানা কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায় না। এর মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ অন্যতম। জমির মালিকানা পেতে অনেক সময় লাগে। কোর্ট থেকে যখন সমনের কাগজ আসে, তখনও আমাদের অফিসাররা কাজ করতে পারেন না। এজন্য সময় লাগে। তবে বাংলাদেশের বেশিরভাগ প্রকল্প সময়মতোই শেষ হয়।
মন্ত্রী আরো বলেন, সারাদেশে উন্নয়ন কর্মকা-ের কাজের গতি আগের তুলনায় অনেক অনেক গুণ বেড়েছে। সামনে কাজের গতি আরও বাড়বে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরকম আরও হাজার হাজার তৈরি করে দেবেন।
মন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, এক সময় অফিসারদের কাছে সাধারণ মানুষজন যেতে পারতেন না। কোর্ট-কাচারিতে আমাদের বাপ-দাদারা দিনের পর দিন অপেক্ষা করেছেন সাহেবদের জন্য। অনেকভাবেই সেই সময় অবজ্ঞা করা হত সাধারণ মানুষদের। আমরা প্রায় সময় শুনতাম চৈত্র-বৈশাখ মাস এলে রাতের বেলা মাইকে বলা হচ্ছে এই হাওর তলিয়ে যাচ্ছে ঐ হাওরের বাঁধ ভেঙে গেছে। তখন আমাদের বাপ-চাচারা উড়া কোদাল নিয়ে যার যা আছে সবকিছু নিয়ে বাঁধ রক্ষার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তেন। আর এখন দিন-রাত আমাদের ইউএনও ডিসি সাহেবরা হাওরের বাঁধে পড়ে থাকেন, আমাদের ফসল পাহারা দেন; যাতে করে আমাদের ফসল রক্ষা হয় সে দিকে খেয়াল রাখেন।
অনুষ্ঠানে উপজেলার গৃহহীন ১৪৫টি পরিবারের মাঝে ঘরের চাবি হস্তান্তর করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি।
তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সুনামগঞ্জের জন্য ৫শত কোটি টাকার বিশেষ উন্নয়ন পরিকল্পনা আমরা হাতে নিয়েছি। এই টাকাগুলো এই অঞ্চলে শিক্ষা, স্যানিটেশন ও বিশুদ্ধ পানির জন্য ব্যয় করা হবে। সেই সাথে সুনামগঞ্জে ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করা হবে। যার জন্য এরই মধ্যে আমরা অফিসিয়াল কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে গেছি। হয়তো আগামী দুই-এক বছরের মধ্যে সেটার বাস্তবায়ন কাজ শুরু হবে। সেই সাথে ১১শত কোটি টাকা ব্যয়ে সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজ নির্মাণের কাজ চলছে।
মন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, কত উন্নয়নের কথা বলবো। শুধু উন্নয়ন আর উন্নয়ন। ছাতক থেকে সুনামগঞ্জে রেল লাইনের কাজও ২-১ বছরের মধ্যে শুরু হবে। এরপরই সুনামগঞ্জ-নেত্রকোণা রেল লাইন নির্মাণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তখন রেল লাইনেই দেশের মানুষ সমগ্র বাংলাদেশ ঘুরতে পারবেন।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সফি উল্লাহ’র সভাপতিত্বে ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেন ভূঁইয়া’র পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সফিউল আলম, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফারুক আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক নুর হোসেন, শিমুলবাক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জিতু।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি হাজী তহুর আলী, সাধারণ স¤পাদক আতাউর রহমান, সাংগঠনিক স¤পাদক আব্দুল বাছিত সুজন, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান দোলন রানী তালুকদার, জয়কলস ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ মিয়া, পাথারিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর রশিদ আমিন, পশ্চিম বীরগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম, পূর্ব বীরগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান নুর কালাম, পশ্চিম পাগলা ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হক, দরগাপাশা ইউপি চেয়ারম্যান মনির উদ্দিন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন দক্ষিণ সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী জমিরুল ইসলাম মমতাজ। গীতাপাঠ করেন রথপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশিষ চক্রবর্তী।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের জয়কলস গ্রামের গৃহহীন রবীন্দ্র বিশ্বাসের নির্মিত ঘর আনুষ্ঠানিকভাবে ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি।
এছাড়া ওইদিন সকাল ১১টায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের বাস্তবায়নে ২ কোটি ২১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের উদ্বোধন করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এলজিইডি’র নির্ব্বাহী প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সফি উল্লাহ, উপজেলা প্রকৌশলী শামীম হাসান, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার আতাউর রহমান প্রমুখ।