হাওর ডেস্ক ::
বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে স্বাধীনতাবিরোধীরা চক্রান্ত করছে উল্লেখ করে দেশবাসীকে সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পাকিস্তানপ্রেমীদের ষড়যন্ত্র কখনোই সফল হবে না।
৪৯তম মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনাসভায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতাকে যারা ব্যর্থ করতে চায়, ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়, যারা ক্ষতি করতে চায়—আমরা তা হতে দেব না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর বা দালালচক্র যারা অন্তরে অন্তরে পাকিস্তানপ্রেমে ভোগে, তাদের চক্রান্ত এই মাটিতে কখনোই সফল হতে পারে না।’ তিনি বলেন, ‘লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা এবং জাতির পিতা এই দেশের জন্য সারাটা জীবন ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাঁর ত্যাগ বৃথা যেতে পারে না।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে আমরা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং নীতি-আদর্শগতভাবে যেভাবেই হোক পাকিস্তানের ওপরে আমরা থাকব।’ তিনি বলেন, ‘আজকে সত্যিই বাংলাদেশ সব দিক থেকে পাকিস্তানের ওপরে অবস্থান করছে এবং সেটা আমাদের ধরে রাখতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘নইলে ওই পাকিপ্রেমী যারা তারা বিদেশেই থাক, জেলখানাতেই থাক আর যেখানেই থাক তাদের চক্রান্ত থাকবে।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কালজয়ী আহ্বান স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাতির পিতার সেই কথা স্মরণ করতে হবে যে, ‘এই সাত কোটি বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না।’ আর এখন আমরা ১৬ কোটি। এখানে মুষ্টিমেয় দালাল থাকতে পারে, কিন্তু এই বাঙালিকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারেনি এবং পারবে না। সেটা আমরা প্রমাণ করেছি।’
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ত্যাগের আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করার নির্দেশ দিয়ে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘জীবনে কী পেলাম কী পেলাম না, সেই চিন্তা না। মানুষের জন্য কী করতে পারলাম, কী দিতে পারলাম, কতটুকু করতে পারলাম, সেই চিন্তাটাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘অর্থ-সম্পদ একটি নেশার মতো। মানুষ অন্ধের মতো ছুটতে থাকে। কিন্তু অর্থ-সম্পদ কেউ কবরে নিয়ে যেতে পারে না। তাদের পরিবার ধ্বংস হয়। ছেলে-মেয়েরা বিপথে যায়। মাদকাসক্ত হয় বা ভিন্নপথে চলে যায় অথবা জঙ্গিতে যায়। হুঁশ থাকে না। ছুটতেই থাকে।’
এই ‘দুরারোগ্য ব্যাধি’ থেকে যদি কেউ মুক্ত হতে পারে, আর দেশের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হতে পারে, তাহলে সেই দেশের উন্নতি হয় বলেও মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান।
শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায় করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরার পাশাপাশি তাঁকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার ঘটনাও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
জাতির পিতা নিহত হওয়ার পর নেতাকর্মীরা কোথায় ছিলেন—সেই প্রশ্ন তুলে তাঁর মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এত বড় একটা ঘটনা বাংলাদেশে কোনো লোক জানতে পারল না? কেউ কোনো পদক্ষেপ নিল না? ওই লাশ পড়ে থাকল ৩২ নম্বরে। কেন? সেই উত্তর এখনো আমি পাইনি। এত বড় সংগঠন, এত নেতা, কোথায় ছিল?’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত নেতাকর্মীরা এ সময় ‘ঠিক ঠিক’ বলে চিৎকার করে ওঠেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাঝে মাঝে এটা আমার জানতে ইচ্ছা করে যে কেউ সাহসে ভর দিয়ে এগিয়ে আসতে পারল না? বাংলার সাধারণ মানুষ তো বঙ্গবন্ধু মুজিবের সাথে ছিল! হয়তো এই ব্যর্থতার খেসারতই দিতে হয়েছে জাতিকে। কারণ জাতির পিতাকে হত্যার পর বারবার ক্যু হয়েছে। ১৮-১৯টা ক্যু হয়েছে এই দেশে। অত্যাচার-নির্যাতন চলেছে আমার দলের নেতাকর্মীদের ওপর। সেই সময় যদি কেউ সাহসে ভর করে দাঁড়াত, তাহলে এই অত্যাচার হতো না, বারবার ক্যু হতো না।’
অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, কেন্দ্রীয় সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রমসহ দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সূত্র : বাসস।