ব্যতিক্রম ব্যতীত দেশে ইতিবাচক কোনও ঘটনাই পারতপক্ষে ঘটে না। এটাই স্বাভাবিক। কারণ দেশটার অর্থনীতিকে এভাবেই সাজিয়ে নেয়া হয়েছে। এখানে দেশ-সমাজ-সাধারণের পক্ষে কল্যাণকর কোনও ঘটনাই ঘটার কথা নয়। প্রচলিত সমাজব্যবস্থাকে বদলে দিতে চেয়েছিলেন বলেই প্রতিক্রিয়াশীলরা বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা করেছিল এবং ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার অভিপ্রায়ে শেষ পর্যন্ত তাঁকে হত্যা করেছিল। এখন বঙ্গবন্ধুতনয়া দেশান্তপ্রাণ শেখ হাসিনা দেশটাকে উন্নত করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। কাজ এগিয়ে চলেছে। দেশ এগিয়ে চলছে। এই সুবাদে এখন মাঝেমধ্যে কীছু কীছু ইতিবাচক ঘটনা এখানে সেখানে সংঘটিত হচ্ছে। পরিকল্পনামন্ত্রী পরিবহণ মালিকদের অন্যায় আবদার বন্ধ করতে প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগের কথা বলছেন। অতীতে কোনও সরকারের শাসনপর্বে এমনটা হয়নি। গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠে কতিপয় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যেগুলোকে প্রয়োজনে ‘অকারণে সড়ক অবরোধ ডাকার বিরুদ্ধে’ সরকারি শক্তি প্রয়োগের কথা বলার মতো ইতিবাচকতাকে প্রকটিত করে। যেমন : একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়মিত কর্মস্থলে অনুপস্থিত এক উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রককে কারণদর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন, রূপগঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রে বালিশ কেনা নিয়ে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি চাইলেন এমপি মিসবাহ, অথবা সরকারি চাকুরেদের কী বলে সম্বোধন করতে হবে জানতে চেয়ে আপিল করলেন সালেহিন চৌধুরী শুভ। এ রকম কীছু কীছু ইতিবাচক ঘটনার সংবাদ পরিবেশিত হয় আজকাল পত্রপত্রিকায়। যেগুলো অবশ্যই সমাজপ্রগতির পক্ষে ভালো সংবাদ। কিন্তু তার বিপরীতে খারাপ সংবাদ পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে না এমন নয়, বরং খারাপ সংবাদই বেশি ছাপা হচ্ছে প্রতিনিয়ত এবং সেগুলো নেতিবাচকতার দিক থেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ। গতকালের সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদ প্রতিবেদন আমাদেরকে দুঃসংবাদ প্রদান করছে। প্রতিবেদন বলছে, জেলেরা হাওরের ভাসাপানিতে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ব্যবহার করছে, যে-জাল ছোট-বড় সমস্তপ্রকার মাছের প্রজাতি বিলুপ্তিকে নিশ্চিত করে। প্রতিবেদক লিখেছেন, ‘হাওরের পোনামাছ, ডিমওয়ারা মাছ এবং মৎস্যজাত জলজসম্পদ সব সাবাড় করে দিতে নৌকা বোঝাই সর্বনাশা কারেন্ট জাল নিয়ে বেপরোয়া মৌসুমী জেলেরা দলে দলে নেমেছে জেলার ছোটবড় বিভিন্ন হাওরে।’ এর কয়েক পঙক্তি পরে লেখা হয়েছে, ‘আর এসব নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল সরবরাহে ও ক্রয়ে অর্থ বিনিয়োগ করেছে আড়ৎদার শ্রেণির পাইকারি মৎস্যব্যবসায়ীরা। এরা প্রতি বছর এই সময়ে মৌসুমী জেলেদের কাছে জাল-নৌকা ক্রয়ের জন্য অগ্রিম টাকা লগ্নি করে থাকে।’ এমন সংবাদ প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনা করেই আমরা বলতে চাই, দেশ-সমাজ সাধারণ্যের কল্যাণাকুল ঘটনার সংবাদ কীছুটা হলেও আশার আলো বিকিরণ করে মনের ভেতর। এটা কম কথা নয়। কিন্তু সেই সঙ্গে অবশ্যই মৎস্যপ্রজাতি নিধনের প্রসঙ্গটিকে ভুলতে চাই না। আর ভুলতে চাই না যে, চূড়ান্ত বিবেচনায় বৃক্ষনিধনের মতোই মৎস্যনিধনও শেষ পর্যন্ত মানবপ্রজাতি নিধনেরও একটি সূত্রপাতমূলক ঘটনা। এইরকম ঘটনা চলতে দেওয়া কীছুতেই সমীচীন নয়। প্রশাসনকে অবশ্যই এবং এখনই এই মৎস্যপ্রজাতি নির্মূলকর কর্ম, কারেন্ট জাল দিয়ে মাছশিকার, অবশ্যই বন্ধ করতে হবে এবং কারেন্টজাল দিয়ে মাছ যারা ধরে ও তাদেরকে যে-সব আড়ৎদার জাল ও নৌকা কেনার টাকা লগ্নি দেয় তাদের বিরুদ্ধে বিহিত ব্যবস্থা নিতে হবে।