বিশেষ প্রতিনিধি::
জেলা জজ কর্তৃক সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার এলাকায় বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণ ও শহিদ মিনার নিয়ে কটুক্তি ও অবজ্ঞার প্রতিবাদে সুনামগঞ্জের সর্বস্তরের মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিবাদে কালো কাপড়ে শহিদ মিনার ঢেকে দিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। অবিলম্বে শহিদ মিনার এলাকা থেকে বাণিজ্যিক মার্কেট অপসারণ ও শহিদ মিনারের অস্তিত্ব অস্বীকার করে জেলা জজের নাজির কর্তৃক দায়েরকৃত মামলা বাতিলের দাবিতে সুনামগঞ্জ জেলার সর্বস্তরের মুক্তিযোদ্ধারা এই বিক্ষোভে অংশ নেন। এদিকে এই দাবিতে প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, মুুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীসহ বিভিন্ন মন্ত্রী ও সচিব বরাবরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা। রবিবার সকাল ১১টায় বিক্ষুব্দ মুক্তিযোদ্ধারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল দিয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির সভায় প্রবেশ করে শহিদ মিনার এলাকায় অবৈধ বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণের প্রতিবাদ করেন এবং প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেন। পরে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে শহর প্রদক্ষিণ করে তারা সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এসে শহিদ মিনার কালো কাপড়ে ঢেকে দিয়ে প্রদিবাদী অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। মুক্তিযোদ্ধারা জেলা জজের বদলি ও শহিদ মিনার অবমাননায় তার বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন।
রবিবার সকাল ১০টায় সুনামগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদে জড়ো হোন প্রায় তিন শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা। তারা হাতে লাঠি ও জাতীয় পতাকা নিয়ে শহিদ মিনার এলাকায় সম্প্রতি গড়ে তোলা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অপসারণের মিছিল দিয়ে জেলা প্রশাসকের কাঁর্যালয়ে পৌছান। সেখানে তখন জেলা আইন শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির সভা চলছিল। বিক্ষুব্দ মুক্তিযোদ্ধারা ‘শহিদ মিনার দখল করে যারা/পাকিস্তানের প্রেতাতœা তারা’ স্লোগান দিয়ে আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় ডুকে পড়ে জেলা জজের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। এর আগে তারা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ থেকে হেটে হেটে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পৌঁছান। সেখানে জেলা আইন শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির সভা চলাকালে সম্মেলন কক্ষে ডুকে পড়েন বিক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধারা। তারা শহিদ মিনার এলাকায় জেলা জজ কর্তৃক সম্প্রতি নির্মিত বাণিজ্যিক মার্কেট অপসারণের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ ও পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান স্মারকলিপি গ্রহণ করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির মাধ্যমে সরকারি সংশ্লিষ্ট দফরে এটি প্রদান করবেন এই আশ্বাস দিলে তারা ফিরে আসেন।
এসময় আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপস্থিত জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ জেলা পর্যায়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান কর্মসূচি দেখে হতবম্ভ হয়ে পড়েন। তারা ক্ষুব্দ মুক্তিযোদ্ধাদের বুঝিয়ে বিদায় করার পর মুক্তিযোদ্ধারা আবারও বিক্ষোভ মিছিল দিয়ে সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এসে প্রতিবাদ স্বরূপ কালো কাপড়ে শহিদ মিনার ঢেকে দিয়ে দখলের প্রতিবাদ জানান। পরে শহিদ মিনার চত্বরে বসে তারা অবস্থান কর্মসূচিতে বসেন। বর্তমানে সেখানে তারা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন।
স্মারকলিপিতে মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১ সনের ৬ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ শহর শত্রুমুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধারা শহরের ডিএস রোডের উচু ভূমিতে (গণপূর্ত বিভাগের মালিকানাধীন) শহিদদের স্মরণে নিজেরাই শহিদ মিনার নির্মাণ করে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেই ১৯৭১ সনের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উদযাপন করেন। এরপর থেকেই প্রতিটি জাতীয় দিবসে শহিদদের শ্রদ্ধাঞ্জলিসহ কর্মসূচি পালন করে আসছেন। গত জানুয়ারি মাসে শহিদ মিনারের পূর্ব ও পশ্চিম পার্শে সুনামগঞ্জ জেলা জজ রাতের আঁধারে দুটি বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণ করেন। এর প্রতিবাদ করে মুক্তিযোদ্ধারা ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহিদ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পন বর্জনের হুমকি দিলে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারকের নেতৃত্বে পূর্বদিকের মার্কেটটি অপসারণ করা হয়। কিন্তু পশ্চিম দিকের মার্কেটটি বিপুল অংকের টাকা দিয়ে ভাড়া দেওয়া হয়। এদিকে ২১ ফেব্রুয়ারি চলে যাওয়ার কয়েকদিন পরই আবার রাতের আঁধারে পূর্বপাশের বাণিজ্যিক স্থাপনা অপসারণস্থলে কাঁটাতার দিয়ে বেড়া দিয়ে কলাগাছ রোপন করে শহিদ মিনারের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করা হয়। এঘটনায় আবারও বিক্ষুব্দ হয়ে ওঠেন মুক্তিযোদ্ধারা। তারা গত ১ মার্চ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত স্বাধীনতা দিবস প্রস্তুতি অনুষ্টানে আগামী ২৬ মার্চ শহিদ মিনার দখলের প্রতিবাদে কর্মসূচি বর্জনের হুমকি দেন। এর প্রতিবাদে মুক্তিযোদ্ধারা শহিদ মিনার রক্ষার দাবি জানান। তাছাড়া একই শহরের পুরাতন কোর্ট এলাকায় জেলা জজের কর্মচারীরা গরুর খামার, রিক্সার গ্যারেজ, রেস্টুরেন্ট, মোদী দোকানসহ মার্কেট করে ভাড়া দিয়ে ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা আড়ালের নিন্দাও জানান স্মারকলিপিতে। পাশাপাশি গত দুই বছর ধরে সুনামগঞ্জের স্থায়ী বাসিন্দা ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের বঞ্চিত করে আদালতে বাইরের কর্মচারী নিয়োগ দেয়ায় সেটা বাতিলের দাবিও জানান তারা।
এদিকে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে প্রতিবাদী কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমা-ার হাজী নূরুল মোমেন, সাবেক ডেপুটি কমা-ার আবু সুফিয়ান, সদর উপজেলার সাবেক কমা-ার আব্দুল মজিদ, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমা-ার আতাউর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীরসহ প্রমুখ। প্রতিবাদী কর্মসূচিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের জনতাও সংহতি জানিয়ে অংশ নেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, আমাদের আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভা চলাকালেই মুক্তিযোদ্ধারা সভায় ডুকে শহিদ মিনার এলাকায় বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ ও শহিদ মিনারের অস্তিত্ব অস্বীকার করে মামলা করার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা আমাদেরকে তাদের দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি মাননীয় প্রধানমনন্ত্রীর কাছে প্রেরণের জন্য দিয়েছেন। আমরা সেটা পাঠিয়ে দেব।