বিশেষ প্রতিনিধি::
গণপরিবহন বন্ধের মধ্যে রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও গাজীপুর থেকে সুনামগঞ্জে আসা হ্জাার গার্মেন্ট শ্রমিকদের নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন স্থানীয় সচেতন মানুষজন। গত দুই-তিনদিনে সুনামগঞ্জের প্রতিটি উপজেলায় কয়েক হাজার গার্মেন্ট শ্রমিক প্রবেশ করেছেন। পারিবারিক সচেতনতার অভাবে ঢাকা ফেরত গার্মেন্ট শ্রমিকরা হোম কোয়ারেন্টাইন না মেনে প্রকাশ্যে চলাফেরা করায় উদ্বেগ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষ প্রশাসনিক কঠোরতায় তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টাইনে বাধ্যবাধকতার দাবি জানিয়েছেন। এদিকে উদ্বিগ্ন অবস্থায় করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে জেলার বিভিন্ন এলাকায় স্বেচ্ছায় স্থানীয় লোকজন বিভিন্ন গ্রাম লকডাউন করে বাইরের যাতায়াত সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছেন।
স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে জেলার ১১ উপজেলারই গার্মেন্টে কাজ করেন এমন শ্রমিক রয়েছেন। তবে সবচেয়ে বেশি গার্মেন্টে কাজ করেন দিরাই, শাল্লা, দোয়রাবাজার, জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর, ধর্মপাশা, সুনামগঞ্জ সদর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জের বাসিন্দারা। এছাড়াও জগন্নাথপুর, ছাতক, তাহিরপুর উপজেলায় কিছু শ্রমিক রয়েছেন। তারা গত তিন ধরে ট্রাকে করে গ্রামে এসে দলে দলে ডুকছেন। তাদের সান্নিধ্যে আসছেন পরিবারের লোকজনসহ পাড়া মহল্লার বাসিন্দারা। বুধবার ভোররাতে নরসিংদী থেকে ফেরত দোয়ারাবাজারের বখতারপুর গ্রামের এক গার্মেন্টকর্মী করোনার উপসর্গ সর্দি, কাশি, জ্বর ও শাসকষ্ট নিয়ে মারা গেছেন। দিরাই পৌর শহরেও ঢাকায় করোনা সন্দেহে মারা যাওয়া গার্মেন্ট শ্রমিকের মরদেহ নিরাপত্তাহীনভাবে এনে দাফন করা হয়েছে। এসব ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এদিকে বাইরের লোকদের প্রবেশাধিকার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার বাঘময়না ও গন্ধর্ভপুর গ্রাম দুটি স্থানীয় সচেতন মানুষজন লকডাউন করে গ্রামের প্রবেশপথ বন্ধ করে দিয়েছেন। প্রবেশপথে সামাজিক দূরত্ব মেনে পাহারা দিচ্ছেন যুবকেরা। ছাতক উপজেলার চৌকা, হলদিউড়া, হরিশচরন ও রামচন্দ্রপুর গ্রাম চারটি লকডাইন করেছেন স্থানীয়রা। শাল্লা উপজেলার রূপসা, গুঙ্গিয়ারগাঁও, ভেরাডহর গ্রামের প্রায় ১ হাজার শ্রমিক গার্মেন্টে কাজ করেন। তাদের বেশিরভাগই গ্রামে এসেছেন। এই অবস্থায় গ্রামবাসী এই গ্রামগুলো লকডাউন করে দিয়েছেন। এছাড়াও প্রশাসনিকভাবে দোয়ারাবাজার বখতারপুরে করোনা উপসর্গ নিয়ে যুবক মারা যাওয়ায় গ্রামের একটি পাড়া, বিশম্ভরপুর ও সুনামগঞ্জ সদরে দুটি গ্রাম লকডাউন করেছে প্রশাসন।
শাল্লা প্রেসক্লাবের সভাপতি পিসি দাস বলেন, সুনামগঞ্জ জেলায় সবচেয়ে হতদরিদ্র উপজেলা শাল্লা। এই উপজেলার হাজার হাজার মানুষ গার্মেন্টে কাজ করে। তারা গত তিনদিন ধরে এলাকায় আসা শুরু করেছে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন এবং ক্ষুব্দ। প্রশাসন এদেরকে বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টাইনে কঠোর হতে হবে।
দিরাই পৌর শহরের যুবক রুহুল আমিন বলেন, আমাদের উপজেলায় হাজার হাজার গার্মেন্ট কর্মী ডুকছে। করোনা সন্দেহে মৃত একজনের লাশও নিয়ে আসছেন স্বজনরা। এ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।
জগন্নাথপুর গ্রামের আব্দুস সামাদ বলেন, আমরা গ্রামবাসী পুরো গ্রাম লকডাউন করেছি। কেউ গ্রাম থেকে বের হতে পারবেনা, ডুকতেও পারবেনা জরুরি কাজ ছাড়া। গ্রামের প্রবেশপথে স্বেচ্ছায় যুবকেরা পাহারা দিচ্ছেন।
শাল্লা থানার ওসি আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমরা খবর পেয়েছি শাল্লার বিভিন্ন গ্রামেই গার্মেন্ট ফেরত লোকজন আসছেন। তাদেরকে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আমরা কাজ করছি। তাছাড়া কেউ না মানলে ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করা হবে।