হাওর ডেস্ক ::
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের পর আরও জোরালোভাবে শুরু হতে পারে চলমান শুদ্ধি অভিযান। সারাদেশের উপজেলা পর্যায় পর্যন্তও এই অভিযান চালানো হবে বলে জানা গেছে।
সরকার ও আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে যাতে নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি না হয়, কোনো নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, সে জন্য অভিযান শিথিল করা হয়েছে। সম্মেলনের পর পরই এ অভিযান আবার শুরু হতে পারে বলে ওই সূত্রগুলো জানায়।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় দল ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ওই সভায় এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত কারো কারো নামও উল্লেখ করেন তিনি। ওই সভাতেই তিনি ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাপ রাব্বানিকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন।
এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর যুবলীগের নেতাদের বাড়ি ও তাদের পরিচালিত ক্লাব, ক্যাসিনোতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শুরু হয়। অভিযানে যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, কথিত নেতা জি কে শামীমসহ যুবলীগ, কৃষক লীগ, আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা ও সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর গ্রেফতার হন। গত ৬ অক্টোবর যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাঈল চৌধুরী সম্রাটকে গ্রেফতার করা হয়।
অভিযান শুরুর পর যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা আবু কাওসার, সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ওমর ফারুক চৌধুরী, যুবলীগের সহ-সভাপতি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, জাতীয় সংসদের হুইপ সামসুল হক চৌধুরী, নজরুল ইসলাম বাবুসহ অনেকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তলব ও জব্দ করা হয়। তারাসহ প্রায় অর্ধশত নেতার বিদেশে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
আবার কেউ কেউ বিদেশেই অবস্থান করছেন। গ্রেফতারের আশঙ্কায় দেশে আসছেন না। তারা এখন রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। যুবলীগের অনেক নেতা এখনও গাঁ ঢাকা দিয়ে আছেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা এই অভিযান অব্যাহত রাখার ব্যাপারে জোরালো মত দিয়েছেন। গত ৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সভায় দলের সিনিয়র নেতারা এই শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ এটা অব্যাহত রেখে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে মানুষ সারাজীবন শেখ হাসিনাকে মনে রাখবে।
সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, অভিযান থেমে যায়নি বা দুর্নীতিসহ সব ধরনের অপকর্ম বন্ধে যে কঠোর অবস্থান, সেখান থেকে সরকার সরে আসেনি। সারাদেশে দুর্নীতি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িতদের তালিকা তৈরি করেছে সরকার।
শুধু ঢাকা কেন্দ্রিক নয়, সারাদেশে উপজেলা পর্যায় পর্যন্তও দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িতদের তালিকা করা হয়েছে। রাজধানী থেকে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের নাম এই তালিকায় রয়েছে। দুর্নীতি, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছেন, তা থেকে তিনি সরে আসবেন না। এ ব্যাপারে তিনি কোনো আপস করবেন না, কঠোর অবস্থানেই আছেন। তালিকা অনুযায়ী সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ওই নেতারা জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীবলেন, এই অভিযান একটি চলমান প্রক্রিয়া। অভিযান থেমে গেছে বা স্থগিত রয়েছে বা প্রতিদিনই অভিযান চলবে বিষয়টি এমন নয়। প্রধানমন্ত্রী তো বলেছেন অভিযান অব্যাহত থাকবে।