হাওর ডেস্ক ::
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দেশে ৩৪০টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ৪৪৫ জন। আহত ৮৩৪ জন। নিহতের মধ্যে শিশু ৩৯ এবং নারী ৮১ জন।
এককভাবে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। ৮৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১০৩ জন, যা মোট নিহতের ২৩.১৪ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ২৬.১৭ শতাংশ।
সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়, দুর্ঘটনায় ১২২ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২৭.৪১ শতাংশ। নিহতের মধ্যে ৩৩ জন বাসযাত্রী, ২৮ জন প্রাইভেটকার ও মাইক্রোযাত্রী, ২৪ জন ট্রাক ও পিকআপ ভ্যান যাত্রী, ১০৬ জন থ্রি-হুইলার যাত্রী। যাবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ২৯ জন।
দুর্ঘটনায় ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষ নিহত হয়েছেন ৩১৭ জন, যা মোট নিহতের ৭১.২৩ শতাংশ।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানায়, জানুয়ারি মাসে আঞ্চলিক সড়কে ১৮৪টি (৫৪.১১%) এবং মহাসড়কে ১৫৬টি (৪৫.৮৮%) দুর্ঘটনা ঘটেছে।
দুর্ঘটনার ধরন পর্যবেক্ষণ করে সংগঠনটি বলছে, মুখোমুখি সংঘর্ষে ৬১টি (১৭.৯৪%), নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বা উল্টে ৮৯টি (২৬.১৭%), সাইড দিতে চলতে গিয়ে ৬৬টি (১৯.৪১%) দুর্ঘটনা ঘটেছে। চাপা দেয়ার ঘটনা ঘটেছে ১২২টি (৩৫.৮৮%)।
দুর্ঘটনায় দায়ী যানবাহনের সংখ্যা ৪৬৯টি। এর মধ্যে বাস ৭০টি, ট্রাক ও পিকআপ ৯৭টি, কাভার্ডভ্যান ১৬টি, লরি ও ট্রাক্টর ২৩টি, কার ও মাইক্রোবাস ৩৩টি, মোটরসাইকেল ৮৯টি, বাইসাইকেল ১৬টি, নসিমন-করিমন-আলমসাধু-মাহেন্দ্র-৮৭টি, সিএনজি-ইজিবাইক ৩৩টি, টমটম দুটি, পাওয়ার টিলার একটি, ট্রলি একটি ও পুলিশ জিপ একটি।
এছাড়া ১১টি রেল দুর্ঘটনায় ৯ জন এবং ৮টি নৌ-দুর্ঘটনায় সাতজন নিহত হয়েছেন।
সাতটি জাতীয় দৈনিক, চারটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।
সড়ক দুর্ঘটনার কারণ
১. ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন;
২. বেপরোয়া গতি;
৩. চালকের অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা;
৪. বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা;
৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল;
৬. তরুণ ও যুবাদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো;
৭. জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা;
৮. দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা;
৯. বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি এবং
১০. গণপরিবহণ খাতে চাঁদাবাজি।
সড়ক দুর্ঘটনারোধে একগুচ্ছ সুপারিশ করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। সুপারিশগুলো হলো-
১. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বাড়াতে হবে;
২. চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে;
৩. বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে;
৪. পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে;
৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্বরাস্তা তৈরি করতে হবে;
৬. পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে;
৭. গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে;
৮. রেল ও নৌপথ সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে সড়ক পথের ওপর চাপ কমাতে হবে এবং
৯. বারবার কমিটি গঠন এবং সুপারিশমালা তৈরির চক্র থেকে বেরিয়ে টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা পোষণ করতে হবে।