হাওর ডেস্ক ::
বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজকের পুলিশ বাহিনীর প্রতি জনগণের বিশ্বাস এবং আস্থা অর্জিত হয়েছে। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় পুলিশ সাহসিকতার ভূমিকা পালন করছেন। পুলিশের দায়িত্বশীল ভূমিকা মানুষের প্রশংসা অর্জন করেছে।
রোববার (৫ জানুয়ারি) সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মাঠে বার্ষিক পুলিশ প্যারেডের মধ্য দিয়ে পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির সন্ত্রাসীরা যখন অগ্নিসন্ত্রাস করেছে, তখন তাদের হাতে ২৯ জন পুলিশ নিহত হয়েছিলেন। এ সময় পুলিশ অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে প্রতিরোধ গড়ে তুলে জনগণের জানমাল রক্ষা করেছে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছে।
জাতীয় সম্পদ রক্ষা করার জন্য পুলিশ বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা সন্ত্রাস, মাদক, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি। পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে এগুলো মোকাবিলা করছে। বিশেষ করে জঙ্গিবাদ দমনে পুলিশের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয। এটা শুধু আমাদের দেশে নয়, বিদেশেও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে। আমাদের দেশে এই বিনিয়োগ সন্ত্রাসের কারণে কোনোক্রমেই যেন ব্যাহত না হয় সেদিকে পুলিশকে ভূমিকা রাখতে হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে রাজারবাগ এবং পুলিশের শহীদ হওয়ার ঘটনা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
জাতীয় জরুরি সেবার হটলাইন নম্বর ৯৯৯-এর উদাহরণ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, পুলিশ জনগণের সেবক। বাংলাদেশের পুলিশ ইতোমধ্যেই জনগণের বিশ্বাস এবং আস্থা অর্জন করেছে। এখন ৯৯৯-এ ফোন করলেই পুলিশ দ্রুত ছুটে গিয়ে সেখানকার সমস্যার সমাধান করছেন। এতে জনগণ অত্যন্ত উপকৃত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি ১০ হাজার পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ পেয়েছেন। এই পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো ঘুষ এবং দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি । এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা। এই ঘটনা একটি সততার ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশ যখন স্বাধীন করা হয় তখন এদেশের ৮২ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আমাদের রাস্তাঘাট, পুল, ব্রিজ সব ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। ছিল না ব্যাংকে কোনো টাকা। গোলায় ছিল না ধান। তারপরেও রাতদিন পরিশ্রমের মাধ্যমে মাত্র সাড়ে তিন বছরে তিনি (বঙ্গবন্ধু) যখন বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে পরিণত করেন, তখনই ৭৫-এর ১৫ আগস্ট তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয় । সেখানে একজন পুলিশ কর্মকর্তাও শহীদ হয়েছিলেন। এসময় তিনি তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে তারা শুধু আমাদের পরিবারকে নিঃশেষ করেনি, তারা নিঃশেষ করেছে বাঙালি জাতির ভাগ্য, বাংলাদেশের সম্ভাবনাকে। বঙ্গবন্ধু যেভাবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, সেই সম্ভাবনাকে ধ্বংস করেছে তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে।
অনুষ্ঠানে সকাল সাড়ে নয়টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে তাকে ছালাম জানানো হয় এবং একই সঙ্গে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খোলা জিপে চড়ে প্যারেড পরিদর্শন করেন।
প্রধানমন্ত্রী পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) স্টল পরিদর্শন করেন এবং পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কল্যাণ প্যারেডে অংশগ্রহণ করেন।
প্রতিবারের মতো এবারও শুরু হয়েছে পুলিশ সপ্তাহ। এবারের পুলিশ সপ্তাহের মূল প্রতিপাদ্য ‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার’। আজ থেকে শুরু হওয়া ছয় দিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহের নানা কর্মসূচি চলবে শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) পর্যন্ত।
এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সারাদেশের বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত বিভিন্ন কন্টিনজেন্ট এবং পতাকাবাহী দলের নয়নাভিরাম প্যারেড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন।
এবারের পুলিশ সপ্তাহে প্যারেড অধিনায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দেন পুলিশ সদর দফতরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. ছালেহ উদ্দিন। তার নেতৃত্বে পরিচালিত প্যারেডে অংশ নেন সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য।
পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে ২০১৯ সালে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৪ জন পুলিশ সদস্যকে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)’, ২০ জনকে ‘রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)’, গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দমন, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য ২৮ জন পুলিশ সদস্যকে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম-সেবা)’ এবং ৫৬ জনকে ‘রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম-সেবা)’ দেয়া হয়।
সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই-নিরস্ত্র) মরহুম মো. আক্তার হোসেনকে বিপিএম (মরণোত্তর) পদক দেয়া হয়।