আজ করোনাক্রান্ত পৃথিবী। প্রতিটি মানুষের ন্যায় শ্রমজীবি মানুষজন গৃহবন্ধী। গৃহবন্ধী হলেও তাঁদের শ্রমে বিশ্ব আজ যতোটুকু গতিশীল ততোটুকুতেই ঘরেবসেও শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে কলম কেন চলবেনা মহান মে দিবস বলতে? মে দিবসের ঊষালগ্নে সারা বিশ্বে এক গোলার্ধে ‘বসন্ত আবাহন’অন্য গোলার্ধে ‘শীতাগমন আবাহন’ হিসেবে প্রকৃতির মে দিবস পালন হলেও বর্তমানে রয়েছে রূপান্তরিত শ্রমিক-শ্রেণির আত্মদান ও বিরোচিত সংগ্রামের ইতিহাস।
আঠারো শতকের শেষ বা শ্রম আন্দোলনের প্রায় সূচনা লগ্ন থেকে পাশ্চাত্যে মে দিবসের হাওয়া লাগলেও ভারত বর্ষে লেগেছিলো উনিশ শতকে।
কিন্তু এটাও দেখা যায় শ্রম আন্দোলন বা মে দিবস পাশ্চাত্যে হয়ে থাকলেও সারা দুনিয়ার শ্রমজীবি মানুষের ঘর্মাক্তকে শ্রদ্ধা করে আমাদের পূর্ব পুরুষ সাম্যবাদ সমাজ ব্যবস্থার প্রচার করেছেন পাঁচশত বছর পূর্বে।
কারন পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ হউক আর দক্ষিন গোলার্ধ হউক এমনকি পাশ্চাত্য হউক আর বাংলায় হউক সারা দুনিয়ায় শ্রমজীবি মানুষের রক্ত ও ঘামের গন্ধ এক ও অভিন্ন। তাই হেমাঙ্গ বিশ্বাস সারা দুনিয়ার ঘর্মাক্ত মানুষের গন্ধ বুঝেই উত্তর-পূর্ব গোলার্ধের বাংলা থেকেই সুর তুলেছিলেন-
“নাম তার ছিল জন হেনরি
ছিল যেন জীবন্ত ইঞ্জিন
হাতুড়ির তালে তালে গান গেয়ে শিল্পী
খুশি মনে কাজ করে রাত-দিন
হো হো হো হো খুশি মনে কাজ করে রাত-দিন”।
আবার তাঁরই আরেক উত্তরসূরি কমরেড শ্রীকান্ত দাশ তাঁর হাওয়র অঞ্চলের মানুষের ঘামের গন্ধ বুঝে সুর তুলেছিলেন-
আউল্লা জাউল্লা বর্শিবাউরা উইচ্ বাউরা আর কুইচ্ বাউরা ;
দিনে আইন্যা দিনে খাউরা,আয়রে সবে আয়রে ছুটে ভাইরে,
এলড়াই বাঁচার লড়াই, দেরীর সময় নাইরে।
মহালদারদের সাথে মোদের বাইধাছে লড়াই রে ;
জিতলেই বাঁচব বাঁচার মতো,নইলে উপায় নাই রে ।।
যখন কাম থাকেনা বাইষ্যামাসে,হাওরে মাছধরে কোনমতে;
কাটাই জীবন,না-খাইয়া আর আধ-খাইয়া-
তাও তাদের সয়নারে ভাই,বাইধাছে তাই ন্যায়ের লড়াই।
না খাইয়া প্রায় মইরাই আছি,মরনের ভয় নাইরে।।
( রাগ – দূর্গা )
বেশী দিন আগের কথা নয়। মাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয় চুকিয়ে মাধ্যমিকে পা রেখেছি। সেই শ্রমজীবি ঘরের বাল্যবন্ধুদের নিয়ে নদীর তীর ঘেষা করচগাছে আংঢাং খেলায় ব্যস্ততা দেখেছি। সেই দিনটা মিষ্টি বাতাস মিশ্রিত বেশ গরম ছিল। ক্ষিপ্র দুপুরে এক পসলা বৃষ্টি শেষে মাঠ ফাটা রৌদ্র ছিল। নদীতে জোয়ারের জন্য পানি পরিপূর্ন ছিল। প্রতিদিনের ন্যায় ছুঁই ছুঁই করে সামান্য সামান্য পানি বাড়তে দেখা যাচ্ছিল। ফলে গ্রামের কিষান কিষানীর ছেলেপুলে গুলো আচ্ছা আনন্দ নিয়ে বাড়ন্ত পানিতে চিকরা-বাইম(ছোট বাইম মাছের বাচ্চা)গুতুম,রানী,বাইল্লাকরা(ফেরার লাটি),ছাইবলা,বেতগুইঙ্গা সহ বিভিন্ন রং-বেরংগের(প্রজাতির) মাছ মারতো। নদীতে স্নান(গোসল)করার নির্দিষ্ট জায়গা বা গাঙ্গের ঘাট থেকে কিয়দংশ দূরে বড় বড় নৌকা নিয়ে দেশের দক্ষিনাঞ্চল থেকে ধান কাটতে আসা শ্রমজীবি মানুষজন নদীর ভাসমান নৌকাতেই থাকতো। সন্ধ্যায় নদী পাড়ে তাঁদের নিজ নিজ অঞ্চলের সুরে তালে অপরূপ ভঙ্গিমায় লাউ(একতারা)ডগ্গী(ডফ্গী)বাঁশি দিয়েই সুরের মুর্ছনা তুলতো। প্রেম বিরহ সহ প্রতিদিনের কর্মক্ষান্ত দেহে ঘর্ম গন্ধে নিহিত গণমানুষের গান গাইতে শুনা যেতো। মনেহয় ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খানও শুনলে তাঁর সানাই ফেলে ওদের সুরের মুর্ছনায় নিমগ্ন হতো। আধুনিক বিজ্ঞানের ইঞ্জিন চালিত নৌকার ফলে তাঁদের অনেক শ্রম ও সময়ের লাঘব হলেও এক সময়ে নৌকার দু’কিনারায় ছইয়ার(ছাউনী) উপড় থেকে লম্বা লম্বা ২০টা,৩০টা দাঁড় টেনে পদ্মার ঐপাড়ের আরো বহুদূর দুরান্ত থেকে আসতে হতো। ধান কাটা শেষে রাতের গানের আড্ডায় কিংবা ঘরে চা খেতে আসলে বাবার সাথে কমরেড রতন সেন,অচিন্ত্য বিশ্বাসদের নিয়ে দু-চার কথাও শুনা যেতো।
তখন সময় বৈশাখ মাস। সাধারন হিসাব মতে ১৪ই এপ্রিল ১লা বৈশাখ হলে বৈশাখের মাঝামাঝি হয় ১লা মে। যদিও বাংলা ক্যালেন্ডারের হিসাব অনুযায়ী এক-দুদিনের হেরফের হয়ে থাকে। এই ১লা মে হলো আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস বা মে দিবস। আমেরিকা কানাডায় ঠিক একই দিনে এই দিনটিকে পালন না করলেও তবে বিশ্বের ৮০টি দেশে পালন করা হয়ে থাকে। আমেরিকায় বসন্তকালের আগমন দিবস হিসেবে মে মাসের ১তারিখ ‘মে ডে’ পালন করা হয়ে থাকে। আমেরিকা ও কানাডায় সেখানকার কেন্দ্রীয় শ্রমিক ইউনিয়ন এবং আমেরিকান লেবার ফেডারেশন (নাইট অব লেবার) এই দিনটি পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে।
তাঁদের হে মার্কেটে(১৮৮৬,৪মে)ন্যায্য দাবী ও কর্মঘন্টার জন্য যে শ্রমিক হত্যা ঘটেছিল তার জন্য তৎকালীন ডেমোক্রেট দলের ২২তম প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড সরকার মনে করেছিলেন,১মে তারিখে আয়োজন করা যেকোনো অনুষ্ঠান বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। সে জন্য ১৮৮৭ সালে তিনি নাইট অব লেবার–সমর্থিত শ্রম দিবস পালনে উৎসাহিত করেন।
ভারত বর্ষে ১৯২৩ সালে মাদ্রাজ(বর্তমান চেন্নাই)শহরের মেরিনা বিচে সর্বপ্রথম মে দিবস পালিত হয়। কমিউনিস্ট নেতা সিঙ্গাভের্ল্য চেটিয়া মেয়ের লাল শাড়ির অংশ কেটে মে দিবসের লাল পতাকা হিসাবে উত্তোলন করা হয়। তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার প্রাণকেন্দ্র কলকাতায় ১৯২৭ সালে প্রথম মে দিবস পালন করা হয়। ১৯৩৮ সালে দেশ বিভাগের পূর্বে নারায়ণগঞ্জে মে দিবস পালিত হয়। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে মে দিবস পালিত হয়। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু ১লা মে’কে মহান মে দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেন এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে সরকারী ছুটির দিন ঘোষণা করেন। ১৯৭২ সালের মহান মে দিবস উপলক্ষে তৎকালীন সরকার প্রধান বঙ্গবন্ধু জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন এবং মহান মে দিবসকে জাতীয় দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তবে এটাও সত্য শ্রমজীবি মেহনতী খেটে খাওয়া মানুষজনের কথা বিভিন্ন দল বিভিন্ন গোষ্ঠী বলে থাকলেও শ্রেণিহীন সমাজের কথা যেমন বামপন্থীরা বলেন আবার দেখা যায় আজ থেকে পাঁচশ বছর আগে শ্রীচৈতন্য ধর্মীয় ভাব আন্দোলনের মাধ্যমেও সাম্যবাদ সমাজ ব্যবস্থা প্রচার করেন।
শাল্লায় মে দিবস প্রথম পালন করে ১৯৯৩/৯৪ সালে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্টী শাল্লা শাখা। নির্দিষ্ট দিনের বেশ কতোদিন আগেই বাড়ীতে চলছিল ঊদীচীর গানের রিহার্সেল। সিলেট থেকে আসছিলেন গণসংগীত শিল্পী ভবতোষ চৌধুরী। বৈশাখ মাস ঘরে গরমের উপদ্রপ যথেষ্ট বেশী। ভবতোষ চৌধুরী বাড়িতে প্রবেশ করে গায়ের কাপড় পরিবর্তন করে এক কাপ লাল চা হাতে নিতে না নিতেই বাবার ধবধবে সাদা লুঙ্গি পড়ে বসেন গানের রিহার্সেলে। পালাক্রমে বাজালেন একজন তবলা আরেকজন হারমোনিয়াম। বিশেষ করে কবি দিলওয়ারের গণসংগীত যেমন-“মা আমার গলা ধরে বলেছে ।। হয়নি শেষ তোর যুদ্ধ হয়নি রে সব প্রাণ শুদ্ধ”। নরেন বিশ্বাসের “লাল সালাম লাল সালাম রক্তেধূয়া মে তোমায় সালাম”যা এখনও মনে পড়ে। মে অনুষ্ঠানের মঞ্চ হয়েছিলো শাহীদ আলী স্কুলের ভিতরের মাঠে। চারিদিকে ঘাম ঝড়া মেহনতী শ্রমজীবি মানুষের সমাগম। বিশেষ করে ধান কাটতে আসা দক্ষিনাঞ্চলের মানুষজন। সংগে কমরেড শ্রীকান্ত থাকলেও গণসংগীত শিল্পী ভবতোষ চৌধুরী তাঁর গানের দর্জাল আওয়াজে ভেসে আসছিল নীপিড়ীত শোষিত বঞ্চিত মানুষের স্বপ্ন। গানে মাঠ জুড়ে বিস্তৃত হয়েছিল ঘর্মাক্ত মানুষের দাবী। সুরের কন্ঠে আওয়াজ উঠেছিল এ লড়াই বাঁচার লড়াই এ লড়াই জিততে হবে। বুঝা যাচ্ছিল এ-যেনো হে মার্কেটকে উপচিয়ে,শাহীদ আলীর মাঠে,ভব চৌধুরীর কন্ঠ,ঢেউ তুলেছিলো শ্রমজীবি মানুষের আন্দোলন। শ্রমজীবি মানুষের গানের মাঝে মাঝে স্পিকার হাতে তাঁদের মতো করে বুঝিয়ে দিতেন তৎকালীন কমরেডের সারথী বর্তমান ঊদীচী সভাপতি প্রফেসর তরুন কান্তি দাশ।
আজ দেশের বাহিরে,যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরে। এখানেও প্রতি বছরের ন্যায় শ্রমজীবি মানুষ মে দিবস পালন করে থাকে। ১৮৯০ সালে গ্রেট ব্রিটেনে ১মে’র পরিবর্তে ৪মে হাইড পার্কে লক্ষ লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে প্রথম আন্তর্জাতিক মে-দিবস উদযাপিত হয়। বর্তমানে দেখলাম লন্ডনের ফাররিংডনে মার্ক্স মেমোরিয়াল লাইব্রেরিতে মে-দিবসে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটে। সারা দিন ব্যাপী আলোচনা হয় ঘন্টার পর ঘন্টা। বিভিন্ন মতাঐক্যের মতবেদ থাকলেও আলোচনা হয়ে থাকে শ্রমজীবি মানুষকে নিয়ে সাম্য নিয়ে। সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসীরা বিভিন্ন দলে বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হলেও একই আদর্শে ব্যস্ত থাকে সারা দিনের আলোচনায়। দিনটিতে সারা পৃথিবীর শ্রমজীবি মানুষদের সম্মানে সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবি আদর্শের মানুষ ফাররিংডনে মার্ক্স মেমোরিয়াল লাইব্রেরি হতে ট্রাফালগার স্কয়ারে সংহতি প্রকাশ করে থাকে। ২০১৮ সালের এই আন্তর্জাতিক সংহতিতে “বাংলাদেশ ওয়াকার্স কাউন্সিল,যুক্তরাজ্য”এর সৌজন্যে আমার উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ইউকের কেন্দ্রীয় রাজনীতিক দলের সাথে সংহতিতে ছিলেন “বাংলাদেশ ওয়াকার্স কাউন্সিল,যুক্তরাজ্য”র আহ্বায়ক কমরেড অ্যাড: আবেদ আলী,যুক্তরাজ্য সিপিবি’র সাধারন সম্পাদক নেছার আহমদ,কমরেড ডা: রফিকুল হাসান জিন্না,কমরেড শাহরিয়ার বিন আলী,কমরেড সাইফুল ইসলাম প্রমুখ। এদেশের বাম মূল রাজনীতিক দলকে সংগে করে সিপিবি,যুব ইউনিয়ন,ঊদীচী,সত্যেনসেন স্কুল অব পারফর্মেন্স ইংরেজী-বাংলায় আলোচনাসহ গণসংগীত পরিবেশন করে থাকে। সত্যি অর্থে এই দিনটি শ্রমিক শ্রেণীর আন্তর্জাতিক সংহতির দিন। কার্ল মার্কস বিশ্বের এই নিপীড়িত শ্রমিকদের আত্মিক বন্ধনকে দৃঢ় করতে লিখেছেন ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’(Workers of all land unite)।এই স্লোগান সারা বিশ্বের শ্রমিকদের সংগ্রামের মূল মন্ত্র।
মার্ক্সের কন্যা এলনর মার্ক্স,জর্জ বার্নাড শ ১৮৮৬ সালের ৪মে প্রতিবাদ জানালেন হে মার্কেট স্কোয়ারের সুবিশাল প্রতিবাদ সভাতে। পুলিশ গুলি চালালো। শহীদের রক্তে রঞ্জিত হলো হাতের নিশান। গ্রেপ্তার করা হল চারজন শ্রমিক নেতাকে। বিচারের নামে হল বিচারের প্রহসন। জারি হলো ফাঁসির আদেশ। এঁরা হলেন আগস্ট স্পাইজ, পার্সনস, ফিসার ও এঞ্চেল। প্রতিবাদের ঝড় উঠলো। সভা শোভাযাত্রায় ধিক্কার বাণী উচ্চারিত হলো। ধ্বনিত হলো শ্রমিকশ্রেণীর সংগ্রামের কণ্ঠ।
এভাবে ১৮০৬ সাল হতে কারখানায় কুড়ি ঘণ্টা পর্যন্ত বাধ্যতামূলক কর্মপ্রহর থেকে ১৮২০-১৮৪০ দশ ঘন্টা কাজের আন্দোলন ধর্মঘট, ১৮৬২-১৮৬৩সালে রাজনীতিতে ট্রেড ইউনিয়নের ভিত্তিতে দাস প্রথার উচ্ছেদ,১৮৮১ সালের নভেম্বরে প্রতিষ্ঠিত হয়
‘আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার’। ১৮৮৪ সালে ৭ অক্টো: গৃহীত হয়ে ১৮৮৬ সালের ১লা মে থেকে দৈনিক আট ঘন্টাকে আইনগত গণ্য করতে হবে। কিন্তু ১৮৮৬ সালে যদিও ৩মে ম্যাককর্মিক হার্ভেস্টার কারখানায় নির্মম পুলিশী আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছিলো ছ’জন নিরস্ত্র শ্রমিক। পরের দিন ৪মে হে মার্কেট স্কোয়ারে সুবিশাল প্রতিবাদ সভায় পুলিশ গুলি চালালে শহীদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিলো হাতের নিশান। প্রতিবাদের ঝড় দেশকালের গণ্ডি পেরিয়ে এই নৃশংস বর্বরতার খবর পৌঁছালো দুনিয়ার মেহনতী শ্রমজীবীর কানে। ১৮৮৯ সালে ১৪ জুলাই। ফরাসী বিপ্লবের কেন্দ্রস্থল প্যারিস। বাস্তিল পতনের শতবার্ষিকী। এই দিনেই প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের সম্মেলন। প্রথম দিনের অধিবেশনেই সর্বসম্মত প্রস্তাব ১৮৯০ সাল থেকে ১মে প্রতিবছর শ্রমিকশ্রেণীর আন্তর্জাতিক সংহতি, সৌভ্রাত্র ও সংগ্রামের দিন বলে ঘোষিত হল। এভাবেই ১৮৮৬ সালের ঐতিহাসিক মে দিবস রূপান্তরিত হয় ১৮৯০ সালের আন্তর্জাতিক মে দিবসে।
আজ করোনা আক্রান্ত পৃথিবী। চারিদিকে মৃত্যুর ভয়ংকর চিৎকার। বিশ্বের সর্বত্র করোনাক্রান্ত কালো অমবশ্যার থাবা। সবাই অন্যায় ঝুলুমের কথা মাথা থেকে সরিয়ে শুধু অন্যায় নয় এমনকি প্রতিযোগিতায়ও না নেমে আতংকিত হৃদয়ে ঘর মূখী। করোনার বিভিষিকায় বিশ্ব আচ্ছন্ন,মানতে হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব,সম্মিলিত সুরে মিলিতভাবে কন্ঠে তোলা যাবেনা “দুনিয়ার মজদুর,এক হও লড়াই করো” কিংবা”Down Down Capitalism, Up Up Socialism”
তবুও আশা রাখবো করোনা অমবশ্যার অন্ধকার দূরীভূত হবে রবির আলোয় আলোকিত হবে। মেহনতী মানুষের কন্ঠ উঠবে, জাগরণের গান গাইবে,সৌভ্রাতৃত্বেরবন্ধনে কাঁধে কাঁধ মিলাবে। উবরে দিবে ধনকুবের ত্রাস সৃজন করবে সাম্যের সমাজ।