বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের নিঃস্ব মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীর এপ্রিল মাসের সমুদয় ভাতা প্রধানমন্ত্রীর করোনা সহায়তা তহবিলে দান করেছেন। রবিবার সকালে তিনি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদের বাংলোয় গিয়ে তার হাতে ১০ হাজার টাকার চেক তুলে দেন। এসময় তিনি দেশের ভাতাপ্রাপ্ত সচ্চল মুক্তিযোদ্ধাদেরও অসহায় মানুষের পাশে দাড়ানোর আহ্বান জানান। এ ঘটনায় মালেক পীরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ। সমাজের স্বচ্ছল মানুষদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে।
মালেক হোসেন পীর সুনামগঞ্জ পৌর শহরের তেঘরিয়া পীরবাড়ি এলাকার বাসিন্দা। বালাট সাব সেক্টরের প্রথম ব্যাচের দুঃসাহসিক মুক্তিযোদ্ধা তিনি। অসহায় এই মুক্তিযোদ্ধার ভিটে ছাড়া আর কোন সম্পদ নেই। বর্তমানে ভাঙ্গা ঘরে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে বসবাস করেন। একমাত্র আয় মুক্তিযোদ্ধা ভাতায়ই চলে তার সংসার। সুনামগঞ্জ জেলায় অন্যায়ের প্রতিবাদী ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি কিংবদন্তীতে রূপ নিয়েছেন। জেলায় অন্যায়, অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি আপসহীন কণ্ঠ। প্রভাবশালীদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নিয়মিত প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন। পকেটের টাকা খরচ করে প্রতিকারের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন নিবেদন করেন নিয়মিত। তার দায়েরকৃত মামলায় বিভিন্ন সময়ে সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন, স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক, ডিসি, এডিসিসহ প্রশাসনের অভিযুক্ত শীর্ষ কর্মকর্তারা জেল খেটেছেন। এখনো তিনি জেলায় অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার রয়েছেন। ২০১৮ সালে জেলা প্রশাসকের দরোজায় কোচিং বাণিজ্যের বিরুদ্ধে অবস্থান ধর্মঘট পালন করে দেশব্যাপী আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন। ওই সময় দুর্নীতিদমন কমিশনের চেয়ারম্যান মালেক হুসেন পীরের কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানিয়ে সারাদেশে কোচিং বাণিজ্যের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করিয়েছিলেন। শিক্ষামন্ত্রণালয় তার এই কর্মসূচির পর সারাদেশে কোচিংবাণিজ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছিল এবং এ নিয়ে মন্ত্রীপরিষদের বৈঠকেও আলোচনা হয়েছিল।
জানা গেছে মালেক হুসেন পীর এখন শুধু মুক্তিযোদ্ধা ভাতার আয়েই সংসার চালান। তার বিকল্প কিছু না থাকায় কষ্টে দিনযাপন করেন। এর মধ্যে এপ্রিল মাসের পুরো ভাতার ১০ হাজার টাকাই প্রধানমন্ত্রীর কর্যাণ তহবিলে করোনা সহায়তায় দান করে দিয়েছেন।
জানা গেছে, তিনি লিভারসহ নানা জটিল রোগে ভোগছেন। ভারতে চিকিৎসার জন্য যাবার চেষ্টা করছেন। সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ভারত সরকারের সহায়তায় চিকিৎসার জন্য ভারত যেতে সুনামগঞ্জ থেকে তিনি মনোনীয় হয়েছেন। কিন্তু হঠাৎ করোনার হানার কারণে তার চিকিৎসা কার্যক্রম থমকে আছে।
মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীর বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম। দীর্ঘদিন উপেক্ষিত ছিলাম। তার কন্যা এসে আমাদের মূল্যায়ণ ও সম্মান দিয়েছেন। এখন তিনি দেশের অসহায় মানুষকে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন। আমাদের সবার উচিত তাকে সাহস, সমর্থন ও সহযোগিতা করা। তিনি বলেন, আমার কোন আয় নেই। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা দিয়েই ভাঙ্গা ঘরে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করছি। আমি চাই আমার অন্যান্য সচ্ছল সহযোদ্ধারাও এই দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাড়াবেন। অন্তত তারা সবাই একমাসের ভাতা দিয়ে দেখিয়ে দিন।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, মালেক হুসেন পীর একজন সাহসী আজীবনের মুক্তিযোদ্ধা। তিনি এখনো অন্যায় অনিয়ম দেখলেই প্রতিবাদ করেন। নিঃস্ব অবস্থায় থেকেও তিনি এই দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাড়ানোর সাহস দেখিয়েছেন। তাকে স্যালুট জানাই জানাই।