হাওর ডেস্ক ::
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক ঘোষণায় আগামী রবিবার থেকে শর্ত সাপেক্ষে দোকানপাট ও শপিং মল বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়। সরকারের এ সিদ্ধান্তে বিপর্যয় আরো বাড়বে বলে ভাবা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও শপিং মল খোলার বিরোধিতা করে নানা যুক্তি তুলে ধরতে দেখা গেছে।
শপিংমল খুলে গেলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় করোনাভাইরাসসংক্রান্ত টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেছেন, দোকানপাট ও মার্কেট খুললে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়বে।
সরকারের এ সিদ্ধান্তের পর স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অনেকেই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। কারণ বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের কাছাকাছি সময়ে যেসব দেশে সংক্রমণ ঘটেছে সেসব দেশে এখনো মার্কেট, শপিং মল ঢালাওভাবে খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি। বাংলাদেশের শপিং মল, মার্কেট খোলার সিদ্ধান্ত কতটা যৌক্তিক ও বিজ্ঞানসম্মত তা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, যেখানে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে, সেখানে কোন যুক্তিতে শপিং মলগুলো খুলে দেওয়া হচ্ছে? গণপরিবহন যদি বন্ধ থাকে তাহলে দোকানি, দোকানের কর্মী বা ক্রেতারাই বাজারে বা শপিং মলে যাবে কিভাবে? শপিং মল খোলার মধ্য দিয়ে লোকজনকে কার্যত ঘর থেকে বেরিয়ে কেনাকাটা করতে উৎসাহিত করা হবে। আর এতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি আরো বাড়বে।
ফেসবুকে বেশ কজন লিখেছেন, মার্কেট, শপিং মল খুললেই কি ক্রেতারা যাবে? এত দিন ঘরে অবস্থান করে সচেতনতা অবলম্বনের পর হঠাৎ ক্রেতারা কেন নিজেদের ঝুঁকিতে ফেলবে?
মার্কেট, শপিং মলের কেউ করোনা সংক্রমিত হলে কী হবে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেহেতু এখনো প্রত্যাশিত সংখ্যায় করোনা পরীক্ষা শুরু হয়নি এবং উপসর্গ ছাড়াই অনেকের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ছে, সে ক্ষেত্রে ক্রেতারাও করোনাভাইরাস বহন করছে না তা নিশ্চিত করা কঠিন হবে। এ ক্ষেত্রে সত্যিই কেউ করোনা সংক্রমিত থাকলে এবং তা ধরা পড়লে পুরো মার্কেট-শপিং মল ‘লকডাউন’সহ ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন করতে হতে পারে। তবে মার্কেট, শপিং মলগুলোতে যেহেতু কারা আসছে তা লিপিবদ্ধ থাকে না ফলে কারা করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছিল তা শনাক্ত করাও দুঃসাধ্য হতে পারে। এর ফলে সংক্রমণ বিস্তারের ঝুঁকি আরো বাড়বে।
মার্কেট, শপিং মলে কেনাকাটার যে প্রক্রিয়া তাতেও করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে। কারণ কাপড়, কসমেটিকস, জুতা এগুলো ক্রেতারা অনেকে স্পর্শ করবে এবং সেগুলো প্রতিনিয়ত জীবণুমক্ত করা সম্ভব নয়।
ঈদের আগে মার্কেট, শপিং মলগুলোতে যে ভিড় হয় তাকেই করোনা সংক্রমণের উপযুক্ত স্থান বলে মনে করছেন অনেকে। এ ছাড়া মার্কেট, শপিং মলগুলোতে হাঁটার জায়গা পর্যন্ত থাকে না। এসব কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা এ সময়ে মার্কেট, শপিং মলগুলো খোলার তীব্র বিরোধিতা করেছেন।
অনেকে প্রশ্ন করেছেন, সন্তানের জন্য ঈদের খুশিতে জামাকাপড় কিনতে যাবেন নাকি করোনাভাইরাস ও মৃত্যু আনতে যাবেন? এ ছাড়া গত এক মাসের বেশি সময় ধরে দেশে অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। অনেকের জীবিকাও হুমকিতে পড়েছে। সঞ্চিত অর্থ খরচ করে অনেকে জীবনযাপন করছেন। এমন পরিস্থিতিতে মার্কেট, শপিং মলে ঈদের কেনাকাটায় গরিব ও মধ্যবিত্তের কষ্ট আরো বাড়াবে এবং উচ্চবিত্তের সঙ্গে তাদের পার্থক্য আরো দৃশ্যমান করবে।