এবারের জাতীয় বাজেট উপস্থাপন নানা কারণে ভিন্ন মাত্রা পেলো।অসুস্থ অর্থমন্ত্রী শুরুতেই বাজেট উপস্থাপনের অনুমতি চাইতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন।এক পর্যায়ে নিজেই নিজেকে মাননীয় অর্থমন্ত্রী হিসেবে সম্বোধন করেন। অসুস্থতার কারণে অর্থমন্ত্রীর কষ্ট হওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই বাজেটের সিংহভাগ অংশ উপস্থাপন করেন।এটা বিশ্বের সংসদীয় ইতিহাসে একটি বিরাট মানবিক দৃষ্টান্ত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে মহানুভবতা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন তা বাজেটের ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।বাজেট বক্তৃতা শুনার জন্য বয়োবৃদ্ধ সাবেক অর্থমন্ত্রী অাবুল মাল অাবদুল মুহিতের জাতীয় সংসদে উপস্থিতি ও বাংলাদেশের বাজেট অধিবেশনে বিরল ঘটনা।কতটুকু অান্তরিকতা অার দায়িত্বশীল ব্যক্তি হলে হুইল চেয়ারে বসে গিয়েএমন নজির স্থাপন করা সম্ভব।বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণ ও বাজেট সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া একজন প্রধানমন্ত্রীর জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ। জাতীয় বাজেট সংক্রান্ত বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান এবং বাজেটের খুটিনাটি বিষয় সম্পর্কে অবহিত থাকার দৃঢ় অাস্থার কারণেই প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে অাত্মপ্রত্যয়ী উত্তর দিতে পেরেছেন। একজন শেখ হাসিনা বাঁধার প্রাচীর ডিঙিয়ে গভীর দেশপ্রেম অার দায়িত্বশীল অাচরণের মাধ্যমে এবারের বাজেট সংক্রান্ত বিষয়ে যে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। তা একদিন নিঃসন্দেহে ইতিহাসের উপাদান হিসেবে পরিগণিত হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে বার বার সাউন্ড সিস্টেমে সমস্যা সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা। একজন প্রধানমন্ত্রী যখন নির্ভিক দেশপ্রেমের অঙ্গিকারে নিজের দায়িত্বের বাইরেও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।তখন অামাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের দায়িত্বহীনতা খুবই পীড়াদায়ক। প্রশ্ন বাছাই থেকে শুরু করে প্রশ্নোত্তর প্রদান এবং শব্দ নিয়ন্ত্রণ বিষয়েও যদি রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহীকে ভূমিকা রাখতে হয়,এর চেয়ে লজ্জার অার কি থাকতে পারে! মাননীয় অর্থমন্ত্রীর এবারের বাজেট উপস্থাপনকালে সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বাজেট উপস্থাপন, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ায় সুরুচিসম্পন্ন শব্দ চয়ন অার সদ্য সাবেক অর্থমন্ত্রী অাবুল মাল অাবদুল মুহিতের ব্যক্তিত্বময় অভিব্যক্তি মনের অজান্তেই চোখের মধ্যে ভেসে ওঠে। এবারের বাজেটে মাননীয় অর্থমন্ত্রী ব্যাংকিং কমিশন গঠন,শস্য বীমা চালু,তরুণ প্রজন্মের কর্মসংস্থানসহ,সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীর পরিধি বৃদ্ধি,নদীভাঙন রোধ,শিক্ষা ও কৃষিতে অধিক মনোযোগ সহ নানাবিধ যে ইতিবাচক পরিকল্পনা নিয়েছেন তা বাস্তবায়নই এখন তাঁর জন্য বড় চ্যলেজ্ঞ।কথায় অাছে শেষ ভালো যার সব ভালো তার।মেধাবী,সংগ্রামী পুরুষ মাননীয় অর্থমন্ত্রী অা হ ম মোস্তফা কামাল তাঁর দায়িত্বকালীন সময়ে দেশের অর্থনৈতিক ভিত অারো মজবুত করে দেশকে নব রূপান্তরে এগিয়ে নেবেন এমন প্রত্যাশা। অাজকের বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর একজন সাবেক সহকর্মীকে যে সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছেন তা যদি কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত অামাদের রাজনীতি অার সামাজিক কার্যক্রমে ছড়িয়ে পড়ে সেটাই হবে অামাদের মানবিক বাংলাদেশের যথাযথ চর্চা। পরিশেষে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার একটি উদ্ধৃতি দিয়ে শেষ করতে চাই।বরাবরই তিনি কবিতা,প্রবাদ অার বিভিন্ন উদ্ধৃতি দিয়ে বাজেটের মতো নিরস কঠিন বিষয়কে শৈল্পিকভাবে উপস্থাপন করতেন।তিনি ২০০০-২০০১ সালের বাজেট বক্তৃতায় বলেছিলেন “আদর্শবাদীরা বিশ্বাস করে যে স্বল্প মেয়াদের কোনো তাৎপর্য নেই। হতাশাবাদীরা মনে করে যে দীর্ঘ মেয়াদেও কিছু যায় আসে না। যারা বাস্তববাদী তারা জানে যে, স্বল্পমেয়াদে যা করা হয় এবং যা করা হয় না- উভয়েই দীর্ঘ মেয়াদ নিয়ন্ত্রণ করে।”