স্টাফ রিপোর্টার::
দ্রুততম সময়ে সুনামগঞ্জের হাওরের বোরো ধান কাটা নিয়ে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে জরুরি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে রবিবার সন্ধ্যায় এই মতবিনিময়সভায় যে কোন মূল্যেই বনার আগে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে হাওরের ধান কেটে তোলার সিদ্ধান্ত হয়। এ লক্ষ্যে জেলার সাধারণ শ্রমিকসহ ধান কাটার শ্রমিক সংকট মোকাবেলায় স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকদের ধানকাটায় যুক্ত করার আলোচনা হয়। সভায় আনসার, গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য, ছাত্র, শিক্ষক, রাজনৈতিক দলের কর্মীসহ সবাই যাতে বিশাল পরিসরে ধানকাটায় যুক্ত হয় সে বিষয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে।
ধানকাটার বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে চলমান বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধানের দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়। ধান কাটা কার্যক্রম নিবিড়ভাবে তত্ত্বাবধানের জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মনিটরিং টিম গঠন করে জেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। সভায় উপস্থিত সকলে আগামী ০৭ (সাত) দিনের মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলায় উৎপাদিত ফসলের শতভাগ আহরণের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সিলেট বিভাগীয় কমিশনার মোঃ মশিউর রহমান এনডিসি মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সভায় সুনামগঞ্জে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ, আগাম বন্যা মোকাবেলায় করনীয় এবং হাওরে ধান কাটা বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনার মোঃ মশিউর রহমান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, প্রধান প্রকৌশলী, বাপাউবো, সিলেট মোঃ নিজামুল হক ভূইঁয়া, শ্রী নিবাস দেবনাথ, অতিরিক্ত পরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, সিলেট, পুলিশ সুপার সুনামগঞ্জ মোঃ মিজানুর রহমান বিপিএম, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ শামস উদ্দিন, উপ-পরিচালক, স্থানীয় সরকার, সুনামগঞ্জ মোহাম্মদ এমরান হোসেন, সাধারণ সম্পাদক জেলা আওয়ামীলীগ ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবীর ইমন, মেয়র সুনামগঞ্জ পৌরসভা নাদের বখত, নির্বাহী প্রকৌশলী পানি উন্নয়ন বোর্ড, সুনামগঞ্জ মোঃ সাবিবুল ইসলাম, নির্বাহী প্রকৌশলী, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, পওর-২, মোঃ শফিকুল ইসলাম, উপ-পরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, সুনামগঞ্জ জনাব মোহাম্মদ সফর উদ্দিন, নির্বাহী প্রকৌশলী, এলজিইডি, সুনামগঞ্জ জনাব মোঃ মাহবুব আলম, নির্বাহী প্রকৌশলী, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, জনাব জহিরুল ইসলাম, নির্বাহী প্রকৌশলী, গণপুর্ত বিভাগ, জনাব মোহাম্মদ আল-আমিন, নির্বাহী প্রকৌশলী, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, সুনামগঞ্জ জনাব মোঃ ইকবাল হোসেন চৌধুরী, উপ-পরিচালক, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, সুনামগঞ্জ জনাব মোঃ মোজাম্মেল হক, জনাব মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), সুনামগঞ্জ জনাব মোহাম্ম সুহেল মাহমুদ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, সুনামগঞ্জ, জনাব অখিল কুমার সাহা, জিএম, উপ-পরিচালক, সমাজসেবা অধিদপ্তর, সুনামগঞ্জ জনাব সুচিত্রা রায়, জেলার বিভিন্ন দপ্তরের দপ্তর প্রধানগণ, উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ, রাজনৈতিক/পেশাজীবি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ প্রমুখ।
সভায় জানানো হয়, আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী দুই সপ্তাহে সুনামগঞ্জে টানা বৃষ্টিপাতসহ আগাম বন্যার আশংকা রয়েছে যার ফলে । তাই সুনামগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওরাঞ্চলে উৎপাদিত ধান বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। করোনা সংক্রমণের ফলে বিশ্বে কৃষি ও অকৃষি উৎপাদনে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। হাওরাঞ্চলে উৎপাদিত ধান রক্ষা করা না গেলে ভবিষ্যতে খাদ্য সংকট দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই চলমান করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে উদ্ভূত শ্রমিক সংকটের বিষয়ে সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়। উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধান কাটা শ্রমিক পরিবহনের প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। শ্রমিকেরা যাতে ন্যায্য মজুরি পায় এবং অস্বচ্ছল শ্রমিকদের ত্রাণসামগ্রী প্রদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত যেমনঃ পরিবহন শ্রমিক, বারকি শ্রমিক, ভ্রাম্যমাণ হকার, রিক্সা ও অটো চালক সহ অন্য কর্মজীবী যারা এখন কর্মহীন রয়েছেন তাদের ধানকাটায় নিয়োজিত করার সিদ্ধান্ত হয়। সুনামগঞ্জ জেলার যেসব এলাকার ধান কাটার উপযুক্ত হয়েছে, অন্য এলাকার কম্বাইন্ড হারভেস্টর এবং রিপার মেশিন সেসব এলাকায় প্রেরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। নষ্ট ও অকার্যকর মেশিন মেরামতের জন্য এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক চালক নিয়োগের জন্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগের সিদ্ধান্ত হয়।
ধানকাটার বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে চলমান বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধানের দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়। ধান কাটা কার্যক্রম নিবিড়ভাবে তত্ত্বাবধানের জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মনিটরিং টিম গঠন করে জেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। সভায় উপস্থিত সকলে আগামী ০৭(সাত) দিনের মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলায় উৎপাদিত ফসলের শতভাগ আহরণের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।