হাওর ডেস্ক ::
বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস সংক্রমণরোধে আবারও সরকারি ছুটি বাড়ানো হতে পারে বলে আভাস মিলেছে। আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি বাড়তে পারে। আর সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবার অর্থাৎ ১ ও ২ মে দুদিন ছুটির পর ৩ মে সরকারি-বেসরকারি অফিস খোলার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এর আগে চতুর্থ ধাপে বাড়ানো সাধারণ ছুটি আগামী ২৫ এপ্রিল শেষ হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে। বাংলাদেশেও আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৩৮ জনে। মারা গেছেন মোট ৭৫ জন।
জন। আক্রান্ত প্রায় ২২ লাখ। এমন অবস্থায় এখনই অফিস আদালত খুলে কোনো ধরনের ঝুঁকি নেবে না সরকার। তাই পুনরায় সাধারণ ছুটি বাড়ানোর বিষয়টি সরকারের ভাবনায় আছে। দু-একদিনের মধ্যেই হয়তো প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি নিয়ে ছুটি বাড়াবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কারণ গত বৃহস্পতিবার সারাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। ফলে ছুটি বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।
কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় প্রথম দফায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি দেওয়া হয়েছিল। এর পর ছুটি বাড়িয়ে তা ১১ এপ্রিল করা হয়। এর পর আবারও তৃতীয় দফা ছুটি বাড়িয়ে করা হয় ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় চতুর্থ ধাপে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়।
নতুন করে ছুটি বাড়ানোর কোনো চিন্তা আছে কিনা-এমন প্রশ্নে জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুণ গতকাল শুক্রবার আমাদের সময়কে বলেন, পরিস্থিতি তো এখনো স্বাভাবিক হলো না। ছুটি বাড়লেও বাড়তে পারে। তবে এ মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না। এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
তবে দায়িত্বশীল অনেক কর্মকর্তাই জানিয়েছেন, ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি বাড়বে। এটা অনেকটা নিশ্চিত। পরিস্থিতি বিবেচনায় এর পরও ছুটি বাড়ানো হতে পারে। কেউ কেউ এ-ও বলছেন, দেশ স্থবির হয়ে গেছে। দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। তবু ছুটি বাড়বে। কারণ মানুষকে বাঁচানোই সরকারের প্রথম চ্যালেঞ্জ। প্রয়োজনে ঈদুল ফিতর পর্যন্ত বাড়তে পারে সাধারণ ছুটি।
করোনা ভাইরোস মোকাবিলায় মসজিদগুলোয় ওয়াক্তিয়া নামাজে পাঁচজনের বেশি মুসল্লি জামাত করতে পারছেন না। এ ছাড়া জুমার নামাজেও সর্বোচ্চ ১০ জনকে নিয়ে জামাত করার নির্দেশ দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। করোনা রোধে এবার পহেলা বৈশাখের সরকারি আয়োজনও বাতিল করা হয়েছে। দেশের কোথাও উন্মুক্ত স্থানে বৈশাখের অনুষ্ঠান হয়নি।
এর আগে ১৭ মার্চ থেকে বাংলাদেশে সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বন্ধ এখনো চলছে। এমনকি এবার ১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এইচএসসির পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এসএসসির রেজাল্টও আটকে গেছে।
গত ১০ এপ্রিল (শুক্রবার) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (বিধি-৪) কাজী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত চতুর্থ দফা ছুটি বাড়ানোর প্রজ্ঞাপনে করোনা মোকাবিলায় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে কয়েকটি নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো সারাদেশে সন্ধ্যা ৬টার পর বাইরে বের হওয়া যাবে না। বের হলেই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতাবলে দেশব্যাপী করোনা ভাইরাস মোকাবিলা এবং এর বিস্তাররোধে অধিকতর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আগামী ১৫ ও ১৬ এপ্রিল এবং ১৯ থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলো। এর সঙ্গে ১৭-১৮ এবং ২৪-২৫ এপ্রিল সাপ্তাহিক ছুটি সংযুক্ত থাকবে।
এই ছুটি সাধারণ ছুটির মতো বিবেচিত হবে না উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপনে কয়েকটি শর্ত দিয়ে সেগুলো কঠোরভাবে মেনে চলতে বলা হয়েছে।
শর্তগুলো হলো, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রশমনে জনগণকে অবশ্যই ঘরে অবস্থান করতে হবে। অতিজরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হতে অনুরোধ করা হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টার পর কেউ বাড়ির বাইরে বের হতে পারবেন না। এই নির্দেশ অমান্য করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় চলাচল কঠোরভাবে সীমিত থাকবে। আর বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মরত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করতে হবে।