স্টাফ রিপোর্টার ::
গণদাবির প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিআরটিসি বাস চালু হয়েছিল সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে। তবে বাস চলাচলের বিরোধিতা করে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের অনৈতিক কর্মসূচির বিরুদ্ধেও প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করেছিলেন সাধারণ জনতা। সর্বশেষ সাধারণ জনতা ও পরিবহন মালিক শ্রমিকদের বৈঠকে বাস চলাচলের সিদ্ধান্ত হলেও এখন আবার সরকারি বাস চলাচলের বিরুদ্ধে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা অবস্থান নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ জনতা। এদিকে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের অনৈতিক কর্মসূচি ও প্রশাসনিক নীরবতার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ জনতা আবারো নানা কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জ জেলা নাগরিক অধিকার উন্নয়ন সমিতি জেলা আইনজীবী সমিতির সামনে মানববন্ধন করে বিআরটিসি বাস বন্ধের পাঁয়তারার প্রতিবাদ করে। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা পরিবহন মালিক শ্রমিকদের গণবিরোধী সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে তাদের যাত্রীসেবার মানোন্নয়নের দাবি জানান। পাশাপাশি বিআরটিসি বাস তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে বিআরটিসি বাস সংখ্যা বাড়ানোর জোরালো দাবিও জানান। গত শুক্রবার সিলেটে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন সিলেট-সুনামগঞ্জের সচেতন নাগরিক সমাজ। তারা পরিবহন মালিক শ্রমিকদের বিআরটিসি বাস চলাচলে বাধা ও স্থানীয় প্রশাসনের বাস তুলে নেওয়ার নির্দেশনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিআরটিসি বাস সংখ্যা বাড়ানোর দাবিতে মন্ত্রীর কাছে সহযোগিতা চান। মন্ত্রীও উপস্থিত সুধীজনকে বিআরটিসি বাস চালু থাকার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন।
শনিবার শহরের আলফাত স্কয়ারে হাসপাতালের দুর্নীতিবিরোধী মানববন্ধনেও একাধিক বক্তা পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের বিআরটিসি বাস বন্ধের অনৈতিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বক্তারা বলেন, পরিবহন মালিক শ্রমিকদের অবরোধ ধর্মঘট করার অধিকার আছে। জনতারও অধিকার আছে বিআরটিসি বাসে যাতায়াতের। অবরোধের নামে বিআরটিসি বাসসহ অন্যান্য প্রাইভেট পরিবহন চলাচলে বাধা দেওয়ার অধিকার কারো নেই। কেউ বিআরটিসি বাস চলাচলে বাধা, অন্যান্য প্রাইভেট বা গণপরিবহন চালালে সেটিতে বাধা দিলে প্রশাসনকে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। বক্তাদের সবাই সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে বিআরটিসি বাস সংখ্যা বৃদ্ধির দাবি জানান।
অন্যদিকে বিআরটিসি বাস বন্ধের চক্রান্তের বিরুদ্ধে শনিবার রাতে যাত্রী কল্যাণ পরিষদ, যাত্রী অধিকার আন্দোলনসহ নানা সামাজিক আন্দোলন প্রতিবাদী মতবিনিময় সভা করেছে। পৌর মার্কেটে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের অনৈতিক কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান। পাশাপাশি সাধারণ জনতাকে নিয়ে রাজপথে বিআরটিসি বাস বন্ধের পাঁয়তারার বিরুদ্ধে কর্মসূচি চালানো হবে বলে ঘোষণা দেন নেতৃবৃন্দ।
মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ইয়াকুব বখত বহলুল বলেন, বিআরটিসি বাস চলাচলে কারো বাধা দেওয়ার নৈতিক অধিকার নেই। সরকার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সড়কে তার জনগণের চলাচলের জন্য বাস দিয়েছে। এটায় বাধা দেয়ার কি আছে। তিনি মালিক সমিতিতে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে উন্নত ও আধুনিক বাস নামিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ব্যবসায় নামার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মানুষকে জিম্মি করে ব্যবসা করা যায় না।
মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, প্রায় তিন মাস আগে সরকার ৮টি বাস চালু করেছিল সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা বেআইনীভাবে ধর্মঘটসহ বিআরটিসি বাস বন্ধের কর্মসূচি পালন করেছে। এর বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ-সিলেটের সাধারণ মানুষ রাজপথে নেমে প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করেছে। শেষে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বৈঠকের মাধ্যমে বাস চলাচলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন কিছুদিনের ব্যবধানে প্রশাসনকে জিম্মি করে দুটি বাস কমানো হয়েছে। আরো দুটি বাস বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আবার সেই চক্রই বাস বন্ধের দাবি জানাচ্ছে। তিনি প্রশাসনকে এ ব্যাপারে নমনীয় না হয়ে কঠোর হওয়ার দাবি জানান।