স্টাফ রিপোর্টার::
সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক সুনামগঞ্জ প্রতিদিনের উপদেষ্ঠা সম্পাদক কামরুজ্জামান চৌধুরী সাফি’র প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের উদ্যোগে শহিদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক রাইব্রেরি মিলনায়তনে শুক্রবার দুপুরে অনুষ্টিত স্মরণসভায় গুণীজন তাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করেন।
বক্তারা বলেন, কামরুজ্জামান চৌধুরী শাফী সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাব ভবনের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবেই নয় সারাজীবন সৎ সাংবাদিকদের সাহস ও ভরসার প্রতীক ছিলেন। তিনি কখনো অন্যায়ের সঙ্গে মাথা নত করেননি। আমৃত্যু তিনি দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে সংবাদ প্রকাশ করে পথিকৃৎ হয়ে আছেন। সাংবাদিকদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। বক্তারা বলেন, সুনামগঞ্জের সাংবাদিকতা জগতের আলোকিত নাম কামরুজ্জামান চৌধুরী। তিনি তার লেখনির মাধ্যমে সবসময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন। সাহসিকতার মধ্য দিয়ে কাজ করে গেছেন সবসময়। সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি থাকাকালে তিনি সাংবাদিকদের দাবি আদায়ে সোচ্ছার ছিলেন। কোথাও সাংবাদিকরা নির্যাতিত হলে সবার আগে কামরুজ্জামান চৌধুরী ছুটে আসতেন। বক্তারা বলেন, সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের যে ভবন রয়েছে সেটি কামরজ্জামান চৌধুরী’র অবদান এবং যা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। তিনি শুধু সাংবাদিকই নন তিনি সাংবাদিকতার অভিভাবক ছিলেন।
এখন সাংবাদিকতার নামে কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মানুষের চরিত্র হনন করছে। এগুলো সাংবাদিকতার নীতি নৈতিকতায় পড়েনা। মানুষের কল্যাণে কামরুজ্জামান চৌধুরীর শাফির মতো তরুণ প্রজন্মকে সাংবাদিকতা করার আহ্বান জানান বক্তারা।
সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি পংকজ কান্তি দে’র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক একেএম মুহিমের পরিচালনায় স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন, সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট অ্যাড. হোসেন তওফিক চৌধুরী, শহীদ জগৎজ্যোতি পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. সালেহ আহমদ, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নিগার সুলতানা কেয়া, সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি লতিফুর রহমান রাজু, দৈনিক সুনামগঞ্জ প্রতিদিনের সম্পাদক আহমদুজ্জামান চৌধুরী হাসান, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সেলিম আহমেদ, সাংবাদিক খলিল রহমান প্রমুখ।
স্মরণ সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সাংবাদিক শামস শামীম, নওশাত মসরু, এমরানুল হক চৌধুরী, মাসুক মিয়া, জাকির হোসেন, এরআর জুয়েল, রেজাউল করিম, আহমেদ মুজতবা রাজি, দিলাল আহমদ, মেহেদী হাসান, জেলা বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রিংকু চৌধুরী প্রমুখ।
উল্লেখ্য, কামরুজ্জামান চৌধুরী সাফি ১৯৪৯ সালের ২৫ জুন সুনামগঞ্জ শহরে জন্মগ্রহন করেন। লেখাপড়া শেষে তিনি প্রথমে ইউনাইটেড ব্যাংক পরবর্তীতে জনতা ব্যাংকে চাকুরী করেন। এক পর্যায়ে চাকুরীতে ছেড়ে শুরু করেন সাংবাদিকতা। সুনামগঞ্জের সাংবাদিকতার অন্যতম পথিকৃত আপন মামা সাংবাদিক আব্দুল হাইয়ের হাত ধরে সাংবাদিকতার হাতেখড়ি। তিনি দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার সুনামগঞ্জ মহকুমা প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিকতায় পদার্পন করেন। পরে দৈনিক আজাদী পত্রিকার মহকুমা প্রতিনিধি, দৈনিক দেশ, দৈনিক যুগভেরী ও দৈনিক খবর পত্রিকার সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি পদে দায়িত্ব পালন করেন। জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘদিন। সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের বর্তমান ভবন প্রতিষ্ঠায় তার নিরলস ভূমিকা ছিল প্রসংশনীয়। কামরুজ্জামান চৌধুরী জীবদ্ধশায় জেলার প্রথম জনপ্রিয় ও পাঠক সমাদৃত পত্রিকা সাপ্তাহিক সুনামগঞ্জ বার্তা পত্রিকার সম্পাদক প্রকাশক ছিলেন। সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি নির্বাচিত হন ৫ বার। তার সুপারিশে জেলা সদরে অনেক সংবাদকর্মীরা বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় চাকুরী পান। সাংবাদিকদের সফল নেতা ও অভিভাবক হিসেবে তিনি বটবৃক্ষের মতো সকলকে ছায়া দিয়ে রাখতেন। গেল বছরের ১০ জানুয়ারি রাত ১০ টায় ঢাকার পান্থপথের বিআরবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।