বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের চেষ্টায় জামালগঞ্জে যুদ্ধাপরাধ মামলার আসামি আলহাজ ঝুনু মিয়ার নামে নামকরণকৃত একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত হয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষজন।
২০১৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ঝুনু মিয়ার নামে জামালগঞ্জ আমলগ্রহণকারী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সদরকান্দি গ্রামের আব্দুল জলিল একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ঝুনু মিয়াসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এই মামলাটি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে তদন্তের জন্য পাঠিয়েছিলেন আদালত।
ট্রাইব্যুনাল এই মামলাটির অভিযোগ গ্রহণ করে তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। এছাড়াও বাদী আবারও মামলাটির অগ্রগতির বিষয়ে আবেদন করেছেন বলে জানা গেছে। ঝুনু মিয়া তার গ্রামের বাড়ি জামালগঞ্জের লক্ষীপুরে তার নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন।
মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ঝুনু মিয়ার বাবা লাল মিয়া ছিলেন হাওরাঞ্চলের শীর্ষ রাজাকার। তার মালিকানাধীন লঞ্চটি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে ব্যবহার করত। লাল মিয়ার নেতৃত্বে ওই সময় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষদের বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় লাল মিয়া আতঙ্কে পরিণত হয়েছিলেন।
ঝুনু মিয়াও তার বাবার সঙ্গে এসব কাজে জড়িত ছিলেন বলে আদালতে দায়েরকৃত অভিযোগে উল্লেখ করেন বাদী আব্দুল জলিল।
এদিকে নিজের নামে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হওয়ায় স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ঝুনু মিয়া। তার সমর্থকরাও স্থানীয় এমপিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
জানা গেছে, বিএনপি নেতা ও ধানের শীষে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত ঝুনু মিয়া গত জাতীয় নির্বাচনের আগে সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের সঙ্গে ঘনিষ্ট হন। ওই সময় তিনি এমপির নির্বাচনী প্রচারণায়ও যুক্ত হন। সর্বশেষ গত উপজেলা নির্বাচনেও তিনি এমপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালে মুক্তিযোদ্ধাদের বাধায় জাতীয় ও বিজয় দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে পারেননি বলে জানা গেছে।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সদস্য আকবর হোসেন বলেন, লাল মিয়া একাত্তরে ছিলেন হাওরাঞ্চলের ত্রাস। তার নেতৃত্বাধীন রাজাকার বাহিনী লুটপাট, অগ্নিংযোগ, ধর্ষণ, খুনের অসংখ্য ঘটনা ঘটিয়েছে। ঝুনু মিয়াও একজন পরিণত বয়সের মানুষ হিসেবে এই অপকর্মে জড়িত বলে যুদ্ধাপরাধ মামলার অভিযোগ ও এলাকাবাসীর মুখ থেকে শুনেছি। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার রাজাকারের নামে প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি দেওয়াটা আমাদের জন্য কষ্টের।
মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন ধরেননি।