অনলাইন ডেক্স::
রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের চলমান ‘জাতিগত নির্মূল প্রক্রিয়া’র কারণে অন্তত ২২ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ এই তথ্য দিয়েছে। সংস্থাটির হিসেবে রাখাইনে ৯ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-অভিযানে অন্তত ৮৬ জন নিহত হয়েছেন। সেনাবাহিনীর নির্যাতনে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার, এবং রোহিঙ্গাদের উপর জাতিগত নির্মূল করার বিষয়টি উল্লেখ করলেও এখনো জাতিসংঘসহ ইউরোপ আমেরিকার মানবাধিকার সংগঠনসহ কোন রাষ্ট্র মিয়ানমার সরকারকে নির্যাতন বন্ধের কথা বলেনি। কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেনি।
জাতিসংঘের হিসেবে রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের দমন অভিযানের কারণে ঘর হারিয়েছেন ৩০ হাজার মানুষ। সহিংসতা থেকে বাঁচতে তারা বাংলাদেশ সীমান্তে ছুটে আসছেন। সর্বশেষ তথ্যে জাতিসংঘ জানিয়েছে, ১ নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ৬ সপ্তাহেরও কম সময়ে ২২ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
শুক্রবার জাতিসংঘের মুখপাত্র পিয়েরে পিরন এক বিবৃতিতে এসব কথা জানান। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ এ সহিংসতার সূত্রপাতের আগে সেখানকার ১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ ত্রাণ সাহায্যের আওতায় ছিলেন। সরবারহ ব্যবস্থা সীমিত করে দেওয়ায় ৯ অক্টোবরের পর থেকে সেখানকার মাত্র ২০ হাজার মানুষের কাছেই ত্রাণ সাহায্য পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে। আর বাকি ১ লাখ ৩০ হাজার ব্যক্তির কাছে সাহায্য পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।
এর আগে ৫ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) কক্সবাজার অফিসের প্রধান সানজুক্তা সাহানি জানিয়েছেন, মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে সহিংসতার ঘটনায় নতুন করে ২১ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে।
তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত সপ্তাহে জাতিসংঘ ১০ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ার কথা বললেও মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে এই সংখ্যা ২১ হাজারে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ রোহিঙ্গা টেকনাফ নয়াপাড়া, লেদা শরণার্থী ক্যাম্প এবং উখিয়া কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। অন্যরা জেলার বিভিন্ন স্থানে পরিচিতজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।’
সানজুক্তা সাহানি আরও বলেন, ‘শুধু আইওএম নয়, কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের নিয়ে জাতিসংঘের ইউএনএইচসিআর, ডব্লিউএফপি, ইউনিসেফের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থা ছাড়াও বিভিন্ন এনজিও কাজ করছে। সব সংস্থার হিসাবে বর্তমানে নতুন করে ২১ হাজার রোহিঙ্গা শুধুমাত্র কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছে বলে আমরা একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছি।’
তিনি বলেন, ‘এখনও সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গারা আশ্রয়ের সন্ধানে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী সপ্তাহে এই সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।’
এদিকে, রোহিঙ্গাদের কাছে মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর সুযোগ করে দিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ১৪টি দেশ। শুক্রবার মিয়ানমারে অবস্থিত ওই দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান।
তুরস্ক, অস্ট্রিয়া, বেলিজিয়াম, কানাডা, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, গ্রিস, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, পোল্যান্ড, স্পেন, সুইডেন ও যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমারের বন্ধু দেশ হিসেবে দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় এলাকায় রাখাইনের মানবিক অবস্থার বিপর্যয় নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। সেই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের কাছে মানবিক সাহায্য ঢুকতে না দেওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় ওই বিবৃতিতে।
কূটনীতিকরা অভিযোগ করেন, সামরিক কর্মকর্তারা প্রায়ই সেখানে সাহায্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত বাতিল করছেন অথবা বিলম্বিত করছেন।
সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস।