হাওর ডেস্ক ::
সরকার ৪৪ হাজারের বেশি দুস্থ পরিবারকে দারিদ্র্য থেকে উত্তরণের উদ্যোগ নিয়েছে। এসব পরিবারের প্রধান হচ্ছেন নারী। পল্লি সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিয়োজিত করে এই নারীদের বর্তমান অতি দরিদ্র অবস্থার পরিবর্তন ঘটানো হবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, দেশের ৮ বিভাগের ৬৪ জেলার ৪৮১টি উপজেলার ৪৪ হাজার ৪৬০টি দুস্থ পরিবারকে অতি দরিদ্র অবস্থা থেকে উত্তরণে সহায়তা করার লক্ষ্যে প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। ‘পল্লি কর্মসংস্থান ও সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচি-৩’ বা আরইআরএমপি-৩ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০২৩ সালের ৩০ জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। ১ হাজার ৭২৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামীণ বাজার ও সার্ভিস সেন্টার সংযোগকারী ৮৮ হাজার ৯২০ কিলোমিটার পল্লি সড়ক বছরব্যাপী রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে চলাচলের উপযোগী রাখা হবে। আর এই কাজে যুক্ত করার মধ্য দিয়ে এই নারীদের অতি দরিদ্র অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটানো হবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পটি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, পরিকল্পনা কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে পল্লি সড়কগুলো সারাবছর চলাচল উপযোগী থাকবে। এতে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি প্রকল্প এলাকার সহজ ও নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ নিশ্চিত হবে। এর ফলে কৃষিজাত পণ্যের বাজারজাতকরণে সুবিধা এবং গ্রামীণ জনগণের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। যা দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার ২ নং সোহাগদল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ ধরনের প্রকল্প গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙা করবে। এলাকার একটি বড় অংশের নারী জনগোষ্ঠীর আর্থিক সক্ষমতা বাড়বে, যার মধ্য দিয়ে দারিদ্র্যতার হার কমবে।’
সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় প্রায় ১২ দশমিক ৯ মিলিয়ন মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্যের হার ৬ দশমিক ২ শতাংশ কমিয়ে আনা এবং চরম দারিদ্র্যের হার প্রায় ৪ শতাংশ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণেই সরকার এ ধরনের একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটি লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটি বাস্তবায়িত হলে এসব দুস্থ পরিবারে অর্থিক সচ্ছলতা ফিরে আসবে।’ এর মাধ্যমে এসব দুস্থ পরিবারের প্রধান নারীদের বছরব্যাপী কর্মসংস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত হবে বলেও জানান তিনি।
প্রকল্প বাস্তবায়ন এলাকাঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ঢাকা (জেলা), গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরিয়তপুর জেলার ৮৪টি উপজেলা; ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ (জেলা) ও নেত্রকোনা জেলার ৩৫টি উপজেলা; সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ, সিলেট (জেলা), মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার ৩৮টি উপজেলা; চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলার ৯৮টি উপজেলা; বরিশাল বিভাগের বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল (জেলা), ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলার ৪২টি উপজেলা; খুলনা বিভাগের মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙা, ঝিনাইদহ, যশোর, মাগুরা, নড়াইল, বাগেরহাট, খুলনা (জেলা) ও সাতক্ষীরা জেলার ৫৯টি উপজেলা; রংপুর বিভাগের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর (জেলা), কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার ৫৮টি উপজেলা এবং রাজশাহী বিভাগের জয়পুরহাট, বগুড়া, চাপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, রাজশাহী, নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলার ৬৭টিসহ মোট ৪৮১টি উপজেলায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।