হাওর ডেস্ক ::
প্রাদুর্ভাব শুরুর মাত্র সাড়ে তিন মাসের মধ্যে নভেল করোনা ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে প্রাণহানির সংখ্যা দুই লাখ ছুঁতে চলেছে। আক্রান্তের সংখ্যা পেরিয়ে গেছে সাড়ে ২৭ লাখ। আন্তর্জাতিক জরিপ সাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী, গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনায় মারা গেছে ১ লাখ ৯২ হাজারের বেশি মানুষ। গত কয়েক দিন ধরে এভাবে দৈনিক পাঁচ সহস্রাধিক মানুষের প্রাণ যাচ্ছে।
গত শুক্রবারও ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে মারা যায় ৬ হাজারের বেশি মানুষ। মৃত্যু ও আক্রান্তের দিক থেকে বিশ্বে আগের মতোই শীর্ষ অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের নাম। এরই মধ্যে করোনা ভাইরাসে দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। যার মধ্যে আছে ১৯৬ প্রবাসী বাংলাদেশিও। আক্রান্তের দিক থেকে এর পরে চার অবস্থানে আছে যথাক্রমে- স্পেন, ইতালি, ফ্রান্স ও জার্মানি।
এর মধ্যে স্পেনে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ১৯ হাজার ছাড়িয়েছে। বাকি দেশগুলোতেও আক্রান্তের সংখ্যা রয়েছে দেড় লাখের ওপরে। মৃতের সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের পরের চার অবস্থানে আছে- ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য। মোট ৪ হাজার ৬৮৯ জন আক্রান্ত নিয়ে এ ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশ আছে ৪৭তম অবস্থানে।
পরিস্থিতি এমন ভয়াবহ আকার ধারণের পরও করোনার প্রতিষেধক নিয়ে তেমন কোনো সুখবর মোনাতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। বিবিসি জানায়, কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার
জন্য এ মুহূর্তে বিশ্বজড়ে দেড়শর বেশি ওষুধ নিয়ে গবেষণা চলছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই হচ্ছে বর্তমানে চালু আছে এমন ওষুধ। আক্রান্ত রোগীদের ওপর এগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে কিনা সেটি দেখতে।
এরই মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ‘সলিডারিটি ট্রায়াল’ নামে একটি পরীক্ষা চালু করেছে এবং এর মাধ্যমে দেখতে চাইছে কোন ওষুধ সবচেয়ে সম্ভাবনাময়। যুক্তরাজ্য বলছেÑ তাদের ‘রিকভারি ট্রায়াল’ এই মুহূর্তে এ ধরনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। পাঁচ হাজারের বেশি রোগী এতে অংশ নিচ্ছে। তৃতীয় বড় পরীক্ষা চলছে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বেশ কিছু গবেষণাকেন্দ্রে। করোনা ভাইরাস থেকে সেরে ওঠা রোগীদের রক্ত দিয়ে নতুন আক্রান্তদের চিকিৎসা করা যায় কিনা, সেটি যাচাই করছেন এ গবেষকরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ মুহূর্তে তিনটি ভিন্ন ধারায় কোভিড-১৯ রোগের চিকিৎসার পদ্ধতি আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে। প্রথমটি হচ্ছেÑ এন্টিভাইরাল ড্রাগ। এ ধরনের ওষুধ সরাসরি করোনা ভাইরাসকে আক্রমণ করবে, যাতে মানুষের দেহের ভেতর এই ভাইরাস টিকে থাকতে না পারে। দ্বিতীয় আরেক ধরনের ওষুধ যেটি মানুষের স্বাভাবিক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে সংযত রাখতে পারে। সাধারণত কোনো ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীরা তখনই গুরুতর সংকটে পড়েন, যখন তাদের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং এর ফলে তাদের শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হয়।
করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় তৃতীয় যে বিষয়টি নিয়ে কাজ হচ্ছে, সেটি হচ্ছে অ্যান্টিবডি। শরীরে যখন কোনো রোগজীবাণুর আক্রমণ হয়, তখন স্বাভাবিক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তাকে পরাস্ত করে। এটি করতে গিয়ে দেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা এন্টিবডি তৈরি করে। এই এন্টিবডি শরীরে থেকে যায়। ফলে ভবিষ্যতে একই ধরনের ভাইরাস আমাদের শরীরে আর বাসা বাঁধার সুযোগ পায় না। করোনা ভাইরাস থেকে সেরে ওঠা মানুষের রক্ত থেকে পাওয়া এন্টিবডি নিয়ে এখন পরীক্ষা চলছে। ল্যাবরেটরিতে এন্টিবডি তৈরি করা যায় কিনা পরীক্ষা চলছে সেটি নিয়েও।