হাওর ডেস্ক::
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ‘অতীত ও নানা বিষয়ের সঙ্গে আপস করে করে আমরা এগোচ্ছি। এসব বিষয় মোকাবিলা করে সন্তর্পণে এগিয়ে যাওয়াই আমাদের লক্ষ্য৷ আমরা কোনো বিপ্লবী সরকার নই, একটি আপসকামী গণতান্ত্রিক সরকার। সবাইকে সঙ্গে নিয়েই আমরা এগিয়ে যেতে চাই৷’
আজ শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে এক প্রাক্-বাজেট সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। রিডিং ক্লাব ট্রাস্টের সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসি ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উচ্চশিক্ষায় বাজেট’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে৷
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘গত ৯-১০ বছরে যেটুকু উন্নয়ন আমরা করতে পেরেছি, তাকে টিকিয়ে রাখার জন্য আমাদের নজর রাখতে হবে, এখানে কোনো হঠকারিতা, বিপ্লব বা অ্যাডভেঞ্চারের সুযোগ নেই। আমরা অস্ত্রধারী ফিদেল কাস্ত্রো, মাও সে তুং বা হোচি মিন কোনোটাই নই৷ সামাজিক বিবর্তনের বাইরে আমাদের সামনে এগোনোর আর কোনো পথ নেই৷’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘তরুণ সমাজ প্রতিবাদ করবে, প্রশ্ন করবে৷ তরুণেরা যদি প্রশ্ন করে, আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে বলে, মিস্টার মান্নান, এটা এভাবে ঠিক হচ্ছে না, ওভাবে করলে ভালো হয়, আমরা অবশ্যই তাদের কথা শুনব৷ আমরা চাই, শেখ হাসিনা চান, তরুণ সমাজ এসব প্রশ্ন করুক৷ তরুণদের প্রতি আহ্বান, তোমরা বেরিয়ে এসে প্রশ্ন কর, তোমাদের মতো করে বিশ্লেষণ কর৷’
বাজেট নিয়ে এত বহুমাত্রিক আলোচনা আর কোনো দেশে হয় না মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, এটি একটি চমৎকার ও আনন্দের বিষয়৷
অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান। একটি সংস্থার করা র্যাঙ্কিংয়ে এশিয়ার ৪১৭ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের না থাকা নিয়ে চলমান বিতর্কের জবাবে তিনি বলেন, ‘বলুন তো, একমাত্র সমাবর্তন বক্তৃতা ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোনো আয়োজনে, কোন গবেষণাকর্মে বাইরের দু–একজন মানুষকে আমন্ত্রণ করতে পারে? সমাবর্তন বক্তা আনার সময়ও আমাদের খুঁজতে হয় কোন বক্তা সাধারণত বারগেইনিং বা প্যাকেজে যাবেন না, অথচ মূল্যবোধ অত্যন্ত উঁচু ও খুব নামীদামি মানুষ৷ শুধু মুখে বলে গুণগত মান, র্যাঙ্কিং—এগুলো কল্পনা করা যায় না৷ এ ধরনের উন্নয়নে সামগ্রিকতার একটি বিষয় আছে৷ আমাদের এখন ভাবতে হবে, বিদেশি কতজন ছাত্রকে আমরা বৃত্তি দিতে পারব৷’
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সম্মানীয় অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসির পরিচালক অধ্যাপক এম আবু ইউসুফ৷
প্রবন্ধে তাঁরা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বাজেট বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর কোন খাতে কতটা প্রয়োজন, তা বিবেচনা না করে গতানুগতিক একটি হারে বরাদ্দ দেওয়া হয়৷ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুণগত মান ও কাঠামোগত ঐতিহ্য বজায় রেখে ক্রমাগত উন্নতি করার জন্য এই বরাদ্দ যথেষ্ট নয়৷ উচ্চশিক্ষার বাজেটকে পৃথকভাবে গুরুত্ব দিতে হবে, গবেষণা খাতে বাজেট বরাদ্দ ও অবকাঠামোগত বিনিয়োগ বাড়াতে হবে৷ সেই সঙ্গে গুণগত মান নিশ্চিতে টেকসই পদক্ষেপ নিতে হবে।’
প্রবন্ধে আরও বলা হয়, দেশে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেশি৷ এর সমাধানে একদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের পাঠ্যক্রম ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনাকে জ্ঞানভিত্তিক করার পাশাপাশি কর্মমুখী করে তুলতে হবে, অন্যদিকে কারিগরি ও প্রযুক্তি শিক্ষার মান ও আওতা বাড়াতে হবে৷ বেসরকারি খাতকে সহায়ক ভূমিকায় সংযুক্ত করতে হবে৷
বাজেট বাস্তবায়নের পথে দুর্নীতি, দক্ষ জনশক্তির ঘাটতি ও দুর্বল ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করে দুই প্রবন্ধকার বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক ও রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার সমন্বয়ে বাজেট পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে৷ এ ছাড়া, শিক্ষা বাজেট আলাদাভাবে প্রণয়নের দাবি জানান আতিউর রহমান৷
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান প্রমুখ বক্তব্য দেন৷
( দৈনিক প্রথম আলো)