নিজস্ব প্রতিবেদক::
সুনামগঞ্জ
জেলা শহরের আলফাত উদ্দিন স্কয়ার এলাকার মিষ্টিজাত দ্রব্যের বিক্রেতা
প্রতিষ্ঠান মোহনলাল সুইটস এর মালিক লিটন চৌধুরী সংবাদ সম্মেলন করে তার
ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে সন্ত্রাসীকর্মকান্ড চালিয়ে বাধা প্রদান করা
হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। পাশাপাশি ব্যবসার নিরাপদ পরিবেশ ও তার ব্যক্তিগত
নিরাপত্তা চেয়ে আইনি সহযোগিতাসহ গণমাধ্যম ও সমাজকর্মীদের সু দৃষ্টি কামনা
করেন তিনি।
মঙ্গলবার দুপুরে জেলা শিল্পকলা
একাডেমীর আব্দুল হাই মিলনায়তনে গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি লিখিত
বক্তব্য পাঠ করেন। এসময় তার সঙ্গে তার স্বজন- ও বন্ধুরা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি অভিযোগ করেন সম্পদের লোভ থেকে তার সৎ বাবাই তার মা ও বোনকে
পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেন। এরপর তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো দখলে কৌশল
অবলম্বন করে সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে হামলা ও লুটপাট চালান। এরপর বিচার চেয়ে
আদালতের দ্বারস্থ হন লিটন। আইনিভাবে তার পক্ষেই রায় দেন বিজ্ঞ বিচারক। এর
পরেও নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসীদের হামলা ও নিজের নিরাপত্তা নিয়ে
ভয়ের মধ্যে রয়েছেন লিটন চৌধুরী। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন “ আমার
পিতামৃত-আশুতোষ দেব, মাতা-মৃত শেলি চৌধুরী। বিগত ২০০৬ সালে আমার বাবা
মৃত্যু বরণ করলে-তার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারী হিসাবে আমরা দুই ভাই আমাদের
পিতার স্থাবর/অস্থাবর সমুদয় সহায় সম্পত্তির মালিক হই। পরবর্তীতে আমাদের
পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে ২৪ লক্ষ টাকা পাইএবং আমাদের পিতা পুলিশে
চাকুরী করা অবস্থায় মৃত্যু বরণ করায় তাহার উত্তরাধিকারী হিসাবে আমরা দুই
ভাই আমাদের পিতার পেনশনের ১২ লক্ষ টাকা উত্তোলন করি। পরবর্তীতে এই টাকা
দিয়ে আমাদের মা শেলী চৌধুরীর নামে আমি ও আমার ভাই টিটন চৌধুরী মোহনলাল
সুইটস্ এন্ড ফুড্স এর ব্যবসা শুরু করি এবং সুনামের সাথে ব্যবসা পরিচালনা
করিতে থাকি।”
লিটন বলেন “পরবর্তীতে আমার মায়ের ও ছোট বোনের অকস্মাৎ সড়ক দূর্ঘটনাজনিত কারনে মৃত্যুর পর আমি উক্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সম্পূর্ণ দায় দায়িত্ব বহন করি। সততা ও নিষ্ঠার সাথে প্রায় ১ যুগের উপরে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। উল্লেখ্য যে, আমার মা ও মামা প্রায় ২৫ বৎসর পূর্ব হতে মালয়েশিয়া রাষ্ট্রে গার্মেন্টস ব্যবসা সহ অন্যান্য ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন। কিছু দিন পরই হোন্ডি ব্যবসায়ী,আদম ব্যবসায়ী ও মাদক ব্যবসায়ী জনৈক মান্নান চৌধুরী বিদেশে আমার মায়ের সাথে পরিচয় হয়। শুধু পরিচয় নয় সফল ব্যবসায়ী হিসেবে আমার মায়ের অর্থের প্রতি তার লুলপ দৃষ্টি পড়ে। আমার মাকে বিভিন্ন ভাবে ফুসলিয়ে ও প্ররোচিত করে আমার বাবার সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে আমার মাকে ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করে সে। মুসলিম শরীয়ত মতে আমার মা হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেন।”
তিনি আরও বলেন “২০০৬ ইং সনে আমাদের পিতা আশুতোষ দেব মৃত্যু বরণ করিলে-এবং পরবর্তীতে উল্লেখিত মান্নান চৌধুরী আমাদের মা শেলি চৌধুরীকে ধর্মান্তরিত করে বিবাহ করিলে-উল্লেখিত মান্নান চৌধুরীর ঔরষে ও আমার মায়ের গর্ভে আমার ছোট বোন এলি চৌধুরীর জন্ম হয়। আমাদের পিতার মৃত্যুর পর আমরা অভিভাবকহীন হয়ে পরায় এবং আমাদের মা ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করায় আমরা আমাদের মায়ের পথ অনুস্মরণ করে এবং ইসলাম ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি। মান্নান চৌধুরী আদম ব্যবসা ও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন বলে আমরা দুই ভাই ধর্মান্তরিত হওয়ার পর তা অবগত হই। তিনি ঢাকাস্থ বিভিন্ন রিক্রুটিং লাইসেন্স ব্যবহার করে মালয়েশিয়া ও লিবিয়ায় লোক পাঠাতেন। মালয়েশিয়া ও লিবিয়ায় লোক পাঠানোর ব্যবসা বন্ধ হওয়ার পর কয়েক ‘শ লোকের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করে দীর্ঘদিন বিদেশেই আত্মগোপন করে থাকেন। মান সম্মানের ভয়ে আমার মা ও আমি অনেক লোকের বেশ কিছু টাকা পরিশোধ করেছি। ”
লিটন বলেন “ মান্নান
চৌধুরীর ১ম স্ত্রীর ১ মেয়ে কনা চৌধুরীকে সুনামগঞ্জ ষোলঘরস্থ “পাভেলের” সাথে
বিবাহ দেন। বিয়ের কিছু দিন যেতে না যেতেই মান্নান চৌধুরী ১ম স্ত্রীর
কন্যা কনা ও ১ম স্ত্রীর ছেলে সেতু চৌধুরী এবং কনার স্বামী পাবেল মেতে উঠে
এক নতুন ষড়যন্ত্রে । ২০১৮ সালে আমার বোন এলি চৌধুরীকে নিয়ে আমার মা শেলী
চৌধুরী নিজেদের গাড়ীতে করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য
গিয়েছিলেন। গাড়ী চালানোতে ছিল মান্নান চৌধুরীর ১ম স্ত্রীর সন্তান সেতু
চৌধুরী। রাজশাহী থেকে ফেরার পথে সিরাজগঞ্জে এসে গাড়ীটি এক্সিডেন্ট করে
স্পটেই আমার মা শেলী চৌধুরী মারা যান। ছোট বোন এলি চৌধুরীকে ঢাকা নেওয়ার
পথে সেও মারা যায়। অজ্ঞাত কারনে একই গাড়ীতে থাকা মান্নান চৌধুরীর ১ম
স্ত্রীর সন্তান সেতু চৌধুরী সম্পূর্ণ অক্ষত থাকে। উল্লেখ্য থাকা আবশ্যক যে,
উক্ত গাড়ীর চালক ছিল মান্নান চৌধুরীর ১ম স্ত্রীর সন্তান সেতু চৌধুরী। ”
লিটন
সংবাদ সম্মেলনে বলেন“ আমার মা ও বোনের মৃত্যুতে আমি তখন শোকে পাগল প্রায়।
সেই সুযোগে ময়না তদন্ত ছাড়াই আমার মা ও বোনের লাশ প্রবাসে থাকা মান্নান
চৌধুরীর নির্দেশে ঢাকার বাসায় নেওয়া হয়। আমি বার বার লাশগুলোর ময়না তদন্তের
কথা বলেছিলাম। কিন্তু উল্লেখিত মান্নান চৌধুরী, সেতু চৌধুরী , কনা চৌধুরী ও
কনা চৌধুরীর স্বামী পাবেল ময়না তদন্তের বিষয়টি সু-কৌশলে এড়িয়ে চলে।
পরবর্তীতে আমি আমার মা ও বোনের লাশ সুনামগঞ্জে এনে দাফন সম্পন্ন করার
পূর্বেও ময়না তদন্তের কথা বললে, ধূরন্ধর মান্নান চৌধুরী প্রবাস থেকে তাহার
মেয়ের জামাতা পাভেল এর মাধ্যমে জানায় যে, আমার মায়ের লাশ কাটাকাটি হলে তার
খুব কষ্ট হবে। আমি সরল মনে তাদের কথা বিশ্বাস করে আমার মৃত মা ও বোনে লাশের
দাফন সুনামগঞ্জস্থ আরপিন নগর কবরস্থানে সম্পন্ন করি। “
লিটন বলেন“ বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় এখন বুঝতে পারছি যে, আমার মা ও বোনের
মৃত্যুটা ছিল সুপরিকল্পিত। একই গাড়ীতে থাকা তিনজন ব্যক্তির মধ্যে ঘটনাস্থলে
আমার মায়ের মৃত্যু হয় এবং আমার ছোট বোন এলি চৌধুরীকে হাসপাতালে নেওয়ার
পথেই মৃত্যুরকোলে ঢলে পড়ে। কিন্তু গাড়ীতে থাকা চালক মান্নান চৌধুরীর ১ম
স্ত্রীর সন্তান সম্পূর্ণ অক্ষত থাকে কিভাবে?। আমার মা ও বোন মৃত্যুর পূর্বে
ঢাকা দক্ষিণ বনশ্রীতে, বাসার মালিকের কাছে একটি লেদার ব্যাগ রেখে যান। যার
মধ্যে প্রায় ১০০/১৫০ ভরি স্বর্ণালংকার সহ মূল্যবান দলিলাদি ও কাগজপত্র
ছিল। পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে মান্নান চৌধুরীর ১মপক্ষের স্ত্রীর ঢাকায়
অবস্থানরত সন্তানদের নিয়ে ব্যাগটি আনতে গেলে-কনা ও পাভেলের ষড়যন্ত্রে
মান্নান চৌধুরী আমাকে প্রবাস থেকে প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান করে এবং বলে
যে, বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমার কাছথেকে সব কিছু ছিনিয়ে নেবে। ”
হুমকির বিষয়টি উল্লেখ করে লিটন বলেন“ মান্নান চৌধুরী তার জামাতা পাভেলের মাধ্যমে আমাকে হুমকি দেয় যে, আমার মা বোনের যে অবস্থা হয়েছে আমার ও আমার ভাই টিটন চৌধুরীরও সেই অবস্থা করবে। তখন আমি নিশ্চিত হই যে, আমার মা বোনের সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুটা নিছক দূর্ঘটনা ছিলনা। এটি একটি সুপরিকল্পিত হত্যাকান্ড। এমনি ভাবে বিভিন্ন ইন্স্যুরেন্সের নমিনি হিসেবেও আমাকে অস্বীকার করে জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে টাকা উঠানোর চেষ্টাসহ আত্মসাত ও আমাদের মায়ের সম্পত্তি আত্মসাত করারর গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে তারা। পরিবারের মর্যাদা বিবেচনায় বিষয়টি সুনামগঞ্জের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিলেও মান্নান চৌধুরী তাতে কর্ণপাত না করে কতিপয় সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে আমাকে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত । তারা প্রান নাশের হুমকি ধামকিসহ আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। আমাকে বার বার হিন্দু আখ্যা দিয়ে আমার মায়ের সম্পত্তি হতে আমাকে বঞ্চিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন মান্নান চৌধুরী, জামাতা পাবেল ও কনা চৌধুরী। এমতাবস্থায় বিগত ২৩/০৪/২০১৯ইং তারিখে কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী নিয়া আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আমাকে ও আমার কর্মচারিদের বের করে দিয়ে বেদখল করার ষড়যন্ত্র ও চেষ্টায় লিপ্ত থাকলে,আমি আর কোন উপায়ন্তর না পাইয়া আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে বিজ্ঞ যুগ্ম দায়রা জজ ১ম আদালত, সুনামগঞ্জে স্বত্ব মোং ৫৪/১৯ইং দায়ের করি, যা বিজ্ঞ আদালতে চলমান আছে। আদালতে মামলা চলাকালীন অবস্থায় মান্নান চৌ:, মেয়ে কনা চৌ: ও মেয়ের জামাতা পাবেল বিগত ১৬/১১/২০১৯ইং তারিখ অনুমান সকাল ১০-৩০ ঘটিকার সময় কতিপয় সন্ত্রাসীবাহিনী দ্বারা অস্ত্রে শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমার মালিকানাধীন মোহনলাল সুইটস্ এন্ড ফুড্স প্রোডাক্ট নামক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অতর্কিতে হামলা করে আমার দোকানে থাকা মালামাল লুটপাট ও ক্যাশে থাকা মালামাল ক্রয়ের জন্য জমানো বিভিন্ন নোটে প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা মন্নান চৌধুরীর জামাতা পাভেল আমার ম্যানেজার তোফাজ্জল হোসেনকে পিস্তল দেখিয়ে ছিনিয়ে নেয়। বিষয়টি আমি থানা পুলিশকে অবহিত করি। এসময় আইন শৃঙ্খলার কথা বিবেচনা করে দোকানের তালা চাবি পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। “
লিটন আরও বলেন‘ মহামান্য সুপ্রীম
কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের আদেশের পর থানা কর্তৃপক্ষ তা যাচাই বাছাই করে
আমাকে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের চাবি হস্তান্তর করেন। কিন্তু এর পরেও
বর্তমানে মান্নান চৌধুরী ও তার সহযোগীরা আমার দোকানের ম্যানেজার তোফাজ্জলকে
হুমকি প্রদান করে প্রচার করিতেছে যে, তাহার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়া আমার
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হইতে আমাকে উচ্ছেদ করে দিবে। তার জামাতা পাভেল প্রচার
করছে যে, ব্যবসা করতে হলে প্রতি মাসে পাভেলকে ১ লক্ষ টাকা চাঁদা দিতে হবে। ”
এসব কথা উল্লেখ করে তিনি নিজের ব্যবসার নিরাপদ পরিবেশ চেয়ে ও নিজের ব্যাক্তিগত নিরাপত্তা কামনা করে সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।