1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫২ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

নির্ধারিত স্থানেই সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার সম্প্রসারণ ও সংস্কার চান মুক্তিযোদ্ধা জনতা

  • আপডেট টাইম :: মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২০, ১.৪৪ পিএম
  • ৪১৬ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি ::
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী ডিসএস রোডের ঐতিহাসিক স্থানে নির্মিত সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংস্কার ও সম্প্রসারণ চান মুক্তিযোদ্ধা-জনতা। বিভিন্ন সময়ে নির্ধারিত স্থানে শহীদ মিনার সংস্কার ও সম্প্রসারণের দাবিতে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নেওয়া হলেও এর কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। বরাবরই জনদাবি উপেক্ষিত থেকেছে। এদিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংস্কার ও সম্প্রসারণকাজ থমকে থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা-জনতা।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সনে গণজাগরণ মঞ্চের সময় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ক্ষুব্ধ নতুন প্রজন্ম শহীদ মিনার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে শহীদ মিনারের পূর্বের দেয়াল ভেঙে সম্প্রসারণ করে কর্মসূচি পালন করেছিলেন। তখন মুক্তিযোদ্ধারা তাদেরকে উপস্থিত থেকে সহযোগিতাও করেছিলেন।
১৯৭১ সনের ৬ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ হানাদার মুক্ত হয় এবং ১৬ ডিসেম্বরের পূর্বেই এই শহীদ মিনারটি নিজ হাতে তৈরি করেন মুক্তিযোদ্ধারা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীসহ সাধারণ জনতা এই শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের মাধ্যমে বিজয় দিবস পালন করেন। এরপর থেকেই এই শহীদ মিনারেই বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, শহীদ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হচ্ছে। তাছাড়া স্থানীয় সাংস্কৃতিক ও প্রগতিশীল সংগঠনগুলো এখানেই নিয়মিত কর্মসূচি পালন করে থাকে। প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও দেশেপ্রেমের প্লাটফর্ম হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে ওই অনন্য শহীদ মিনার।
মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ২০১৫ সালে সর্বশেষ তৎকালীন মেয়র প্রয়াত আয়ূব বখত জগলুল শহীদ মিনারটি সংস্কার করেছিলেন। এর আগে সুনামগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদে এক মতবিনিময়ে এখানেই শহীদ মিনারটি সম্প্রসারণের মত দিয়েছিলেন জনতা। পরে সুনামগঞ্জ পৌরসভায় সুধীজনের এক মতবিনিময়ে তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিকের উপস্থিতিতে সুধীজন নির্ধারিত স্থানেই শহীদ মিনার সম্প্রসারণের দাবি জানালে তারা দাবির প্রতি একাত্মতা জানিয়ে ঐতিহাসিক এই স্থানেই সম্প্রসারণের মতামত দেন। ওই সভায় সুনামগঞ্জের কয়েকজন নেতাকে এই কাজের জন্য ঢাকায় যোগাযোগের দায়িত্ব দেওয়া হলেও ওই উদ্যোগটিরও আর খবর নেই। এভাবে বারবার বিষয়টি আড়ালে পড়ে যায়। সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভিতরে শহীদ মিনার দুইবার স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেন জনতা।
সুনামগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সদস্যসচিব মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীর নির্ধারিত স্থানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার রক্ষায় আদালতে দ্বারস্থও হয়েছিলেন। ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে তৎকালীন জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম সুনামগঞ্জ শহীদ মিনার সম্প্রসারণ ও সংস্কার নিয়ে নাগরিকদের নিয়ে জরুরি এক মতবিনিময় সভা করেছিলেন তাঁর কার্যালয়ে। ওই সভায় উপস্থিত সুধীজন আবেগ, ঐতিহ্য ও ইতিহাসের সুবর্ণক্ষণে স্থাপিত শহীদ মিনারটি যথাস্থানেই সম্প্রসারণের ঐক্যবদ্ধ মতামত দিয়েছিলেন। ওইদিন উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা যথাস্থানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সম্প্রসারণের উপর জোরালো বক্তব্য দিয়ে সুধীজনকে আবেগাপ্লুত করেন। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের রক্ত শুকাতে না শুকাতেই ১৯৭১ সনের ১৬ ডিসেম্বরের আগেই নির্মিত দেশের অনন্য শহীদ মিনারটির নির্মাণ ইতিহাস উপস্থাপন করে ওইদিন এক আবেগাপ্লুত পরিবেশের সৃষ্টি করেন। সুধীজন এখানে শহীদ মিনার সম্প্রসারণ না করলে যে কোন মূল্যে নিজ উদ্যোগে সম্প্রসারণ করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তারপরও প্রশাসনিক জটিলতায় ওই উদ্যোগটিও বেশি দূর অগ্রসর হয়নি। তবে সম্প্রতি শহীদ মিনারটি সংস্কার না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন মুক্তিযোদ্ধা জনতা। তারা অবিলম্বে শহীদ মিনারটি সংস্কার ও সম্প্রসারণে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। আগামী ২১ ফেব্রুয়ারির আগেই শহীদ মিনারটি সংস্কার করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
সুনামগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীর বলেন, প্রায় অর্ধশত বছর ধরে আমাদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি ইতিহাস, ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্ব করছে। আমাদের আবেগের এই শহীদ মিনারটি অনন্য শহীদ মিনার। কিন্তু স্থান নিয়ে প্রশাসনিক জটিলতার কারণে আমাদের ঐতিহ্য ও সংগ্রামের প্রোজ্জ্বল স্মারকটি হারিয়ে যেতে বসেছে। এটা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মেনে নিতে পারিনি বলেই আমি এ সম্পর্কিত মামলায় পক্ষভুক্ত হওয়ার আবেদন করেছিলাম। তিনি আরো বলেন, বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছি সুনামগঞ্জ পৌরসভার অনুমতি ছাড়াই শহীদ মিনার ঘিরে দোকানপাট নির্মাণ করা হচ্ছে। আমি সুনামগঞ্জ পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে এ ব্যাপারে তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চাইবো।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, এই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি যথাস্থানে সম্প্রসারণের জন্য একাধিকবার প্রশাসনিক উদ্যোগ ও স্থানীয় উদ্যোগে মতবিনিময় হয়েছে। এতে আমাদের মন্ত্রী, এমপি, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানসহ শীর্ষ রাজনীতিবিদগণ উপস্থিত ছিলেন। সবাই এখানেই শহীদ মিনার সম্প্রসারণের মতামত দিয়েছিলেন। তারপরও কেন হচ্ছেনা এটা একটা রহস্য।
সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান বলেন, আমাদের শাশ্বত চেতনায় এই শহীদ মিনার প্রাণের স্পন্দন হিসেবে বিবেচিত। এটা অপসারণ করার সাহস ও ক্ষমতা কাউকে আমরা দেই নাই। আমরা এই শহীদ মিনারটি সম্প্রসারণের জন্য রাস্তায় নেমে একাধিকবার কর্মসূচি পালন করেছি। মতবিনিময়ে সবাই সম্প্রসারণের মত দিয়েছি। কিন্তু কেন এটা হচ্ছেনা জানিনা। তিনি বলেন, সম্প্রসারণ না হলে নিজ উদ্যোগেই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমরা উদ্যোগ নিতে বাধ্য হবো।
আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য ও সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আফতাব উদ্দিন বলেন, সুনামগঞ্জ শহীদ মিনার সম্প্রসারণের জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি। সেই সাথে সংস্কারেরও। কিন্তু কোনটাই হচ্ছে না। আমাদের ঐতিহাসিক এই শহীদ মিনারটি রক্ষা করতে হবে।
সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, সুনামগঞ্জ শহীদ মিনার সম্প্রসারণের জন্য আমরা অনেকবার মতবিনিময় করে মতামত দিয়েছি। মুক্তিযোদ্ধা-জনতার মতামত উপেক্ষিতই রয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য হতাশার।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!