তাহিরপুর প্রতিনিধি::
সিলেট জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায় ব্যাপক অনিয়ম আর দুর্নীতির দায়ে বদলিকৃত ও চট্রগামের কর্নফুলি উপজেলা থেকে জনস্বার্থে ওএসডি কৃত ইউএনও বিজেন ব্যানার্জীর বিরুদ্ধে এবার সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পে মোটা অংকের টাকা আত্মসাত চেষ্ঠার অভিযোগ উঠেছে।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বড়ছড়া মৌজায় গুচ্ছগ্রাম নির্মাণে পিআইসি বা ঠিকাদার নিয়োগ না করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যানার্জী নিজেই একক কর্তৃত্বে প্রকল্পের কাজ করিয়ে মোটা অংকের টাকা আত্মসাত চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ প্রকল্প কমিটির সদস্যদের পাশ কাটিয়ে একক কর্তৃত্বে সমুদয় কাজটি সম্পন্ন করতে গিয়ে তিনি নানা অনিয়ম দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন।
সবার জন্য বাসস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিভিআরপি প্রকল্পের অধিনে চলতি অর্থবছরে বড়ছড়া মৌজায় গৃহহীন মানুষদের বসবাসের জন্য গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। প্রকল্পটি সম্পন্ন করতে তাহিরপুর উপজেলায় মোট ৬৯ লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু কাজের মান এবং নির্মান সামগ্রী দেখে স্থানীয়রা ধারনা করছেন ৩০ লক্ষ টাকার মধ্যেই প্রকল্প কাজ সম্পন্ন হবে।
ইতোমধ্যে ঘর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে তবে নির্মাণ কাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতা, অপরিকল্পিত আবাসন ব্যবস্থা, এমনকি গৃহহীন পরিবারের জন্য ঘর নির্মানের ক্ষেত্রে সকল সরঞ্জামাদি তৈরীর বালি,পাথর ও সিঙ্গেল খুবই নিম্নমানের ব্যাবহার করা হচ্ছে।
জানা যায়, উক্ত প্রকল্পের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদাধিকার বলে সভাপতি ও উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) সদস্য সচিব হবেন। কিন্তু সহকারী কমিশনার(ভূমি) না থাকায় দুটি পদের দায়িত্বে ইউএনও নিজে থাকায় ইচ্ছা মত প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি নিম্নমানের রড,এ্যাঙ্গেলসহ অন্যান্য গৃহ সামগ্রী ক্রয় করে অবকাঠামো তৈরীর কাজ চালিয়ে আসছেন। কিন্তু গুচ্ছগ্রামে বরাদ্দ পাওয়া সুবিধাভোগী গৃহহীন পরিবার নির্বাচন, নির্মাণ কাজ পরিচালনা, অর্থ ব্যয়, তদারকি কোথায়ও কমিটিভুক্ত সদস্যদের রাখা হয়নি।
গুচ্ছগ্রাম নির্মানের এলকায় সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ২ একর খাস জমির ওপর ৪০টি ঘর ও ৪০টি ল্যাট্রিন তৈরির জন্য প্রকল্প সভাপতি তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যানার্জী কমিটির অন্য সদস্যদের না জানিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার স্বার্থে উপজেলা সদরের সুর্য্যরেগাও গ্রামের স্বপন কুমার দাস ও পল্টু চক্রবর্তীকে নিযুক্ত করেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর পরই ঘর নির্মানের সরঞ্জামাদি সহ ল্যাট্রিন নির্মানকাজ প্রায় শেষ হওয়ার পথে। এ সকল নির্মান সামগ্রী তৈরীতে নিযুক্ত রাজমিস্ত্রী জানায়, ওই কাজের জন্য সর্বোচ্ছ ৩০ লাখ টাকা ব্যয় হতে পারে। কিন্তু নির্মাণ ব্যয়ের তথ্য ও প্রকল্পের বরাদ্দ সম্পর্কে ইউএনও বিজেন ব্যানার্জী সাংবাদিকদের তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যানার্জী বলেন, উপজেলা কমিটির সভাপতি এবং ইউএনও হিসেবে সব দায়-দায়িত্ব আমার। বিধায় কোথায় কী খরচ হয়েছে সে বিষয়ে অন্যদেরও কিছু বলার নেই। আর প্রকল্পের তথ্য জানতে হলে তথ্য অধিকার আইনে অফিসে এসে লিখিত আবেদন করবেন। তারপর তথ্য দেয়া যায় কি না বুঝব।
এলাকাবাসীর অভিযোগ এসব নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে অবকাঠামো তৈরী করা হলে নাম মাত্র অর্থ ব্যয় হবে। এবং যে কোন মহুর্তে দূর্ঘটনার আশংকা দেখা দিতে পারে। শুরু থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবযনা কার্যালয় তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে আসছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিলন কান্তি রায় এর নিকট প্রকল্পের কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, প্রকল্প এলাকায় ঘর নির্মাণের কাজ চলছে। আর এ বিষয়ে সকল কিছু জানেন ইউএনও স্যার।
সংশ্রিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান(শ্রীপুর উত্তর) খসরুল আলম জানান,গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের কাজের বিষয়ে আমাকে কোন কিছু অবগত করা হয়নি। তবে শুনছি পল্টু ও স্বপন নামের দুজন ব্যাক্তিকে দিয়ে তিনি কাজটি করাচ্ছেন।
তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ আবুল হোসেন খাঁন বলেন,বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের একটি গুরুত্বপুর্ন প্রকল্প হচ্ছে গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ। কিন্তু এ বিষয়ে আমাদের কোন কিছুই অবহিত করেননি ইউএনও।
সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন,গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প নির্মাণে টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করার কথা। যদি ঠিকাদার নিয়োগ না করে ইউএনও নিজে প্রকল্পের কাজ করান তাহলে তা সরকারি নিয়ম বহির্ভূত।
উল্লেখ্য, সিলেট জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায় যোগদান করার পর থেকেই নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন ইউএনও বিজেন ব্যানার্জী। দুর্নীতির মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও সরকারি রাজস্ব খাতের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছিল সেখানে। জানা যায়, সেখান থেকে বদলি হয়েই তাহিরপুরে যোগদান করেন তিনি।