বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জে সিভিল সার্জন হিসেবে নিয়োগের ১৯ দিনের মাথায় রহস্যজনক কারণে বদলি করা হয়েছে সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. তওহিদ আহমদ কল্লোলকে। জেলার স্বাস্থ্যখাতের পরিবর্তন ও উন্নয়নের কথা বলে জনগণকে আশাবাদী করা এই কর্মকর্তার হঠাৎ বদলির ঘটনায় ক্ষুব্দ হয়ে ওঠেছেন সুনামগঞ্জ জেলার সুধীজন। তারা সৎ ও সাহসী এই কর্মকর্তার বদলি স্থগিতসহ সুনামগঞ্জের স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
জানা গেছে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন হিসেবে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের পরিচালক (অর্থ ও ভা-ার) ডা. তওহিদ আহমদ কল্লোলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি সুনামগঞ্জের স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন ও পরিবর্তনসহ দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার বক্তব্য দেন। তার এমন বক্তব্যে আশাবাদী হন জেলাবাসী। সুধীজন জানান, দীর্ঘদিন ধরে সুনামগঞ্জের স্বাস্থ্যবিভাগ দুর্নীতির দুষ্ট চক্রে জর্জড়িত। সাবেক সিভিল সার্জন ডা. আশুতোষ দাসসহ স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতিবাজ চক্রের বিচারের দাবিতে জেলা শহরে একাধিক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে ওই চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর মধ্যে অভিযুক্ত সিভিল সার্জন ডা. আশুতোষ দাস গত ডিসেম্বর মাসে চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তার বদলে ডা. তওহিদ আহমদ কল্লোলকে সিভিল সার্জন হিসেবে নিয়োগ দিয়ে পাঠায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তিনি দায়িত্ব নেবার পর জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা হাসপাতালের সমস্যা চিহ্নিত করে এ থেকে উত্তরণের উদ্যোগ নেন। স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতিবাজ ও ফাঁকিবাজ চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগ নেন তিনি। কিন্তু স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন ও পরিবর্তনের আগেই ২০ দিনের মাথায় ২৮ জানুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাকে বদলি করে। বদলির আদেশ সুনামগঞ্জে এসে পৌঁছলে ক্ষুব্দ হয়ে ওঠেন সুধীজন। তারা এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে আজ বৃহষ্পতিবার মানববন্ধন ও প্রতিবাদের ডাক দিয়েছেন। সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন জেলার সুধীজন।
প্রখ্যাত সাংবাদিক ও দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে লিখেন, ‘ সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল নিয়ে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। তবু বিতর্কিতদের সরানো হয়নি। অথচ আজ যখন একজন সৎ দক্ষ সিভিল সার্জন এসে অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করে মানুষের মনে আশা জাগিয়েছেন তখনই তাকে বদলি!’ পীর হাবিবুর রহমান এ ঘটনায় জেলার সৎ মন্ত্রী এমএ মান্নানকে সৎ ও দক্ষ সিভিল সার্জনের পাশে দাড়ানোর আহ্বান জানান। সুনামগঞ্জ বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের আবাসিক চিকিৎসক (ইএনটি) ডা. নূরুল ইসলাম ফেইসবুকে লিখেন, ‘সততা আপনার মূল শত্রু। সুনামগঞ্জ জেলার স্বাস্থ্যখাতের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কান্না কখনই থামবেনা’। এভাবে শিক্ষক, সাংবাদিক, ছাত্র, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, আইনজীবীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সিভিল সার্জনের বদলি স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
সিলেট বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. দেবপদ রায় বলেন, বদলির বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। এটা মন্ত্রণালয় থেকে করা হয়েছে। তবে ডা. তওহিদ আহমদ একজন দক্ষ ও সৎ কর্মকর্তা হিসেবে স্বাস্থ্য বিভাগে পরিচিত।
সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, একজন সৎ, সাহসী ও যোগ্য সিভিল সার্জন অল্পদিনের সুনামগঞ্জবাসীর মন জয় করেছিলেন। তিনি স্বাস্থ্যখাতের মূল সমস্যা চিহ্নিত করে তা থেকে উত্তরণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। জনপ্রতিনিধি হিসেবে সহযোগিতা চেয়েছিলেন আমাদের। কিন্তু এই সৎ মানুষটিকে পুরস্কৃত করার বদলে ২০ দিনের মাথায় বদলি করা হয়েছে। এমন হলে ভালো মানুষেরা নিরুৎসাহী হবেন।