স্টাফ রিপোর্টার ::
সহায় সম্বল বলতে কিচ্ছু নেই। এমনকি থাকার ভিটেও। পরের বাড়িতে দিন মজুর বাবা কোনমতে একটি ছোট ঘর বানিয়ে ৫ সন্তান নিয়ে থাকতেন। বাবা অল্প বয়সেই বিনাচিকিৎসায় মারা গেছেন। দিনমজুর মা-ও অসুস্থ। এমন অবস্থায় প্রতিবেশীরা বড় সন্তান হিসেবে বাবা মায়ের দিনমজুরি পেশায় এসে সংসারের হাল ধরুক। সার্বক্ষণিক অভাব ঘিরে রাখা সংসারে ছোটবেলা থেকেই শিশুটি পড়ালেখার প্রতি ছিল ভীষণ আগ্রহী। তাই পড়ালেখা চালিয়ে যেতে নিজেও পরের জমিতে দিনমজুরি, হাওরে ধানকাটাসহ নানা পরিশ্রম করে পড়ালেখাটা চালিয়ে গেছে।
কখনো প্রাইভেট পড়ার সুযোগ হয়নি ছেলেটির। পরীক্ষার সময় বাড়তি পরিশ্রম করেছে ফরম ফিলাপের খরচ বের করতে। গত বছর টাকার অভাবে কাক্সিক্ষত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেবার সুযোগ হয়নি। এবার তার এক শিক্ষকের আর্থিক সহায়তায় হতদরিদ্র পরিবারের দিনমজুর সেই ছেলেটি শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ৬৩তম স্থান লাভ করেছে। তাকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত গ্রামের মানুষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই অদম্য মেধাবীকে নিয়ে গ্রামের যুবকরা স্টেটাস দিয়ে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। জেলা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির খরচ যোগানোর জন্য।
শিক্ষাসংগ্রামী সেই ছেলেটির নাম হাবিজুর রহমান সুমন। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মোহনপুর গ্রামের মৃত সুরজনূর মিয়া ও আফতাবুন নেসা দম্পতির ছেলে সুমন পরিবারের ৩ বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। ২০১৬ সনে জয়নগর বাজার হাজী গণি বক্স উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৪.৭২ এবং ২০১৮ সালে জয়নগর মঈনুল হক কলেজ থেকে ৪.৮৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। ২০১৮ সনে এমসি কলেজে ভর্তি হন সুমন। তবে এখন স্বপ্নের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তার স্বপ্নের বিস্তৃতি ঘটলেও ভর্তির খরচ জোগান নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন।
নিরক্ষর মা ছেলের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণের খবর পেয়ে আনন্দিত হলেও ছেলের ভর্তি নিয়ে উৎকণ্ঠায় আছেন তিনি। কারণ ১ টাকা দিয়ে ছেলেকে ভর্তি করে দেওয়ার সাধ্য নেই তার। জমি জিরেত বাড়ির ভিটেও নেই যা বিক্রি করে ছেলেকে ভর্তি করাবেন। আগামী ১০ নভেম্বরের মধ্যে ছেলে ভর্তি হবে এই চিন্তায় এখন অস্থির তিনি।
হাবিজুর রহমান সুমনের ইচ্ছে ভবিষ্যতে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা হওয়া। স্বপ্ন পূরণ হলে উপজেলা-জেলায় যখন দায়িত্ব পালন করবেন তখন তিনি তৃণমূলে গিয়ে গরিব মানুষের সন্তানদের শিক্ষাসহায়তার স্বপ্ন দেখেন।
এলাকার সবার কাছে বিনয়ী ও ভদ্র হিসেবে পরিচিত সুমনকে সবাই ভালোবাসে মেধা ও আচার আচরণের জন্য। পড়ালেখা ও আচরণ দিয়ে সে সব মানুষের মন জয় করে নিয়েছে। এলাকার সবাই চান এই মেধাবী ছাত্রটি যাতে তার গন্তব্যে পৌঁছতে পারে।
জয়নগর বাজার হাজী গণি বক্স উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. লিলু মিয়া বলেন, সুমন একজন প্রকৃত মেধাবী ছাত্র। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সে অনেক দূর যেতে পারবে। তার মধ্যে সেই সম্ভাবনা আছে। এই ছেলেটির উচ্চশিক্ষার সহায়তা করা স্বচ্ছল মানুষদের এগিয়ে আসা উচিত। তিনি বলেন, এই মেধাবীদের পৃষ্ঠপোষকতা করা দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল। তিনি বলেন, সুমন পড়ালেখায় যেভাবে ভালো ব্যবহারেও তেমনি সবার প্রিয়পাত্র।
হাবিজুর রহমান সুমন বলেন, দারিদ্র্যতা কী ভয়ঙ্কর জিনিস এই স্বাদ আমি হাঁড়ে হাঁড়ে টের পেয়েছি। ছোটবেলা থেকেই কাজ করে পড়ার খরচ জুগিয়েছি। দিনমজুর বাবা বিনাচিকিৎসায় মারা গেছেন। মা-ও দিনমজুরির কাজ করে করে শরীর ভেঙে পড়েছে। অনেকে পরিবারের দুর্দশা দেখে পড়ালেখা বন্ধ করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। আমি এবং আমার মা তা মানিনি। আমরা পরিশ্রম করে খরচ জুগিয়েছি। এলাকার কিছু ভালো মানুষ আমাকে বিশেষ সময়ে কিছু সাহায্য করেছেন। রুবেল স্যার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিপরীক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করেছেন। সুমন বলেন, আমি চাই ভবিষ্যতে জনপ্রশাসন বিভাগের একজন কর্মকর্তা হয়ে গরিব মানুষের সহায়তা করতে। কারণ জনপ্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মানুষের জন্য কাজ করার বড় সুযোগ আছে।
সুমনের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর: ০১৭৮১৯৮৫৯৫৮