জায়েদ চৌধুরী অপু ::
আমাদের সুনামগঞ্জে অনেক অমর ব্যক্তিত্ব আছেন যারা পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার পরও আমাদের পথ দেখাচ্ছেন। যাদের জীবন ছিল সাধারণ জনগণের জন্য। সুনামগন্জ সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা এবং মহান মুক্তিযাদ্ধের সংগঠক জনাব আছদ্দর আলী চৌধুরী এডভোকেট তাদের একজন । মরহুম এডভোকেট আছদ্দর আলী চৌধুরী একজন সম্ভ্রান্ত মুসলমান পরিবারের উত্তরাধিকারী । তিনি সাধারণের মাঝে থেকে মেহনতি মানুষের কারণে হয়ে গেছেন অসাধারণ। সুনামগঞ্জের অনেক আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে আছে তাঁর নাম। শিক্ষাদীক্ষা, পেশা, রাজনীতিসহ সব জায়গায় ছিল তাঁর অসাধারণ বিচরণ। পরিচিতি ছিল একজন নির্লোভ, সৎ ও দেশপ্রেমিক নেতা হিসেবে ।
তিনি সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার ছৈলা গ্রামের ১৯২৮ সালে জন্মগ্রহন করেন। সেই গ্রামেই তাঁর হাটিহাটি পা পা করে হাঁটা , মা বাবার আদরের সন্তান হিসাবে বেঁড়ে উঠা। শিক্ষা জীবনের শুরু সুনামগঞ্জের নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারী জুবিলী স্কুলে ভর্তি হন ১৯৩৮ সালে । ১৯৪৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তিনি মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এম সি কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে থাকা অবস্তায় যখন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন শুরু হয় (১৯৪৭ )
তখন তিনি সিলেটকে পূর্ববঙ্গের সাথে সংযুক্ত রাখার আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। (রেফারেনডাম মাধ্যমে সিলেটকে পূর্ববঙ্গের সাথে সংযুক্ত রাখার আন্দোলনে) তিনি গনভোটে মুসলিমলীগের কুরাল মার্কায় পক্ষে প্রচার অভিযান অংশ গ্রহন করেন । গণভোটের রায়ে সিলেট পূর্ববঙ্গে সাথে সংযুক্ত হয়। একই বছর তিনি পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর হিসাবে সরকারি চাকুরীতে যোগদান করেন । কিন্তু পারিপার্শ্বিক অবস্থা কারণে কিছু দিনের মধ্যে চাকরি ছেড়ে দেন। ১৯৫১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আইন বিষয়ে ডিগ্রী লাভ করে সুনামগঞ্জ চলে আছেন। সুনামগঞ্জ মহকুমায় আইন ব্যবসা শুরু করেন। একইসাথে তিনি আইন ব্যবসার পাশাপাশি রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ করেন।
ভাষার প্রশ্নে তিনি ছিলেন সোচ্চার । ভাষা আন্দোলনের সুতিকাগার বলা হয় সিলেটকে । ১৯৪৭ সালের ৯ নভেম্বর কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের উদ্যোগে আয়োজিত আসরের মূল বিষয় ছিল রাষ্ট্রভাষা। সেখানে শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক মুসলিম চৌধুরী ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ পাঠ করেন। চাচা মুসলিম চৌধুরীর প্রবন্ধে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি আরও জোড়ালো ভাবে জড়িত হয়ে পড়েন ভাষা আন্দোলনে । সেই থেকে বাংলা ভাষার পক্ষে সভা -সমাবেশ এবং বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিতেন । বাংলা আর বাংলা ভাষার মায়ায় পড়ে তিনি ভাষা আন্দোলনে যোগ দেন। তিনি একজন ভাষাসৈনিক। মায়ের মুখের ভাষা যাতে অন্যে কেড়ে নিতে না পারে সেজন্য আপ্রান নড়েছেন শত্রুদের সাথে।
রাজনৈতিক জীবেনে ১৯৫৪ সালে নির্বাচন থেকে শুরু করে আইয়ুব বিরোধী সকল আন্দোলন সংগ্রামে তিনি অগ্রণী ভুমিকা পালন করেন। কোন আন্দোলনে কেউ তাকে ধমিয়ে রাখতে পারেনি। ১৯৬৪ সালে সম্মিলিত বিরোধী দলের প্রার্থী হিসাবে তিনি সুনামগঞ্জ পৌরসভার কমিশনার নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিব রহমান আমাদের স্বাধীকার আন্দোলনে, সুমহান মুক্তিযুদ্ধের বাঙ্গালীর মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলন শুরু হলে তিনি ” ছয়দফা কি এবং কেন” শিরোনামে একটি বই লিখেন। তখন থেকে একজন সফল সংগঠক হিসাবে সবার কাছে পরিচিত হয়ে উঠেন। একই সময় তিনি আওয়ামীলীগে যোগদান করেন। ১৯৬৯ সালের গণ আন্দোলন এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। স্বদেশপ্রেম এবং মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা ছিল অপরিসীম ।