বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সৌন্দর্য্য নষ্ট করে এবং শহিদ মিনার সংকুচিত করে দুই দিকে বাণিজ্যিক স্থাপনা অপসারণের জোরালো দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা। তারা এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আগামী ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সৌন্দর্য্য ফিরিয়ে এনে হঠাৎ তৈরি করা স্থাপনা গুড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।
মঙ্গলবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালকের কক্ষে অনুষ্ঠিত এক জরুরিসভায় এসব কথা জানান মুক্তিযোদ্ধারা।
সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় মুক্তিযোদ্ধা ও সুধীজন বক্তব্য দেন। ‘সুনামগঞ্জ শহিদ মিনারের জায়গা সংক্রান্ত মামলার সর্বশেষ অবস্থা এবং জায়গার মালিকানা সংক্রান্ত তথ্যভিত্তিক বাস্তব প্রতিবেদন দাখিলের জন্য গঠিত উপ-কমিটি’র জরুরি সভায় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আলী আমজদ বলেন, শহিদ মিনারের দুই দিকে রাতারাতি অবিবেচকের মতো বাণিজ্যিক মার্কেট করে শহিদ মিনারকে শ্রীহীন করা হয়েছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমাদের আবেগ-শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার এই পবিত্র স্থানকে অবজ্ঞা করে যারা এটা করেছে তারা বিবেকহীন। এই স্থাপনা গুড়িয়ে দেওয়া না হলে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা রাস্তায় নামবো।
সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমা-ার আব্দুল মজিদ বলেন, আমাদের শহিদ মিনারকে অস্থিত্বহীন দেখিয়ে একটি মহল দখল প্রতিষ্ঠা করতে প্রশাসনিক অনুমতি না নিয়েই মার্কেট করেছে। এতে আমাদের শহিদ মিনারের সৌন্দর্য্যই আড়াল হয়নি, আমাদের শহিদ মিনারের দেয়াল ঘেষে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রেখে এটাকে চূড়ান্তভাবে অবমাননা দেখিয়েছে। আগামী ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই স্থাপনা উচ্ছেদ করা না হলে আমরা মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ করে নিজেরাই এই স্থাপনা গুড়িয়ে দেব।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সদস্যসচিব মালেক হুসেন পীর বলেন, শহিদ মিনারের দুই দিকের স্থাপনার বিষয়ে আমি পৌরসভায় তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেছিলাম। জবাবে জানতে পেরেছি অনুমতি না নিয়েই স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, শহিদ মিনারের সঙ্গে দেশদ্রোহীরাও এমন গর্হিত কাজ করতে সাহস দেখাবেনা। কিন্তু একটি মহল আমাদের গৌরবের শহিদ মিনারকে অশ্রদ্ধা করেই ক্ষান্ত হয়নি নিষেধাজ্ঞার মতো দুঃসাহসও দেখাচ্ছে। তিনি বলেন, অর্ধ শতাব্দীর দৃশ্যমান শহিদ মিনারের পক্ষভূক্ত হতে আমি কয়েক বছর আগে আবেদন করেছিলাম, আমার আবেদন ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু বলেন, শহিদ মিনারের দুই পাশে হঠাৎ স্থাপনা গড়ে ওঠায় মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষুব্দ হয়েছেন। শহিদ মিনার সম্প্রসারণ নিয়ে আমরা গত কয়েক বছর ধরে আলোচনা করছি। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছেনা। যার কারণে মুক্তিযোদ্ধা জনতা ক্ষুব্দ হয়েছেন। তারা আগামী ২১ ফেব্রুয়ারির আগেই স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে চান।
‘সুনামগঞ্জ শহিদ মিনারের জায়গা সংক্রান্ত মামলার সর্বশেষ অবস্থা এবং জায়গার মালিকানা সংক্রান্ত তথ্যভিত্তিক বাস্তব প্রতিবেদন দাখিলের জন্য গঠিত উপ-কমিটির আহ্বায়ক ও স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেন বলেন, সুনামগঞ্জ শহিদ মিনারের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে আজ সভা হয়েছে। সভায় মুক্তিযোদ্ধারা দাবি করেছেন দীর্ঘ ৫০ বছরের এই প্রতিষ্ঠানটির দুই দিকের স্থাপনা অপসারণের। আমি এ বিষয়ে আজকের মতবিনিময় সভার বক্তব্যের আলোকে প্রতিবেদন জমা দিব।