হাওর ডেস্ক ::
পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি বলেছেন, সরকারি কর্মকর্তারা প্রয়োজনেই বিদেশে যান। এ ক্ষেত্রে যথাযথভাবে অনুমোদনও নিতে হয়। অনেকেরই ধারণা, এ ব্যাপারে দুর্নীতি হচ্ছে। কারো কারো না গেলেও চলতো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে জনমনে যাতে বিভ্রান্তি না হয় তার জন্য যাচাইবাছাই করে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশে যাওয়ার অনুমোদন দেয়ার জন্য বলেছেন। কেউ অহেতুক বেড়ানোর জন্য বিদেশে যেতে চাইলে তা আমরা অনুমোদন করি না।
শনিবার দুপুরে হবিগঞ্জ সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভার প্রাক্কালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার হাওর এলাকার উন্নয়নের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। আমাদের হাওরের উন্নয়নের জন্য ৪০ হাজার কোটি টাকার একটি মাস্টার প্ল্যান আছে। উন্নয়নের জন্য আমরা কাউকে বঞ্চিত করি না। কারণ, অন্যায় থেকেই বঞ্চিত হওয়ার ঘটনা ঘটে। আমরা সত্য মোকাবেলায় কোনো ভয় পাই না। বি বাড়িয়া-সরাইল-নাছিরনগর আঞ্চলিক মহাসড়কটি বানিয়াচং আজমিরীগঞ্জ হয়ে সুনামগঞ্জের সাথে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মাধ্যমে ঢাকার সাথে সুনামগঞ্জের বিকল্প যোগাযোগব্যবস্থা সৃষ্টি হবে এবং দূরত্বও অনেক কমে যাবে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীত করণের কাজের বিষয়ে তিনি বলেন, এই প্রকল্পের জন্য আমাদেরকে অনেক চড়াই উত্রাই পেরুতে হয়েছে। পরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। আমরা মনে করি, ডিপিপি তৈরির মাধ্যমেই এর কাজ শুরু হয়ে গেছে। আমরা দ্রুত এই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে চাই। তবে আমরা কোনো সময়ই কোনো কাজ একেবারে সময়মতো শুরু করতে পারি না।
ঢাকার সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন আসলেই তা সঠিক হবে না এবং অহেতুক অভিযোগ আর নালিশ করা আমাদের স্বভাব। ঢাকার নির্বাচনে ভোটার কম হওয়ার কারণ হলো, জনগণ মনে করেন তারা ভালো আছেন। তাই বাসায় বসে আরাম করেন। সরকার তাদেরকে ভালোই রাখছে।
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসস আয়োজিত সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী বলেন, পুরাতন খোয়াই নদীর প্রকল্পের বিষয়ে তার আন্তরিকতা থাকবে। তবে মনে রাখতে হবে সৌন্দর্য্য বর্ধনের চেয়েও বেশি প্রয়োজন বড় কাজ। আমরা ছোটবেলা থেকেই জানি খোয়াই নদী হবিগঞ্জের দুঃখ। আমরা এই খোয়াই নদীকে হবিগঞ্জের সুখ বানাতে চাই। যেহেতু এই নদীটির বেশিরভাগ অংশ ভারতে এবং তারাই এই নদীর নিয়ন্ত্রণ করে, সেহেতু তাদের সাথে সমন্বয় করে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। আর না হলে আমাদের টাকা নষ্ট হবে। আমরা এমনিতেই বেশি সংশয়ে থাকি পানি প্রকল্প নিয়ে। তাই যাচাইবাছাই একটু বেশি হয়।
তিনি আরো বলেন, এখন বর্জ্য বেশি হয়ে গেছে। হবিগঞ্জ পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কোনো রিসাইকেল প্রকল্প গ্রহণ করা হলে তাতে আমার সহযোগিতা থাকবে। তবে দেখতে হবে অনেক যায়গাতেই এই রিসাইকেল প্রকল্প চালুর পর তা ঠিকে থাকে না। এর জন্য নাগরিকবোধ এবং শিক্ষার প্রয়োজন। হবিগঞ্জে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ও এখন পার্লামেন্টে যাবে। আশা করা যায় এটি দ্রুত বাস্তবায়ন হবে।
মন্ত্রী বলেন আগামীতে আদমশুমারির শুরু হবে। এটি জাতীয় কর্মসূচি। সবাই মিলে এই শুমারীকে সফল করতে হবে। তবে বর্তমানে জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার হ্রাস পাওয়ায় খুব বেশি জনগণ বৃদ্ধি হবে না বলেই আমার বিশ্বাস। দরিদ্র শ্রেণিতেই এখন লোকসংখ্যা বাড়ছে বেশি।
এই মতবিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন হবিগঞ্জ-২ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান, সিলেট রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি জয়দেব কুমার ভদ্র, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা, মেয়র মিজানুর রহমান মিজান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আলমগীর চৌধুরী ও সাবেক পৌর চেয়ারম্যান শহীদ উদ্দিন চৌধুরী।
এর আগে মন্ত্রী বানিয়াচং উপজেলার নাগুড়া এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক কার্যালয় পরিদর্শন করেন।
বিকেলে মন্ত্রী বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত হবিগঞ্জ-২ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান বেসরকারি সদস্যদের বিল ও বেসরকারি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মনোনীত হওয়ায় তাকে প্রদত্ত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে অংশগ্রহণ করেন। বানিয়াচং উপজেলা মাঠে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়।