হাওর ডেস্ক::
চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথমে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হলেও বর্তমানে বিশ্বের একশ ১৯টি দেশে ছড়িয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও বেশি আতঙ্ক ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস।
তবে জীবাণু ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু উপায়ে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আতঙ্কিত না হয়ে করোনা থেকে বাঁচার এসব উপায় জেনে নিন।
১. সরকারের উচিত বিনামূল্যে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা করা। চীন, জাপান থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সরকারি খরচে করোনা শনাক্ত ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে। কারণ, সরকারিভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের শনাক্ত করা না গেলে এটি আরো ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়বে। নিজ খরচে করোনা শনাক্ত ও তারপর চিকিৎসার ব্যয়ের কথা বিবেচনা করে অনেকেই হাসপাতালে যাবে না; যা মহামারি বাধানোর জন্য অত্যন্ত শঙ্কার।
২. জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত, তাদের কর্মীদের বাড়িতে থেকে কাজ করার সুযোগ দেওয়া।
৩. অনলাইনে কিংবা টেলিফোনে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে পরামর্শ নেওয়া ভালো। একেবারেই প্রয়োজন না হলে, ডাক্তারের চেম্বারে না যাওয়া উচিত। কারণ, এরই মধ্যে জানা গেছে, বেশ কয়েকজন ডাক্তার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অবস্থায় রোগী দেখেছেন। আর ডাক্তারের কাছে যেহেতু অসুস্থরাই যান, সে ক্ষেত্রে আক্রান্তের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ স্থান এড়িয়ে চলা উত্তম।
৪. জীবাণু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি বছরের এপ্রিলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রোগী ভর্তির হার লাফিয়ে বেড়ে যেতে পারে। যাদের মধ্যে কিছুসংখ্যক রোগীর অবস্থা গুরুতর হতে পারে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগীকে অক্সিজেন দিয়ে রাখতে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আগে থেকেই নির্মল বাতাস গ্রহণের চেষ্টা করতে হবে। বায়ূ দূষণ কমানোর চেষ্টা করতে হবে এবং দূষিত এলাকা এড়িয়ে চলা দরকার।
৫. স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের আপাতত ছুটি বাদ দেওয়া উচিত। অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক এবং নার্সদেরও ফিরিয়ে নিয়ে আসা দরকার। কারণ, চিকিৎসকদেরও অনেকেই আক্রান্ত হওয়ার কারণে সেবা দিতে পারবেন না। সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে সেনাবাহিনীর নিয়ম পালনের বিকল্প নেই।
৬. গৃহহীন থেকে শুরু করে কারাগারে থাকা বন্দিদেরও সুরক্ষার কথা ভাবতে হবে। তাদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া ব্যক্তিদেরও যথেষ্টভাবে (করোনা) পরীক্ষার পর ঢুকতে দেওয়া উচিত।
৭. আক্রান্তদের নিরাপত্তার সহিত হাসপাতালে নিয়ে আসার ব্যবস্থা থাকতে হবে। একইভাবে পরিবারের কেউ আক্রান্ত হলে কিংবা জরুরি পরিস্থিতিতে হাসপাতালে যাওয়ার যানবাহনের ব্যাপারে আগে থেকেই ভাবনা থাকা দরকার।
৮. একসঙ্গে বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে সেবা দেওয়ার সামর্থ্য সরকারের থাকা উচিত। এমনকি নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে জনগণের সুস্থতার ব্যাপারে সরকারের আরো গভীরভাবে ভাবা উচিত। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গেলে নিজের থেকে খরচ বহনের মতো আগাম প্রস্তুতিও নেওয়া দরকার।
৯. প্রতিষ্ঠানের উচিত কর্মী অসুস্থ হলে তাকে ছুটি দিয়ে দেওয়া। এই সময়ের পারিশ্রমিকও দেওয়া উচিত। কোনোভাবেই এই দুর্দিনে বিনা বেতনে ছুটি দেওয়া উচিত হবে না।
১০. সরকারিভাবে মাস্ক থেকে শুরু করে অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রী উৎপাদনের পথে হাঁটা যেতে পারে। এসব উৎপাদনে ভর্তুকিও দেওয়া যেতে পারে। হাসপাতালগুলোকে সুরক্ষা সামগ্রী যথেষ্ট পরিমাণে রাখতে হবে। ব্যক্তি উদ্যোগেও সচেতন হতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার পাশাপাশি খেয়াল রাখা দরকার, যেন অন্যের দ্বারা আক্রান্ত না হয়ে যান।
১১. যত দ্রুত সম্ভব স্কুল-কলেজগুলো বন্ধ ঘোষণা করা দরকার। এর আগেও এ ধরনের পরিস্থিতিতে দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ফল ইতিবাচক দেখা গেছে। তবে, প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে শিক্ষার্থীদের কেবল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার ব্যবস্থা থাকে। এই সময়ে ঘরে বসে তারা যেন শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে, তার ব্যবস্থা রাখা দরকার। তাদেরকে শিক্ষার সামগ্রী সরবরাহ করা উচিত। তারা যেন পড়াশোনার গতি থেকে হুট করেই থমকে না যায়, সেটাও দেখা দরকার।
১২. সর্বোপরি নিজেরা সচেতন থাকতে হবে। কারো সঙ্গে হাত মেলানো থেকে বিরত থাকা দরকার। অহেতুক মুখমণ্ডল স্পর্শ না করাই ভালো। হাঁচি-কাশিতে জীবাণু থাকে। সাবান কিংবা হ্যান্ডওয়াশ ব্যবহার করতে হবে।
সৌজন্যে: দৈনিক কালের কণ্ঠ।