হাওর ডেস্ক ::
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপনে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টির জন্য অর্থ ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি নীতিমালা করেছে সরকার।
‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন সম্পর্কিত নাগরিক তহবিল ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২০’ এর নামে কার কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করা যাবে এবং কীভাবে ব্যয় নির্বাহ করা যাবে, তার বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে এতে।
নীতিমালা অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অর্থ দিতে পারলেও যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা পরিবারের সদস্য থেকে অনুদান গ্রহণ করা যাবে না।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা নীতিমালাটি সম্প্রতি গেজেটে প্রকাশ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ যথাযথভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে দেশ ও বিদেশে বছরব্যাপী বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব কার্যক্রম বা অনুষ্ঠানের ব্যয় মেটানোর জন্য ইতোমধ্যে সরকার বাজেটও দিয়েছে।
বর্তমানে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ উদযাপন কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির পক্ষ থেকেও আগ্রহ প্রকাশ করা হচ্ছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে জনআকাঙ্ক্ষার প্রতি খেয়াল রেখে জন্মশতবর্ষ উদযাপনে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বেসরকারি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের জন্য সরকার নীতিমালাটি তৈরি করেছে।
ব্যক্তি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের ক্ষেত্রে নীতিমালা যথাযথ ভূমিকা পালন করবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে এও বলা হয়, নাগরিক তহবিল পরিচালনার জন্য যেকোনো তফসিলি ব্যাংকে হিসাব পরিচালিত হবে। আর জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও প্রধান সমন্বয়কের যৌথ স্বাক্ষরে ব্যাংক হিসাব পরিচালনা হবে।
তহবিলে অনুদান দেওয়ার যোগ্যতার বিষয়ে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান, যাদের বৈধ আয়ের উৎস আছে এবং কোনো স্বার্থের সংঘাত নেই, তারা অনুদান দেবেন। অনুদান সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাধীন অর্থাৎ অনুদানের বিপরীতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো সুবিধা দাবি করা যাবে না। তবে যুদ্ধাপরাধ বা গণহত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা পরিবারের সদস্য থেকে অনুদান গ্রহণ করা যাবে না।
তহবিল ব্যবহারের খাত নির্ধারণ ও অনুমোদন নিয়ে বলা হয়, জন্মশতবর্ষ উদযাপনে যথাযথ উৎসব আয়োজন, জন্মশতবর্ষের প্রতি লক্ষ্য রেখে জনকল্যাণে গৃহীত সেবাধর্মী কার্যক্রম, জন্মশতবার্ষিকীর সঙ্গে মিল রেখে সুনির্দিষ্ট উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। তবে তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দের আগে সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি থেকে অনুমোদিত হতে হবে।
স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে বলা হয়, যেকোনো ব্যয়ের ক্ষেত্রে নিজস্ব অর্থ খরচের মতো সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। প্রতিটি ব্যয়ের বিপরীতে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার পাশাপাশি ভাউচারগুলো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির স্বাক্ষরসহ যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। সব ব্যয় ক্রস চেকের মাধ্যমে নির্বাহ করতে হবে।
অনুদান দাতার তথ্য সংরক্ষণের ব্যাপারে বলা হয়, অনুদান প্রদানকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিস্তারিত তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে এবং অনুদানের অর্থ ক্রস চেক বা ব্যাংক ড্রাফট আকারে গ্রহণ করতে হবে। কোনো প্রকার নগদ অর্থ গ্রহণ করা যাবে না।
বিদেশে বসবাসকারী বা চাকরিরত বাংলাদেশের নাগরিক বা তার বা তাদের মালিকানাধীন পজিশন থেকে অন্য অর্থ গ্রহণ করা যাবে।
খরচের বিবরণ দৈনন্দিন ভিত্তিতে সুনির্দিষ্টভাবে ক্যাশ বইয়ে লিপিবদ্ধ করতে হবে এবং ভাউচারগুলো কমপক্ষে পাঁচ বছর সংরক্ষণ করতে হবে।
জন্মশতবর্ষ উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি বা অন্যকোনো কমিটির সভাপতি, সদস্য, সরকারি বা বেসরকারি কর্মচারীর দেশ বা বিদেশে ভ্রমণ বা সম্মানী বাবদ এ তহবিলের অর্থ ব্যয় করা যাবে না।
অনিয়মিত বা বেআইনিভাবে বা এ নীতিমালা অনুসরণ না করে কোনো ব্যয় করা হলে এটা অনুমোদনকারী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ এবং এ ধরনের ব্যয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ দায়ী হবেন।
জন্মশতবর্ষ উদযাপনের ব্যয় নির্বাহের পর নীতিমালা অনুযায়ী গঠিত ব্যাংক হিসেবে কোনো অব্যয়িত অর্থ থাকলে, তা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা করণের মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে হবে।
নাগরিক তহবিলের জন্য অর্থ সংগ্রহ এবং তহবিল থেকে অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।
নীতিমালার বিষয়ে কোনো অস্পষ্টতা পরিলক্ষিত হলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন জাতীয় কমিটির ব্যাখ্যাই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
এ নীতিমালা সংশোধনের প্রয়োজন হলে প্রয়োজনীয় সংশোধন সংযোজন করা যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।