প্রতিদিন খুব সকালেই মোটরবাইক দিয়ে হাসপাতলে যাই। অল্প একটু রাস্তা। সিলেটের সাগরদীঘির পাড় থেকে ওসমানী হাসপাতাল। নবাব রোড ও বাঘবাড়ি রাস্তার সংযোগ স্থলে প্রতিদিনকার মতোই অনেক দিনমজুর কোঁদাল, কাঁচি, ওরা, ডুছুন ইত্যাদি নিয়ে এবং অনেকে খালি হাতে বসে থাকে। পুরুষের তুলনায় মহিলাদের সংখ্যাটাই বেশি।
দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে করোনাকাল মোকাবেলা করার জন্য এই সব দিন মজুর শ্রেণীর মেহনতি মানুষদের কাজের কর্মক্ষেত্র একেবারে শূণ্যের কোটায় এসে পৌঁছেছে। তার সাথে যোগ হয়েছে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি। কিন্তু জীবন ও পরিবারের কঠিন হিসাব-নিকাশ মেলাতে তারা প্রতিনিয়তই জড়ো হচ্ছে শ্রম বেঁচার এই হাটে। সঙ্কার বিষয় হলো করোনাকালের জন্য ভোগের হাট উর্ধ্বগতি হলেও শ্রমের হাট যে আজ বড়ই স্থবির!
আজ মোটরবাইক থামিয়ে ছিলাম কেনো জানি না, তবে থামিয়ে টের পেয়েছি, অসহায়ত্বের মায়া সাগরে হয়তো ডু্বতে বসছি, আমরা সবাই।
-‘ আমারে নেন স্যার, দয়া করে আমাকে নেন!’
-‘আমি সব কাম করতে পারি স্যার, সব কাম, আমারে নেন!’
-‘কোঁদাল-পাতি লগে আছে, স্যার। আমারে নেন!’
-‘টেহা-পয়সা নিয়া কোনু ভাববেইন না, স্যার। যা দিবেন তাই নিমু, আমারে নেন!’
-‘………………………………..!’
আমি যে শ্রম কিনতে আসিনি, সেটা তারা কি করেই বা জানবে? নিরুপায় হয়ে আমি মোটরবাইকে স্টার্ট দেই। হাতের কব্জিতে গিয়ার বাড়াই। বাইক হাসপাতালের দিকে চলতে থাকে আর পে্ট্রোলের ধোয়ায় পিছনে পরতে থাকে এক অনিশ্চিত শ্রমের বাজার!
(সমগ্র দেশের ক্রান্তিকাল অতিক্রম করার জন্য আমাদের দেশের সরবরাহ সিস্টেম, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এবং সরবরাহকারী মাধ্যম কোনটাই সঠিকভাবে গড়ে উঠেনি এখন পর্যন্ত। কি অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য, আল্লাহ মালুম!)
(লেখকের ফেইসবুক টাইম লাইন থেকে নেওয়া)